Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

টিকা কার্যক্রমে সাড়া নেই

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ১২:৪২ এএম


টিকা কার্যক্রমে সাড়া নেই
  • অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ, চলছে এনালগ টিকা কার্যক্রম
  • করোনায় গড় শনাক্তের হার ৭ শতাংশের বেশি
  • তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ সফলভাবে প্রয়োগ করাই চ্যালেঞ্জ
  • করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে বৃহৎ পরিসরে প্রচারণা শুরু হবে
    —ডা. মো. নিজাম উদ্দিন, লাইন ডিরেক্ট, সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি
  • মানুষের মধ্যে করোনা ভয় এখন কিছুটা কম   তাই টিকা গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছে না  
    —অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, জনস্বাস্থ্যবিদ

রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ষষ্ঠতলা। এখানে একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থার লগোসম্বলিত পোশাক পরে অলস সময় পার করছেন কয়েকজন। পেছনে ব্যানারে লেখা কোভিড-১৯ টিকাকেন্দ্র। তাদের সাথে কথা বলে চলমান টিকা কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়। তারা বলেন, টিকা গ্রহণে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ জনের মতো আসেন। তাদের বেশির ভাগই বয়স্ক মানুষ। এ অবস্থা শুধু সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রের নয়, রাজধানীর প্রায় সবকটি টিকাকেন্দ্র ঘুরে একই দৃশ্য দেখা যায়। 

এ দিকে দেশে বেড়েই চলছে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু। চিহ্নিত হয়েছে জেএন.১-এর মতো উপধরন। চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৯৫ জন। এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ জন। প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে গড় করোনা শনাক্তের হার ৭ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ৯ মাস টিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর নতুন করে গত ২১ জানুয়ারি থেকে রাজধানী ঢাকার ৯টি কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি টিকা প্রয়োগে সরকারকে জোর দেয়ার পরামর্শ দেয় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কিন্তু টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও সাধারণ মানুষ টিকা গ্রহণ না করায় জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

রাজধানীর একটি টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বরত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টিকা কার্যক্রমের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে। কেউ এনআইডি নিয়ে এলে আমরা তাকে টিকা দিয়ে দিচ্ছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে করোনা প্রতিরোধে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম টিকার কার্যক্রম শুরু হয়। ওই দিন প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। শুরুতেই সম্মুখসারির কর্মী এবং ৪০ বছরের বেশি নাগরিকদের টিকা দেয়া হয়। এরপর গণটিকা দেয়া শুরু হয় একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। পরে এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হয়। আর ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে তৃতীয় ডোজের প্রয়োগ শুরু হয়। তার পর পর্যায়ক্রমে স্কুলশিক্ষার্থীসহ চতুর্থ ডোজের প্রয়োগও শুরু হয়। 

এ ছাড়াও টিকা সংকটের কারণে ২০২৩ সালে প্রায় ৯ মাস টিকার তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ প্রয়োগ বন্ধ করা হয়। এমনকি টিকা সংকট ও মানুষের আগ্রহ না থাকায় ধীরে ধীরে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া হয়। তথ্য আরও বলছে, টিকা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা অ্যাপসে এখন পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ১১ কোটি ৪৬ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৮ জন। আর দেশে এখন পর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৫ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ৯০২ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৮৮.৮৬ শতাংশ। 

দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৪ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪ জন, যা জনসংখ্যার ৮৩.৭৩ শতাংশ। প্রথম বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) পেয়েছেন ছয় কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৬ জন, যা জনসংখ্যার ৪০.৭০ শতাংশ। দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ (চতুর্থ ডোজ) নিয়েছেন ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৪জন। করোনা টিকা কার্যক্রমে পর্যাপ্ত সাড়া না থাকার কারণ জানতে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. নিজাম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, টিকা কার্যক্রম নিয়ে বাড়াতে আমরা কাজ করছি। আমাদের পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ও টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে বৃহৎ পরিসরে প্রচারণা শুরু হবে। অনলাইন অ্যাপ সুরক্ষায় টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের রেজিস্ট্রেশন বন্ধের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘জন্ম নিবন্ধনের নম্বর দিয়ে টিকা গ্রহীতা চাইলে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

দেশের করোনা সংক্রমন ও টিকা কার্যক্রম নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে করোনার ভয় এখন কিছুটা কম। তাই টিকা নিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু থেমে নেই। গ্রীষ্মকালে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই এখন থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।’
 

Link copied!