মার্চ ২৮, ২০২৪, ০১:২৪ এএম
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দপ্তরটির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কারণে ২০২৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পেয়েছেন শুদ্ধাচার পুরস্কার। এর আগে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে স্মার্ট নাগরিক তৈরির গুরুদায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, স্কুল-কলেজে শিক্ষক অভিভাবক সমিতি (পিটিএ) নীতিমালা, শাখা ক্যাম্পাস বন্ধ ও শিক্ষকদের বদলি ভোগান্তির বিষয়ে কথা বলেছেন দৈনিক আমার সংবাদের সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাঈমুল হক
আমার সংবাদ : লক্ষ্মীপুরে কলেজের শিক্ষকতা থেকে মাউশির মহাপরিচালক। শিক্ষকতা নাকি দাপ্তরিক দায়িত্ব পছন্দ আপনার?
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : আমি সব সময় শিক্ষকতাকে প্রাধান্য দেই। আমার কাছে সব সময় শিক্ষকতা আনন্দের। কারণ, ছাত্রদের সঙ্গে থাকা যায়। তরুণদের সঙ্গে থাকলে আমি নিজেও তরুণ হয়ে যাই। বিশেষ করে, ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার চাইতে আনন্দের আর কিছুই নেই আমার কাছে।
আমার সংবাদ : অভিজ্ঞতা-নির্ভর শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছেন। এটি বাস্তবায়িত হলে জাতি কী ধরনের উপকৃত হবে।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে একই রকম শিক্ষাব্যবস্থা আছে। আমরা বরং পিছিয়ে ছিলাম। এখন উন্নত বিশ্বের আলোকেই আমাদের সন্তানরা গড়ে উঠছে। আমাদের সন্তানরা শিক্ষাকে বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করতে পারছে। অতীতে আমরা শিখেছি, মুখস্থ করেছি পরীক্ষা দেয়ার জন্য। এখন যে কারিকুলাম আছে, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনে এটা কাজে লাগাতে পারবে। নিঃসন্দেহে এ কারিকুলাম অনেক উন্নত। যে দেশগুলো এগিয়ে গেছে তারা এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করেছে। এ কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে আমাদের চেয়ে আগামীর প্রজম্ম অনেক বেশি স্মার্ট হবে। বিশ্ব ছোট হয়ে গেছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা চলছে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠবে।
আমার সংবাদ : স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাউশির পরিকল্পনা জানতে চাই।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের স্মার্ট করে গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলছি। শিক্ষকদের স্মার্ট না করলে আমাদের শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারব না। আমাদের শিক্ষার্থীদের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি চিন্তা, মননে যেন তারা সমৃদ্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। মানসম্মত কর্মমুখী শিক্ষার জন্য ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ২০৪১ সালে আমাদের শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীল হবে। গত এক বছর আগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বর্তমানের শিক্ষার্থীদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আগে প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতা ছিল, এখন সেটা নেই। তারা গ্রুপভিত্তিক শখতে পারছে। একজন যদি দুর্বল থাকে গ্রুপের সম্মিলিত শেখার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করতে পারছে। এ জাতীয় চর্চাগুলো আগে ছিল না। আগে আমির চর্চা ছিল। এখন সেখানে আমরা হয়েছে।
আমার সংবাদ : মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা রাজপথে আন্দোলন করেছিলেন। আপনি কি মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে জাতীয়করণকে একমাত্র সমাধান মনে করেন?
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : জাতীয়করণের ব্যাপারে আমাদের পজিটিভ ও নেগেটিভ অভিজ্ঞতা আছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল পর্যালোচনা করছে। পর্যালোচনার পর যে ফলাফল আসে তার আলোকে আমরা কাজ করব। আমার মনে হয় না, সরকারিকরণই একমাত্র সমাধান। আমাদের যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেখানকার অবস্থা আশাব্যঞ্জক নয়। ব্যক্তির মানোন্নয়নের চাইতে গোষ্ঠীর মানোন্নয়নটাই শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আরও কিছু ওয়ার্কশপ সামনে আছে সেগুলোর মাধ্যমে জাতীয়করণের বিষয়ে পজিটিভ ও নেগেটিভ আমরা জানতে পারব।
আমার সংবাদ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পিটিএ (শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি) নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন শিক্ষাবিদরা। এটি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : আমরা চাচ্ছি, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের অংশগ্রহণ থাকুক। অভিভাবকরা যে স্কুলে সন্তানদের পড়ান সেখানে যেন অভিভাবক ফোরাম তৈরি করে। অভিভাবক যদি বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে বিদ্যালয়ের ভালো-মন্দ তারা দেখতে পারবে। বাইরের লোকদের সেই আগ্রহ কম থাকে। সেজন্য অভিভাবকদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা ইতোমধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে এ নীতিমালার বাস্তবায়ন শুরু করেছি। সেরকমভাবে বাধার সম্মুখীন হইনি। তবে ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে সমন্বয়ের একটা চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। আমরা চেয়েছি, শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে বিদ্যালয়ে যুক্ত করতে। শিক্ষা হবে সবার। সবাই এ বিষয়টি বুঝতে পারলে বাস্তবায়ন সহজ হবে।
আমার সংবাদ : বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদান, স্থাপন ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালায় বলা হয়েছে, মূল ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস থাকতে পারবে না। ইতোমধ্যে যাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে তাদের আলাদা ইআইএন নাম্বারসহ আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এ নীতিমালার বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। নীতিমালা বাস্তবায়নে মাউশির বাধা কোথায়?
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাখা ক্যাম্পাস করেছে। এটা বৈধ নয়। অচিরেই তাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হবে। অচিরেই তাদের শাখাগুলো ভেঙে ফেলা হবে। তাদের প্রত্যেকটি শাখা আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। যেমন- ভিকারুননিসা, আজিমপুর। ভিকারুননিসা, বেইলি রোড। এভাবে আলাদা করে দেয়া হবে। এটা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা করা সহজ নয়। একজনের পক্ষে এত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরিচালনা করাও কঠিন। এটা তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এটা বাজার নয়।
আমার সংবাদ : বদলি নিয়ে শিক্ষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বদলি ভোগান্তি দূর করার জন্য মাউশির উদ্যোগ জানতে চাই।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : বদলিতে শিক্ষকদের মাউশিতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। শিক্ষকদের নিজস্ব উপজেলায় সিট খালি থাকলে তারা সেখানে বদলি হতে পারবেন। আমরা একটা সিস্টেম ডেভেলপ (উন্নয়ন) করার চেষ্টা করছি। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকদের আর মাউশির বারান্দায় যেতে হবে না। আমরা অনলাইনে বদলি কার্যক্রম শুরু করার জন্য কাজ করছি। এটা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এ নিয়ে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
আমার সংবাদ : মাউশি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : মাউশির অধীনে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ৩০ হাজারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৯৮১ সালে আমাদের যে জনবল ছিল, এখনো সেরকমই জনবল। সেজন্য মাউশিতে জনবল বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই আমরা এটি করতে পারব।
আমার সংবাদ : আমার সংবাদকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : আপনাদেরও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।