Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

লাখ লাখ রোহিঙ্গার পর বাংলাদেশে বিজিপির অনুপ্রবেশ

নয়া বিষফোঁড়া মিয়ানমার বাহিনী

আবদুর রহিম

ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪, ১২:১১ এএম


নয়া বিষফোঁড়া মিয়ানমার বাহিনী

সীমান্তের নিরাপত্তা এবং আশ্রিত বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের উদ্যোগ জরুরি

— ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক

যুদ্ধের উত্তাপ বাংলাদেশে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকলে আমাদের আত্মরক্ষার কৌশল নিতে হবে
—মে. জে. (অব) আব্দুর রশীদ নিরাপত্তা বিশ্লেষক

মিয়ানমারে গোলাগুলি চলছেই। ওপারের আর্টিলারি ও মর্টার শেল গত দেড় বছরে বহুবার বাংলাদেশে পড়েছে। ধারাবাহিক কুটনৈতিক নীতি ভঙ্গের কারণে অনিরাপদ সীমান্ত থেকে এ দেশের বহু মানুষ বাড়িঘর ছেড়েছে। শিক্ষপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে আবারো উত্তেজনা বেড়েছে। ওপারের যুদ্ধের হাওয়া ঢুকেছে বাংলাদেশে। গতকাল মিয়ানমারের মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে  দুজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মির হামলা থেকে বাঁচতে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) রোহিঙ্গাদের মতো এ দেশে স্রোতের মতো প্রবেশ করছে। 

কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এখনো প্রায় ১৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রিত। তাদের স্বদেশে পাঠানো যায়নি। এর মধ্যে ওই দেশের আর্মির হামলা থেকে বাঁচতে গত কয়েক দিনে বহু মিয়ানমার বাহিনী প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের মতো মিয়ানমার বাহিনীর প্রবেশকেও এখন বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। কূটনৈতিক উদ্যোগে যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিজ দেশে পাঠানোর দাবি উঠেছে। আর যদি ধারাবাহিক সীমান্তে উত্তেজনা চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জানমাল নিরাপত্তার জন্য আত্মরক্ষা নীতি গ্রহণ করতেও বলা হচ্ছে। 

এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘সর্বশেষ হতাহতের দুজনের একজন আমাদের বাংলাদেশের। সীমান্তে আমাদের স্কুল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হচ্ছে মিয়ানমারের যুদ্ধের উত্তাপ বাংলাদেশে আসার কারণে। সীমান্তে এখন প্রতিটি সময় বাংলাদেশের জন্য সতর্কের। ওই দেশের বহু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আমাদের দেশে ঢুকে পড়েছে। সাময়িক আশ্রয় নিয়েছে। এখন যেভাবেই হোক তাদের ফের ওই দেশে পাঠাতে হবে। এ দেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে, এখনো তাদের ফেরত পাঠানো যায়নি। এর মধ্যে ওই দেশের বাহিনীও এখন ঢুকছে , যেভাবেই হোক, তাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠাতে হবে। তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হতে পারে।  

যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে ভারত চীনেও বাহিনীরা প্রবেশ করেছিল। তাদেরও কূটনৈতিকভাবে নিজহ নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকার ভারত ও চীন থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে পারে তাদের দেশে বিশেষ বাহিনীরা প্রাণে বাঁচাতে সাময়িক প্রবেশ করার পর তাদের ফের কিভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক এই সম্পর্ক বিশ্লেষক আরও বলেন, চলমান পরিস্থিতিগুলো দ্রুত জাতিসংঘকে অবহিত করতে হবে। এখন জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি। এটি যদি তীব্র আকার ধারণ করে তখন জাতিসংঘই প্রশ্ন উঠাতে পারে— তাদের অবহিত করা হয়নি কেন। যেভাবেই হোক চলমান উদ্বেগের পরিস্থিতি জাতিসংঘে তুলে ধরে বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপদ করতে হবে, ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে।’  

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি কূটনৈতিক সব ধরনের উদ্যেগ মিয়ানমার ভঙ্গ করছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের দেশের অস্থিরতার মর্টার শেল আমাদের দেশে এসে পড়ছে। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। সীমান্তে সুরক্ষার বিষয়ে আমাদের এখন জরুরি দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এ দেশে আসা ঠেকাতে হবে। যেকোনোভাবেই প্রবশ রুখতে হবে। মিয়ানমারের অস্থিরতার বিষয়ে আমাদের দেশের কিছুই করার নেই। তবে তাদের উত্তেজনা যদি ধারাবাহিকভাবে আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে আমাদের আত্মরক্ষার কৌশল নিতে হবে। যেমন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও দেখি প্রয়োজনে আত্মরক্ষার নীতি তারাও গ্রহণ করে। কূটনৈতিকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকারকে এখন জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্ত হতাহতের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে হবে।
 

Link copied!