মার্চ ৩, ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম
- মেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি
- দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল ৬০ লাখ
- প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১টি বই
- ৬৭০ প্রকাশনীর স্টল ছিল ৯ শতাধিক
আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে জনগণের মাঝে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে
—ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা
পড়ো বই গড়ো দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলা। এই স্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হয় অমর একুশে বইমেলা-২০২৪। ৩১তম দিনে পর্দা নেমেছে এবারের বইমেলা। মেলার আয়োজনের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে বাঙলা একাডেমি। সে জন্য বিগত সময়ের তুলনায় সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠুভাবে মেলাটি পরিচালিত হওয়ার কথা জানা গেছে। মেলায় উপস্থিত ছিলেন ৬০ লাখ দর্শনার্থী। মেলার প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী, এবার মেলায় ৬০ কোটি টাকার মতো বই বিক্রি হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে মোট তিন হাজার ৭৫১টি বই। মোড়ক উম্মোচন হয়েছে ৬০০ বইয়ের। গতকাল শনিবার বাঙলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান করা হয়।
কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। বাংলা একাডেমির সদস্য সচিবের পক্ষে প্রতিবেদন পেশ করেন উপ-পরিচালক মন্তাজুর রহমান।
জানা গেছে, লিপ ইয়ার ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপস্থিতির কথা বিবেচনা করে এবারের বইমেলার সময় তিনদিন বেড়ে ৩১ দিন হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি হয়েছে। এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করে। গত বছর বইমেলায় বিক্রি হয়েছে ৪৭ কোটি টাকার বই। এবার সেটা ১৩ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। পহেলা মার্চ পর্যন্ত মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি। ২ মার্চ পর্যন্ত নতুন বই এসেছে তিন হাজার ৭৫১টি। যেখানে গতবছর ছিল তিন হাজার ৭৩০টি। মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৬০০ বইয়ের। এবারের মেলায় ৯ শতাধিকের বেশি স্টল, ৬৭০টি প্রকাশনী ছিল।
চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেলেন যারা : অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত একুশ শতকে বাংলাদেশ : শিক্ষার রূপান্তর গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত যাত্রাতিহাস : বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত কিলো ফ্লাইট প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খিকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বেইলি রোডে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তাদের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আশপাশের লেখকরা বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেই লেখক হয়েছেন। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে জনগণের মাঝে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে। সেজন্য প্রভাতফেরির উদ্যোগ বাংলা একাডেমি নিতে পারে। আমাদের শিল্প-সাহিত্যকে গণমুখী হওয়ার কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু। সেটাকে মানব মনের সাথে সামঞ্জস্য থাকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষাকে নিয়ে ভাবনার বিষয়টি জানতে পারি। পিতার পৃষ্ঠপোষকতা অনুসরণ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একইভাবে কাজ করছেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে পরিবার। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমান প্রজম্ম অনেক বেশি মোবাইলে আসক্ত। তারা অনেক বেশি সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত। তাদের হাতের লেখা খারাপ হয়ে গেছে। আমি সব বাবা-মা, শিক্ষক ও গুরুজন যারা আছেন তাদের অনুরোধ করব, আপনারা প্রতি সপ্তাহে সন্তানদের হাতে বই দেন। ছোট বই দেন। যাতে তারা সহজেই শেষ করতে পারে। না হয় তারা আগ্রহ পাবে না। ছোট বই দিয়েই শুরু করেন।’
বাংলা একাডেমিতে বইমেলা করার কথা জানিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পরই শুনেছি বাঙলা একাডেমি থেকে বইমেলা সরানোর আলোচনা চলছে। আমরা চেষ্টা করব যাতে বইমেলা বাঙলা একাডেমির পাশেই থাকে।’ সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নুরুল হুদা বলেন, ‘বইমেলা মানে আমাদের সৃষ্টিশীলতার প্রদর্শনী। এ বইমেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বইগুলো এখানে প্রকাশিত হয়। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকাশ মাধ্যমকে বিস্তার করছি। সোনার বাঙলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু বলেছেন। সোনার বাঙলা হবে সোনার মানুষের মাধ্যমে। যার জাতীয়তা এক। সেটা হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাঙালি জাতি যাতে এক আঙিকে চিন্তা করতে পারে সে জন্য এ বইমেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলা এখন যেভাবে আছে আগামীতেও যাতে সেভাবে বা তার চেয়েও ভালোভাবে থাকে। আমরা সেভাবে চেষ্টা করব। বাঙলা একাডেমি বহুবছর ধরে এ বইমেলা আয়োজন করছে।’
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী বলেন, ‘গত সাত বছর ধরে আমরা এ আয়োজনের সঙ্গে আছি। আমি বলব এবারেরটা একটা বিশেষ সফল আয়োজন। যেহেতু আমি সাত বছর ধরে এ মেলার সাথে যুক্ত আছি, আমি যদি তুলনা করি, তাহলে আমি বলব এ যাবত আয়োজিত সবচেয়ে সুন্দর, সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলাপ্রবণ ছিল।’