সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
মার্চ ১১, ২০২৪, ১২:১৫ এএম
সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
মার্চ ১১, ২০২৪, ১২:১৫ এএম
আমাদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কাজে আসছে না প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
—অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, জনস্বাস্থ্যবিদ
আবহাওয়া পরিবর্তনে এডিস মশার বংশ বিস্তারের ধরন বদলাচ্ছে, স্থানীয় পর্যায়ে মশকনিধন কার্যক্রম নেয়া জরুরি
—অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, কীটতত্ত্ববিদ
মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা আসাদ আহমেদ। রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সামনে বসে আছেন আট বছর বয়সি ছেলে আবিরকে নিয়ে। অসুস্থ আবির তার বাবার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুঝে আছে। আসাদ আহমেদের হাতে প্লাটিলেট টেস্ট করার জন্য দেয়া টাকার রশিদ। তার সাথে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে ছেলে জ্বরে আক্রান্ত। ডাক্তারের পরামর্শে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছেন তিন দিন আগে। ডেঙ্গু টেস্টে তার পজেটিভ আসে। প্লাটিলেট ছিল ৯০ হাজার। ডাক্তারের পরামর্শে ছেলেকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর ভয় ছিল বর্ষাকালে। এখন ডেঙ্গু সারা বছরই হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন মশকনিধনের কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে নগরে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে। গত বছর ডেঙ্গুতে দেশে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যুর পর চলতি বছরও প্রায় দ্বিগুণ হারে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য অনুসারে গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৭৭ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের। চলতি বছর একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৮৪ জন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। আক্রান্ত ও মৃত্যু গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের মতো চলতি বছরও আক্রান্তের সংখ্যায় পুরুষ বেশি হলেও মৃত্যু হচ্ছে বেশি নারীর। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
ডেঙ্গুর চারটি ধরন আছে : ডেন ১, ২, ৩ ও ৪। গত বছর দেশে ডেন-২-এ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। চিকিৎসকরা বলেন, ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার বা নতুন কোনো ধরনে আক্রান্ত হলে সেই রোগীর পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বেশি ছড়ালে পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হওয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো মশকনিধন কার্যক্রমের দুর্বল কাঠামো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার ‘ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ১৫ জেলায় লার্ভা জরিপ করে। সেখানে দেখা গেছে, এডিস মশা প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে সমপ্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু : আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে এখন বর্ষার সময়ও তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বর্ষা আসার সময় পাল্টে যাচ্ছে, বর্ষা বিদায়ও নিচ্ছে দেরিতে। প্রকৃতির এমন পরিবর্তনে ডেঙ্গুর মতো কীটপতঙ্গবাহিত নানা রোগ দেশে বেড়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক আছে বলেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বাড়ছে। আমাদের ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুব বেশি একটা কাজে আসছে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
কীটতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তার সাথে কথা বলেন আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর সময়কাল এখন আগের মতো নেই। ডেঙ্গু আমাদের দেশে এখন সারা বছরই থাকবে— হয়তো কখনো বাড়বে কখনো কমবে। বর্ষাকালে বেশি থাকবে অন্য সময়ে তুলনামূলক কম থাকবে। স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।