Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

আশ্রিতরা আসলে কারা

আবদুর রহিম

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ১২:৪২ এএম


আশ্রিতরা আসলে কারা
  • অস্ত্রধারী সৈনিকরা জান্তা সরকারের গুপ্তচর বলে ধারণা
  • এবারই প্রথম রোহিঙ্গা ও সৈনিকরা অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ
  • তদন্তে সৈন্যরা রোহিঙ্গা নির্যাতনকারী হলে বিচার
  • রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে পরিস্থিতি সৃষ্ট কি-না সন্দেহ

গুপ্তচর কিংবা রোহিঙ্গা গণহত্যায় প্রমাণ পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক আদালতের সহায়তায় বিচার চাইতে পারবে বাংলাদেশ
—ইসফাক ইলাহি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক

বাংলাদেশে লাখ লাখ আশ্রিত রোহিঙ্গার মধ্যে আরাকান আর্মির আক্রমণ থেকে বাঁচতে অস্ত্রসহ বাংলাদেশে এসে সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি), সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এই সংখ্যা তিন শতাধিক। এর মধ্যে প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে তুমব্রু থেকে ১০১ জনকে টেকনাফের হ্নীলায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এদের ফেরত পাঠানো নিয়ে দুদেশের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের  বিমানে পাঠানোর কথা বললেও গত শনিবার নদীপথে জাহাজ পাঠানোর কথা বলেছিল  মিয়ানমার। সপ্তাহ পার হতে চললেও এই প্রক্রিয়া এখনো ঝুলে আছে। এর মধ্যে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক থেকে প্রশ্ন উঠেছে— আশ্রিতদের আসলে পরিচয় কী? তারা কী মিয়ানমার জান্তার সদস্য, নাকি বিদ্রোহী আরাকানের সদস্য। গুপ্তচর বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এসবের তদন্ত করে তবেই যেন তাদের ফেরত পাঠানো হয় বলেও দাবি উঠেছে।  কেউ কেউ ধারণা করছেন, ১৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে এই বাহিনীকে দিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রও হতে পারে। 

কারণ, এর আগে রোহিঙ্গারা খালি হাতে এ দেশে এলেও এবারই প্রথম কিছু রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেছে, যাদের পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদন করেছে। আবার বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছে। অস্ত্রধারী ঢুকিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছিল কি না, সেটাও অনেকে ধারণা করছেন। রোহিঙ্গারা বিপথগামী সেনাদের কাছে নির্যাতিত হয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তা বিশ্বআদালতে প্রমাণিত। আশ্রিত ৩৩০ জনের মধ্যে যদি কোনো সদস্য রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এদের বিচার করার জন্যও আহ্বান করা হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমানা রয়েছে, তা এখন অধিকাংশই বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে। রাখাইন থেকে বিদেশি মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অস্থায়ী দূতাবাসও সরানো হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তের মংডু শহরাঞ্চলের টংপিও টহল চৌকি দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। ওপারের সংঘাতে এপারেও গরম হাওয়া বইছে। টেকনাফে ‘বুলেট’, তুমব্রুতে আতঙ্ক ‘মর্টারশেল’-এর নিয়মিত খবর গণমাধ্যমে আসছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে মিলছে একের পর এক অবিস্ফোরিত মর্টার শেল। অপরদিকে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে পড়ে রয়েছে অজ্ঞাত মরদেহ। মরদেহ ভেসে এসেছে নাফ নদীতে। সব মিলিয়ে এখন সীমান্তবাসীর ত্রাহি দশা। নাফ নদী পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায়  রয়েছে শত শত রোহিঙ্গা। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিপদ-শঙ্কা এখনো কাটেনি। 

জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইসফাক ইলাহি চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, গুপ্তচরই হোক আর পালিয়ে আসা সৈনিকই হোক বা যুদ্ধাপরাধ করেছে— এমন ক্যারেক্টারই হোক, এদের আপাতত আইসোলেট করে তারপর ধীরে-সুস্থে আমরা এর তদন্ত করে বের করব। তাদের ফেরত না পাঠিয়ে এখানে ডিটেনশনে রাখা উচিত। কারণ, এই বাহিনীটা মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য দায়ী। রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং জাতিগত নিধনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিচারে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের সহায়তাও চাইতে পারে বাংলাদেশ। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আইসিসি যদি বলে এই ৩৩০ জনের মধ্যে আমরা নাম দেখছি যারা আমাদের তালিকায়ও আছে, তখন একটি বিষয় হতে পারে যে, তারা যদি অনুরোধ করে এই দুজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই; সেটা তো হতে পারে। অস্ত্রসহ পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের কেউ সন্ত্রাসী দলের সদস্য হলে তা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।
 

Link copied!