Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

বইমেলা উদ্বোধন ১ ফেব্রুয়ারি

অপেক্ষায় পাঠক ও দর্শনার্থী

মো. নাঈমুল হক

জানুয়ারি ২৬, ২০২৪, ১১:২৭ পিএম


অপেক্ষায় পাঠক ও দর্শনার্থী
  • নতুন করে অনুমোদন পেয়েছে ২৩ প্রকাশনী 
  • শিক্ষার্থী কার্ডে মিলবে ৫ শতাংশের বেশি ছাড় 
  • মেট্রোরেলের কারণে বাড়বে দর্শনার্থী ও পাঠক
  • মেলার পূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে বাংলা একাডেমি
  • লিপইয়ারের কারণে এবার মেলা ২৯ দিনের

মেলা প্রস্তুতি প্রায় শেষদিকে  
—ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব, বইমেলা পরিচালনা কমিটি

আর মাত্র চারদিন পরই শুরু হচ্ছে একুশে বইমেলা ২০২৪। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এ মেলাকে নিয়ে বাংলার পাঠকসমাজের উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। মেলা উপলক্ষে প্রতিটি প্রকাশনী নতুন নতুন চমক রাখার চেষ্টা করে। লিপইয়ারের কারণে এবারের মেলা হবে ২৯ দিনের। মেলার পূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে বাংলা একাডেমি। কোনো ধরনের থার্ড পার্টি না থাকায় মেলার আয়োজন নিয়ে বেশ আশাবাদী প্রকাশক ও পাঠকরা। এবার মেলায় থাকছে নতুন ২৩টি প্রকাশনী। প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কার্ড দেখাতে পারলেই মিলবে এ সুযোগ। আয়োজক ও প্রকাশকরা মনে করছেন, মেট্রোরেলের কারণে এবার মেলায় দর্শনার্থী ও পাঠকের উপস্থিতি বাড়বে। 

জানা যায়, বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবার সেরা লেখকদের বই প্রকাশে আগ্রহ থাকে প্রকাশনী মালিকদের। নব্বইয়ের দশকের হুমায়ূন আহমেদসহ বর্তমানের সাব্বির জাদিদ ও আরিফ আজাদ একালের পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় লেখক। কারো কাছে সাদাত হোসাইন ও নাজিম উদ্দিনের রহস্যাবৃত উপন্যাস পছন্দ। পছন্দের লেখকদের বই দেখা ও তাদের সঙ্গে দেখা পাওয়া অন্যরকম আমেজ থাকে পাঠকদের। মেলাকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। আড্ডা, গল্প ও গানে মেতে থাকেন কেউ কেউ। 

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন শেষে মেলার দ্বার উন্মুক্ত হবে সবার জন্য। জানা গেছে, বইমেলার বিন্যাসে এবার কোনো পরিবর্তন নেই। গতবারের মতোই থাকছে। প্যাভিলিয়নের ও স্টলের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা সারি। তবে এবার মেলার আয়োজনে থাকছে না স্পন্সর কিংবা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান। ২০০৬ সালের আগে একাডেমির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মেলার আয়োজন হচ্ছে। এবারের মেলায় প্রবেশদ্বার থাকবে চারটি। এগুলো হলো— টিএসসির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার, বাংলা একাডেমির উল্টোদিক ও রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী প্রবেশপথ। গত বছরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের (আইইবি) দিকের প্রবেশপথটি সপ্তাহে পাঁচ দিন বন্ধ থাকত। এবার তা পূর্ণ সময় খোলা থাকবে।

টিএসসির প্রবেশদ্বার থেকেই শুরু হবে মেলা। এই অংশের ডানদিকের অংশজুড়ে থাকবে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্যাভিলিয়ন ও স্টল। উদ্যানের বামদিকের অংশে ফায়ার সার্ভিসসহ সেবামূলক ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ থাকবে। এ অংশেই থাকবে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ। লিটল ম্যাগ চতুর জায়গা বদলে মুক্তমঞ্চের পাশে গতবার ফায়ার সার্ভিসের জন্য বরাদ্দ জায়গায় আসবে। রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী মেলার অংশটুকু হবে শিশুচত্বর। প্রতিবারের মতো এ বছরও বইমেলায় খাবারের দোকান থাকছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি ডিজিটালাইজড লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে পুরোনো এবং নতুন তালিকাভুক্ত প্রকাশনার জন্য স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত ৬২৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবার যুক্ত হচ্ছে আরও ২৩ প্রতিষ্ঠান। এবার মেলার কোন কোন বই থাকবে আর কোনগুলো থাকবে না এগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ট্রাস্ক ফোর্স। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুস্তক প্রকাশক মালিক সমিতি নিয়ে গঠিত হবে। মেলায় খাবারের দোকান থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শেষ প্রান্তে। চুলা বন্ধ রাখা সাপেক্ষে তাদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

মেট্রোরেল চালু হওয়ায় এবার মেলা নিয়ে আশাবাদী প্রকাশকরা। গতবার বিতর্কিত বই থাকায় বইমেলায় অনুমোদন না পাওয়া আদর্শ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী মাহবুব রহমান আমার সংবাদকে বলেন, এবার আদর্শ প্রকাশনী ১৩৫-১৩৮ নম্বর স্টলে থাকবে। গত বছর আদর্শের স্টল না থাকায় অনেক পাঠক আদর্শ স্টলকে পায়নি। তারা আদর্শের পাশে ছিল। অনলাইনে সমর্থন দিয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা মেলা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এবার টিএসসি ও সোহারাওয়ার্দীর পাশে মেট্টোরেল থাকায় মেলায় উপস্থিতি বাড়বে। আয়োজনের পুরো দায়িত্ব বাংলা একাডেমির কাছে থাকায় আশা করি মেলা ভালো হবে। 

সরেজমিন দেখা যায়, বইমেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্টল তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। কোনো প্রকাশনীর প্রাথমিক অবকাঠামো দাঁড় করার কাজ চলছে। বাঁশ, দড়ি, কাঠ ও টিনের সমন্বয়ে অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে অবকাঠামোর ওপর অংশে টিন লাগিয়েছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। 

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘মেলা প্রস্তুতির কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন স্টল ভাগ করে দিয়েছি। গতবারের মতো এবারও মেলার বিন্যাস একই থাকবে। গতবারেরটা অনেকে প্রশংসা করেছেন। তাই এবার বিন্যাসে খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি। বৃষ্টির বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। এর আলোকে প্রস্তুতি নিয়েছি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত  করা হয়নি। তাদের দায়িত্ব দিলে সব তথ্য পাওয়া যেত না। পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে এ বছর কথা বলার পর তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাই আমরা এককভাবেই কাজ করছি।’
 

Link copied!