Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ডলার সংকট

ফের লোডশেডিংয়ের খড়গ

মহিউদ্দিন রাব্বানি

মার্চ ১৬, ২০২৪, ১২:২৭ এএম


ফের লোডশেডিংয়ের খড়গ
  • মার্চে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা জানান প্রতিমন্ত্রী
  • ইফতার-তারাবিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট
  • দেশে চাহিদা প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট
  • মার্চেই বড় লোডশেডিংয়ের শঙ্কা

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না

— মোহাম্মদ হোসাইন
মহাপরিচালক, পাওয়ার সেল

সংকটের জন্য বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনাই দায়ী

—ইজাজ হোসেন
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ

বহুমুখী সংকটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ও দেশে ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় রসদ আমদানি করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে এলএনজি আমদানি কমেছে অর্ধেকে। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকার মোট জ্বালানির ২০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করত। একটি এফএসআরইউ নিয়মিত সার্ভিসিংয়ে থাকায় গ্যাস সরবরাহ ১০ শতাংশ কমে গেছে। সার্ভিসিংয়ে থাকা এফএসআরইউ ৩০ মার্চের আগে আসবে না। এতে কিছুটা সংকট রয়ে গেছে। আমাদের নিজস্ব যা ছিল তার থেকেও প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন কমে গেছে। 

এমতাবস্থায় লোডশেডিংয়ের আকার বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার গ্রীষ্ম আসার আগেই বড় ধরনের বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আমাদের দেশে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠকে গ্রীষ্মকাল ধরা হয়। সে হিসেবে গ্রীষ্ম আসতে আরও এক মাস বাকি। তবে এখনই গরম পড়তে শুরু হয়েছে। বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। রাজধানীবাসীও লোডশেডিং কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন। এদিকে রোজার প্রথম দিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং হয়েছে। এমনকি ইফতার ও তারাবির সময় হচ্ছে লোডশেডিং। এদিন সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। গরম যত বাড়ছে, লোডশেডিংও তত বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদার পুরোটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া চলছে সেচ মৌসুম। এ কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। রমজানে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ইফতার ও তারাবির সময় তাই তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। তার পরও এই দুই সময়ে লোডশেডিং হচ্ছে।

রমজানের শুরু থেকেই রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে। গত ছয় দিনের লোডশেডিংয়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দিন দিন লোডশেডিং বাড়ছে। গত ৭ মার্চ দেশে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ৮৩ মেগাওয়াট, ৮ মার্চ ৯৩ মেগাওয়াট, ৯ মার্চ ৯৬ মেগাওয়াট, ১০ মার্চ ৮০ মেগাওয়াট, ১১ মার্চ ১৪৯ মেগাওয়াট এবং ১২ মার্চ ৯০ মেগাওয়াট। রাজধানীর চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি। কোনো কোনো এলাকায় দিনে-রাতে মিলিয়ে ৯ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। পিডিবি সূত্র জানায়, এবার রমজানে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুতের এ চাহিদা থাকবে। এ সময় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ধরা হয়েছে ন্যূনতম ১৫৪ কোটি ঘনফুট। 

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এটি চালু হতে পারে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সে সময় বিদ্যুৎ খাতে ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাতেও সরবরাহ বাড়বে। সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকারের বড় ভরসার জায়গা রামপাল, পায়রা ও ভারতে আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর বাইরে মে-জুনে চট্টগ্রামে এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বরগুনার বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করছে সরকার। আদানি ছাড়াই কয়লা দিয়ে আগামী মে-জুনে দুই হাজার ৮৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া থেকে ৩২৫ মেগাওয়াট আসবে। আমদানি করা কয়লা থেকে হবে দুই হাজার ৫৪০ মেগাওয়াট। এর বাইরে আগামী ২৬ মার্চ থেকে আদানির কড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনে ৭৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা।

কিন্তু প্রয়োজনীয় ডলার না থাকায় কয়লা ও এলএনজি আমাদানি করতে পারছে না সরকার। ফলে আসন্ন গ্রীষ্মের লোডশেডিং মোকাবিলায় কোনো প্রস্তুতিই কাজে আসছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের জন্য দায়ী ট্রান্সমিশন ও জ্বালানির সীমাবদ্ধতা এমনটিই বলেছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। জ্বালানি সীমাবদ্ধতার কারণে বেশি দামে ফার্নেস অয়েলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র মতে, বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের সরবরাহে। চাহিদা মতো জ্বালানি না পাওয়ায়  গেল দুই বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে গ্রাহককে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। 

গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে একই হারে। তবে গত বছরের মতোই সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসিয়ে রাখতে হতে পারে জ্বালানির অভাবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, একের পর এক অপরিকল্পিত বহু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। জ্বালনি সংস্থানের সুষ্ঠুু ব্যবস্থাপনা নেই। চলমান এই সংকটের জন্য বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনা দায়ী।
 

Link copied!