জানুয়ারি ২৯, ২০২৪, ১১:৫৩ পিএম
২০১৭ সাল- ৬০ টাকা
২০২২ সাল- ১০০ টাকা
২০২৪ সাল- ২০০ টাকা
- দাম বৃদ্ধির ঘোষণা ২৯ জানুয়ারি, কার্যকর আগে থেকেই
- বিইআরসিকে তোয়াক্কা না করেই চার্জ বৃদ্ধি
বিইআরসিকে বাদ দিয়ে নতুন চার্জ কার্যকর করা তিতাসের এখতিয়ারে নেই
—এম শামসুল আলম, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, ক্যাব
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মিটারের নতুন
চার্জ ধরা হয়েছে
—প্রকৌশলী মোবারক হোসেন, প্রকল্প ব্যবস্থাপক
গ্যাস নেই। জ্বলে না চুলা। তবুও প্রতিমাসে গুনতে হচ্ছে বিল। এরই মধ্যে প্রিপেইড মিটারে ভাড়া দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এতে গ্রাহকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিতাসের গ্রাহকরা গত মাসেও মিটার চার্জ ১০০ টাকা দিয়ে আসছিল। হঠাৎ করে চলতি মাসে দ্বিগুণ মিটার ভাড়া নির্ধারণ করেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। বিইআরসিকে তোয়াক্কা না করে, কোনো ধরনের গণশুনানি না করেই মন্ত্রণালয়ের নোটিসে এভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করায় উষ্মা প্রকাশ করেছে খাত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। ফলে এক মাসে চার কোটি ২০ লাখ টাকা এবং বছরে তিতাসের গ্রাহকদের ৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে।
তিতাস সূত্রে জানা যায়, চার লাখ ২০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারে সংযুক্ত করেছে কোম্পানিটি। তারা জানায়, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এমন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এদিকে বিইআরসিকে উপেক্ষা করে তিতাসের দাম বৃদ্ধি করার ইখতিয়ার নেই বলে জানান বিইআরসির চেয়ারম্যান নূরুল আমিন। তিতাস আমাদের এখনও কিছু জানায়নি। এদিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ার পরও নানা অজুহাতে গ্রাহকের কাঁধে চাপাচ্ছে অতিরিক্ত চাপ। এতে গ্রাহকদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
তিতুমীর নামে এক গ্রাহক বলেন, বাসায় গ্যাস থাকে না বললেই চলে। এর মধ্যে কার্ড রিচার্জ করতে গিয়ে দেখি টাকা অনুযায়ী ইউনিট কম এসেছে। পরে খেয়াল করে দেখি জানুয়ারি মাসে ২০০ টাকা মিটার চার্জ কাটা হয়েছে। কদিন আগে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করা হয়েছিল। এখন ১০০ থেকে একেবারে ২০০ টাকা কীভাবে হয়। তথ্য মতে, ২০১৭ সালে মিটার ভাড়া নেয়া হতো ৬০ টাকা করে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে তা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়। এবার নতুন বছরের শুরুতে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা হয়।
গ্রাহকদের মধ্যে একজন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমি যখন মিটার নিলাম তখন আমি ৬০ টাকা ভাড়া জেনেই নিলাম। পরে সেটা ১০০ টাকা করা, আবার কোনো আলোচনা ছাড়াই তা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন কিনা ভোক্তা অধিদপ্তরের দেখা দরকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস। একে তো চুলায় গ্যাস থাকে না তার ওপর নানাভাবে খরচের ঝুলি চাপছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। এ যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
মিটার চার্জ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তিতাস জানায়, প্রতিটি প্রি-পেইড মিটারের লাইফ ১০ বছর বিবেচনা করে এর মূল্য, ইনস্টলেশন, ওয়েব সিস্টেম, মিটার ও সার্ভার মেইন্টেন্যান্স চার্জ ইত্যাদি যাবতীয় ব্যয় বাবদ প্রতিটি মিটারের মূল্য দাঁড়ায় ২৫ হাজার টাকা। তিতাস গ্যাস কোম্পানি ঋণ গ্রহণ করে এসব মিটারের ব্যবস্থা করেছে। মিটারের সমুদয় মূল্য একসঙ্গে না নিয়ে গ্রাহকদের সুবিধার্থে মাসিক ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে ওই খাত সমন্বয় করা হচ্ছে। সরকারের সামপ্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পেট্রোবাংলার আওতাধীন সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আবাসিক প্রি-পেইড মিটারের মাসিক ভাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিতাস বলছে, গ্রাহকদের সুবিধার্থে সরকার আবাসিক গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটার মাত্র ১৮ টাকা পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করেছে। অথচ ২০২৩ সালে দেশে উৎপাদিত গ্যাস ও আমদানিকৃত এলএনজির মিশ্রিত মূল্য গড়ে প্রতি ঘনমিটারে ১৮ টাকার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ, আবাসিক খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিপরীতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাই আবাসিক খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অবান্তর। এ বিষয়ে তিতাসের গ্যাস মিটারের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোবারক হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের মিটারে গ্রাহক সংখ্যা চার লাখ ২০ হাজার। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মিটারের দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
কবে থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি মাস থেকে মিটারে নতুন চার্জ কার্যকর হবে। জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় পহেলা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে জানায় তিতাস। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম এ বিষয়ে বলেন, বিইআরসিকে বাদ দিয়ে নতুন চার্জ কার্যকর করা তিতাসের ইখতিয়ার নেই। গণশুনানি ছাড়া দাম বাড়ানো অন্যায্য। এ ব্যাপারে ক্যাব আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।