আব্দুল হামিদ
মার্চ ৪, ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আব্দুল হামিদ
মার্চ ৪, ২০২৪, ১১:৫০ এএম
বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর একদিনের জন্য নিরবতা পালন করেছে জনবহুল এই রাস্তাটি। সেই রাস্তা ফিরেছে স্বাভাবিকতায়। তবে এই রাস্তা দিয়ে যারা গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা একবারের জন্যে হলেও ভবনটিতে দৃষ্টি দিচ্ছেন। দেখছেন ভয়াবহতার শেষ পরিণতি কি হয়েছিল! অনেকে সেই ভবনটির ছবিও তুলছেন।
ছয় বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলেন তাহমিনা তানজুম। মেয়েকে দেখাচ্ছেন মৃত্যুকূপের সেই ভবনটি। অবুঝ মেয়েটি বলছিলেন এটিতে সে দিন আগুন লেগেছিল তাই না আম্মু? উত্তরে মাও বললেন- হ্যাঁ, এটাতেই আগুন লেগেছিল। এখানে আমরা কতবার খেতে এসেছি...।
তাহমিনা তানজুম আমার সংবাদকে জানান, এই রেস্টুরেন্টে সেদিন তার স্বামীও এসেছিলেন তার বন্ধুদের নিয়ে। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তারা। তিনি হোটেল মালিকদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, আমরা খেতে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শুধু খাবার সার্ভ করা না। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়াটাও তাদের দায়িত্ব।
কলেজপড়ুয়া রাকিব। কলেজের ক্লাস শেষে বেইলি রোড ধরে হাঁটছিলেন। ‘গ্রিন কোজি কটেজ’-এর সামনে আসতেই আটকে গেলো রাকিবের দুপা। কিছু সময়ের জন্য নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকলেন সেই ভবনের দিকে। কারণ গত ২৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
তিনি জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারির রাতে এই ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন। বন্ধুদের সাথে খাওয়া পর্ব শেষ করে রাত ৮টার দিকে বের হন। বাইরে যখন বন্ধুদের বিদায় দিচ্ছিলেন। হঠৎ তিনি আগুন দেখে হতভম্ব হয়ে যান। এরপর সেখানে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। রাকিবের সামনে মুহূর্তেই আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় বেইলি রোডের ৬ তলার ‘গ্রিন কোজি কটেজ’।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর থেকে সে আতঙ্কে আছে। বন্ধুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে আর বসতে চাই না। একটুর জন্য মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হইনি। রাকিব দাবি করে বলেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার মতো নিরাপদ স্থান চাই। যে রেস্টুরেন্টে নিরাপদ বসার স্থান নেই। সেই রেস্টুরেন্টে আমি আর কখনো যাব না।
কলেজপড়ুয়া হৃদয় বলেন, আমরা যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিবো, সেই স্থানও খুঁজে পাওয়া যায় না। নিরুপায় হয়ে আমরা রেস্টুরেন্টে বসি এখন রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তা যদি এমন হয় তাহলে কিভাবে আমরা বন্ধুদের সাথে সময় কাটাব। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চান তিনি। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে বেচাকেনা কমেছে কয়েকগুণ। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে বেইলি রোডে ফুড দোকানিরা।
মি. বেকারির ম্যানেজার বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে আমাদের দোকানে বেচাকেনা নেই। প্রায় কয়েকগুণ বেচাকেনা কমে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় আমরা ছিলাম। আমরা চেষ্টা করেছি সে ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু কোনোভাবেই আনা যায়নি। মাত্র ৫-৭ মিনিটের মধ্যে পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে যায়। পোড়া ভবনের বামপাশে ফুসফুস দোকানি বলেন, আমরা গত দুইদিন দোকান খুলিনি। আজ খুলেছি কিন্তু কেউ কিনতে আসছে না। সবাই এই ভবন দেখতে আসছে।