Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

সংঘাত শিথিলের পরও অনুপ্রবেশ

নুর মোহাম্মদ মিঠু ও টেকনাফ প্রতিনিধি

নুর মোহাম্মদ মিঠু ও টেকনাফ প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪, ০১:০৮ এএম


সংঘাত শিথিলের পরও অনুপ্রবেশ
  • মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে কমেছে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ
  • গতকালও ৬৩ জনের অনুপ্রবেশ বিজিবি হেফাজতে ৩২৮ জন
  • বিজিবির মহাপরিচালকের সীমান্ত পরিদর্শন, বললেন সীমান্ত সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত কিছুটা কমেছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় গোলাগুলির শব্দও কমেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি শব্দ শোনা গেলেও অনেকটা বন্ধ রয়েছে বিস্ফোরণের শব্দ। তবুও থেমে নেই দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী সদস্যদের অনুপ্রবেশ। গতকাল বুধবারও কক্সবাজারের টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বিজিপির আরও ৬৩ সদস্য পালিয়ে এসেছেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে আরও একজন প্রবেশ করে বলে জানান বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। এ নিয়ে বিজিবির হেফাজতে মিয়ানমারের মোট ৩২৮ জন রয়েছেন। 

বিজিবির এ কর্মকর্তা বলছেন, পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিজিপি, সেনা ও সাধারণ নাগরিকসহ মোট ৩২৮ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে এর আগে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমসকর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকসহ পালিয়ে আসা ২৬৪ জন বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন। বিজিবির হেফাজতে ২৬৪ জনের থাকাদের মধ্যে ২২২ জন সেনা সদস্য, দুজন সিআইডি,  চারজন লোকাল পুলিশ, পাঁচজন স্পেশাল ব্রাঞ্চের, ৯ জন ইমিগ্রেশন বিভাগের ২০, অসামরিক দুজন রয়েছেন। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ বলা যায়। বিচ্ছিন্ন কিছু শব্দ শোনা গেলেও গোলাগুলির শব্দ আর নেই। এরই মধ্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীও গতকাল সীমান্ত পরিদর্শনে যান। তিনি ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন শেষে টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্তের দিকে যান। পরিদর্শন শেষে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকা সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ নয় বলে জানান বিজিবির ডিজি। এই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।  

তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ জনগণের জন্য জায়গাটা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে যখন গোলাগুলি শুরু হয়, সেই সময়টুকু তো একেবারেই নয়! এটি স্বাভাবিক যে, নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকাটা আদৌ সুখকর কোনো কিছু না। তবে জীবন রক্ষার জন্য, যখন এ ধরনের পরিস্থিতি হয়— তখন তো কিছুটা করতেই হবে। ডিজি বলেন, তুমব্রু ও ঘুমধুমের পাশের বিওপিগুলোর সীমান্ত এলাকায় সংঘাতের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু গোলাগুলি হয়েছে, কিছু কিছু হচ্ছেও। এখনই সব সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের সরে যাওয়ার কথা বলছি না। তিনি বলেন, গত দুই দিনের তুলনায় ফায়ারিংয়ের পরিমাণ একটু কম। এর আগে গোলা-মর্টার শেল আমাদের অভ্যন্তরেও এসে পড়েছে। আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রতিবাদ জানিয়েছে। মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আরও বলেন, মিয়ানমার জানিয়েছে— এখানে যারা আশ্রয় (মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য) নিয়েছে, তারা তাদের নিয়ে যেতে প্রস্তুত। আমরা পরামর্শ করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা নিয়ে যেতে বলেছি। আমরা আশাবাদী শিগগিরই এর সমাধান হবে। 

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। 

এর আগে সীমান্ত পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালক দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদা তৎপর থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্বরত সব বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। 

বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সব সদস্যের খোঁজখবর নেন এবং আহত অবস্থায় আসা ও হাসপাতালে চিকিৎসারত বিজিপি সদস্যদের দেখতে যান। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার, রামু সেক্টর কমান্ডার ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ বিজিবির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 

Link copied!