ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০১:১০ এএম
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব অভিভাবক ও শিক্ষক পিটিএর সদস্য
- বছরে দুবার পিটিএ সভা বা অভিভাবক সমাবেশ হবে
- প্রতিষ্ঠানভেদে নির্দিষ্ট সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি থাকবে
- নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণে কমিটি গঠন
- ফৌজদারি আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত অভিভাবক সদস্য হতে পারবেন না
- পিটিএর প্রধান কাজ সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালনা করা
এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ, এর খারাপ ব্যবহার হলে কোনো লাভ হবে না
—ড. হাফিজুর রহমান, ঢাবি, আইইআর
মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন বাড়িতে ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান এবং শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা। বিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং বাড়িতে মা-বাবা ও অভিভাবকের প্যারেন্টিং শিক্ষার প্রধান সহায়ক। এই দুইয়ের মিলিত উদ্যোগে শিক্ষা পরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে প্রণীত হয়েছে ‘অভিভাবক শিক্ষক সমিতি’-পিটিএ। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনিরা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সম্পর্কিত নীতিমালা-২০২৩-এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগকে ভালো বলছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা। এটিকে খারাপভাবে ব্যবহার না করার কথা জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় এ প্রোগ্রাম থাকবে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ‘অভিভাবক শিক্ষক সমিতি’ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের পরিচালনা এবং সর্বোচ্চ সুফল প্রাপ্তির জন্য ‘অভিভাবক শিক্ষক সমিতি’ পুনর্গঠন করা এবং দায়িত্ব-কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করার গুরুত্ব থেকে এ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। আর নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে ‘অভিভাবক শিক্ষক সমিতি’ সম্মিলিতভাবে অবদান রাখতে পারবে।
নীতিমালা যা থাকছে— সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দাখিল ও আলিম মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর মা-বাবা পিটিএর সাধারণ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন ও ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত কেউ পিটিএর সদস্য হতে পারবে না। বছরে দুবার পিটিএ সাধারণ সভা বা অভিভাবক সমাবেশ হবে। প্রতিটি সমাবেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান কমিটির যৌথ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে অগ্রগতি ও আর্থিক বিষয় তুলে ধরবেন। বছরে প্রথমে ১৫ তারিখের মধ্যে একটি, মধ্যবর্তী সময়ে আরেকটি সভা হবে।
কার্যকরী কমিটি : পিটিএর প্রতিষ্ঠানভেদে নির্দিষ্ট সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি থাকবে। কমিটিতে একজন সভাপতি, একজন সহসভাপতি ও একজন সদস্য সচিব থাকবেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হবে। এতে অভিভাবক প্রতিনিধি থাকবেন প্রতি শ্রেণিতে দুজন করে ১০ জন। শিক্ষক প্রতিনিধি পাঁচজন। এসএমসি বা এমএমসি মনোনীত একজন অভিভাবক। এ ছাড়া ভোকেশনাল শাখায় ২০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হবে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে সদস্য সংখ্যা কমবে এবং ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হবে। স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্ষেত্রে ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকবে।
স্বতন্ত্র কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজের ক্ষেত্রে প্রতি শ্রেণি থেকে দুজন অভিভাবক ও একজন শিক্ষক থাকবেন। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ জনের কম হলে অভিভাবক প্রতিনিধি হবে একজন। এসব প্রতিনিধির মধ্যে অন্তত পাঁচজন নারী সদস্য রাখতে হবে। আর সর্বনিম্ন দুজন নারী শিক্ষককে কমিটিতে রাখতে হবে। কমিটির ক্ষেত্রে অধিকতর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন অভিভাবকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। পিটিএর কাজ : পিটিএর প্রধান কাজ সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালনা করা। কমিটি সামাজিক নিরীক্ষাকার্য সম্পাদন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দেবে। অভিভাবক শিক্ষক সমিতি সবার সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সভা আহ্বান করবে। সামাজিক নিরীক্ষা রিপোর্ট বিদ্যালয়ের নোটিসে উল্লেখ করতে হবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সামাজিক নিরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ কমিটি শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ করবে। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। অনুদান, পুরস্কার, বৃত্তি, উপবৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে অভিভাবকদের জানাবে।
উল্লেখ্য, ফিমেল সেকেন্ডারি স্কুল এসিসট্যান্স প্রজেক্ট (এফএসএসএপি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৩ সালে ‘শিক্ষক অভিভাবক সমিতি’ (পিটিএ)-এর প্রথম প্রবর্তন করা হয়েছিল। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ১৯৯৬ সালে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত বিদ্যালয়সমূহের জন্য ‘শিক্ষক অভিভাবক সমিতি’ গঠন নীতিমালা জারি ও কার্যকর করে। শতভাগ সফলতা পাওয়া না গেলেও বিদ্যমান ‘শিক্ষক অভিভাবক সমিতির’ কার্যক্রমে স্থানীয় অংশগ্রহণ অনেক পরিমাণে বেড়েছে এবং শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে অনেক বেশি উদ্যোগী ও যত্নবান হয়েছেন। সেকায়েপভুক্ত ২১৫ উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিটিএ গঠিত হয়েছিল। পিটিএ মাঠপর্যায়ে শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক ড. হাফিজুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে অভিভাবকরা আরো সহজে জানতে পারবেন। আমাদের দেশের অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আর খোঁজ নেন না। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখতে পারবেন। তবে এর মিস ইউজ (খারাপ ব্যবহার) করা যাবে না। ম্যানেজিং কমিটির ক্ষেত্রে আমরা যেমন দেখি, তেমনটি হলে কোনো লাভ হবে না।