Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

আব্দুল কাইয়ুম

আব্দুল কাইয়ুম

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ১২:১৩ এএম


অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও অনিয়মের কথা বললেও তার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে প্রতিটি জিনিসের দাম। বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। ইতোমধ্যে নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেকের। চলমান বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যেই পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতারা। আমদানি করা প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ছে দেশিয় পণ্য। দামের এই অস্থিরতার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই বললেই চলে। দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা ও  জরিমানা না করলে কার্যকরী কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দামের এই ঊর্ধ্বগতির ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবন চলার মান কমে যাচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও তারা ভালো কিছু খেতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কম দামি খাবারে চালাতে হচ্ছে তাদের জীবন। মাংসের দাম আকাম ছোঁয়া হওয়াতে মাসেও একবার তা খেতে পারছেন না অনেকে। ঢাকাতে পরিবার নিয়ে চলতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন।  

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। প্রতি কেজি বিআর-২৮ ও পাজাম ৫৬ খেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ টাকা ও খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আমদানি শুল্ক অর্ধেক কমানোর পরও প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, এ ছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা ও লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তা ছাড়া সবজি বাজারে ঘুরে দেখা দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, সপ্তাহ ব্যবধানে ফের বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ফলে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৬০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মুলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও গাজর ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, পুরান আলু ৭০ টাকা, ক্ষীরা ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা ও পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর প্রতি পিস লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আকারভেদে ফুলকপি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ব্রকলি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

মাছ ও মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, স্বস্তির খবর মিলছে না  মাছ ও মাংসের বাজারেও। সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে এসবের দাম। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকার ওপরে। কেজি প্রতি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগির মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়। কিছু দিন দাম কমলেও কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। যা গত মাসে দাম ৬৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল মাংস ব্যবসায়ীরা। বাজারে খাসির মাংসের বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।

এদিকে, সপ্তাহ ব্যবধানে ডজন প্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২১০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পবিত্র রমজান আসতে এখনো এক মাসের বেশি বাকি। এর মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে রোজাকেন্দ্রিক জিনিসের দাম। কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। গত এক মাসের মধ্যে পণ্যের দাম ১০-৩০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৪০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বড়ই খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে প্রতিটি নিত্যপন্যের দাম বেড়েই চলেছে। দাম বাড়ার প্রধান কারণ হলো কারখানা পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বাড়ছে প্রতিটি দাম। মিল মালিকদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে রোজায় দাম আরও বাড়তে পারবে। বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিব হাসান বলেন, বাজারে আসলেই শুনাতে হয় সব কিছুর দাম বেড়েছে। তাদের কথা শুনে মানে হয় প্রতিদিনই দাম রাড়ে। তা ছাড় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম শুনতেই কিছু কেনা আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমাদের আয় কিন্তু বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা যে ধরনের দাম চাচ্ছে তাই দিতে হবে, নয়তো দাঁড়ানোরও সুযোগ নেই। আমাদের বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে। 

বাজার করতে আসা সাব্বির আহমেদ নামে একজনের সাথে কথ বললে তিনি বলেন, আমি মাংস কিনতে এতে দেখি মাংসের দাম ৭৫০ টাকা। এতো দাম দিয়ে মাংস কিনার মতো আমার সামর্থ্য নেই। তাই মাংসের স্বাদ নিতে ২৫০ টাকা দামের গরুর চর্বি ও বিভিন্ন অংশের কিছু মাংস কিনেছি। তা ছাড়া সবজির বাজারের যে দাম তা কিনতেও অনেক হিসাব করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পবিত্র রমজারকে কেন্দ্র করে সব পণ্য আমদানিতেই ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। যদিও বাজারে এখন এসব পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় ছয় থেকে ১৬১ শতাংশ বেশি। এবার পেঁয়াজে সরবরাহ সংকট থাকলেও বাজার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দাবি— ছোলা, চিনি, সয়াবিন তেল, খেজুরের মতো পণ্যগুলোর সরবরাহে ঘাটতি নেই। গত বছরের এই সময়ের চেয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেশি ঋণপত্র খোলা হয়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সময় ও সুযোগ বুঝে বিভিন্ন সিন্ডিকেট গোষ্ঠী মুনাফার উদ্দেশে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ রোজা এলেই এ প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। রোজার পণ্য ক্রয়ে তাড়াহুড়ো করলে দাম কমে না বরং বাড়ে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা কোনো সমাধান নয়। যা জরিমানা করা হয় তার থেকে অনেক বেশি মুনাফা করে নেন ব্যবসায়ীরা। জরিমানা বাদ দিয়ে যারা সিন্ডিকেট ও বাজার কারসাজির সাথে জড়িত তাদের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
 

Link copied!