Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বিএসসির মান কমার শঙ্কা

মো. নাঈমুল হক

এপ্রিল ২০, ২০২৪, ০৫:৩৭ পিএম


বিএসসির মান কমার শঙ্কা
  • দুই বছরের অধিক কর্মরতদের বিএসএসির সমমান মর্যাদা
  • বিএসসিধারী শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

এভাবে বিএসসি ডিগ্রি দেয়া হলে দুর্বল মানের প্রকৌশলী তৈরি হবে
—ড. ছিদ্দিকুর রহমান
সাবেক পরিচালক, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগ, ঢাবি

স্নাতক নয়, ডিগ্রি সমমানের মর্যাদা পাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা
—মো. নজরুল ইসলাম
অতিরিক্ত সচিব, কারিগরি শিক্ষা বিভাগ

এ সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক, বিষয়টি আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে
—প্রকৌশলী এস এম মঞ্জুরুল হক
সাধারণ সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক সংকট দূরীকরণে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে ডিপ্লোমাধারীরা কোথাও সর্বনিম্ন দুই বছর চাকরিতে কর্মরত থাকলে তাদের বিএসসি পাস সমমানের মর্যাদা দেয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে শেষ করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি ডিপ্লোমাধারীদের বিএসসি (পাস) সমমান দিতে কাজ করবে। সরকারের এমন উদ্যোগে ক্ষুব্ধ বিসএসসি প্রকৌশলীরা। 

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এভাবে বিএসসি ডিগ্রি দেয়া হলে দুর্বল মানের প্রকৌশলী তৈরি হবে। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ডিগ্রি না দিয়ে চার বছরের বিএসসি কোর্স দুই বছর করা যেতে পারে। 

জানা গেছে, এ বছরের মার্চের প্রথম দিকে শিক্ষামন্ত্রী ডিপ্লোমাধারী শিক্ষকদের মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পরামর্শ দেন। এরই আলোকে গত ১৫ এপ্রিল কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ১০ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করে। এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএসসি প্রকৌশলীরা। তারা বলেন, তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পৃথিবীর আর কোথাও অভিজ্ঞতা দিয়ে সনদ দেয়ার ঘটনা নেই। এর ফলে শিক্ষা খাতে আরো জটিলতা বাড়বে। 

মুবাশ্বির আলম নামে একজন প্রকৌশলী বলেন, এ কেমন সিদ্ধান্ত বুঝলাম না। কাজের অভিজ্ঞতায় ডিগ্রি দেয়া হবে। তাহলে যারা নার্সের কাজ করে কয়েক বছর পর তাদের ডাক্তার বানিয়ে দেয়া হবে? 

জোবায়ের হোসেন নামে একজন প্রকৌশলী ফেসবুকে বলেন, মন্ত্রী মহোদয়রা আজব একটি সুপারিশ করলেন, দুই বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিএসসি সমমান। পৃথিবীর আর কোথাও অভিজ্ঞতা দিয়ে সনদ দেয়ার সিস্টেম আছে কি-না জানা নেই। এমন সিদ্ধান্ত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারকে আরও অবহেলিত করবে। কিছু দিন পর মন্ত্রীরা আবার বলবেন, যেহেতু ডিপ্লোমা শেষে অভিজ্ঞতা নিয়ে বিএসসির সমমান পাচ্ছে তাহলে দশম গ্রেডের জবেও বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, কুয়েট ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির ছাত্ররা পরীক্ষা দিতে পারবে। এমন মগের মুল্লুক মার্কা সুবিধা আমি ও আমরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা চাই না, আমরা চাই বিএসসি কোর্সে আমাদের সময় কমিয়ে দুই বছর করা হোক।

এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এস এম মঞ্জুরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, এই সিদ্ধান্তটি খুবই দুঃখজনক। হঠাৎ করে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হতাশাজনক। বিষয়টিকে আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। ডিপ্লোমা ও বিএসসির কারিকুলামে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা মোট ১৪ বছর অধ্যয়ন করে থাকেন, কিন্তু বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা ১৬ বছর অধ্যয়ন করে থাকে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মান দুর্বল হয়ে যাবে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এরপর দুই বছর কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেই তাদের বিএসসি ডিগ্রি দেয়া ঠিক হবে না। ডিপ্লোমা যারা করেন তারা তো এক্সটা কিছু শিখছেন না। যা শিখেছেন এরই আলোকে কাজ করবেন। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে তারা সার্টিফিকেট পাবেন। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথ কাজ করেছেন কি-না? এ ধরনের বিষয়গুলো কে তদারকি করবে? এভাবে বিএসসি ডিগ্রি দেয়া হলে দুর্বল মানের প্রকৌশলী তৈরি হবে। এটি না করে বিএসসি কোর্স চার বছরের পরিবর্তে দুই বছর করা যেতে পারে। অর্থাৎ যারা চার বছরের ডিপ্লোমার পর দুই বছরের বিএসসির পড়াশোনা। ডিপ্লোমাতে যা পড়েছে, এখানে আরেকটু বেশি পড়বে। 

এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক ও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (কারিগরি) ড. নজরুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো কোনো মিটিং করিনি। শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে মিটিং করব। মিটিংয়ের আগে কোনো কিছুই বলা যাবে না। এখানে আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত থাকবে না। সবাই মিলে মিটিং করার পর বিষয়টি জানা যাবে। স্নাতক ডিগ্রিধারীদের বিরোধিতার ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে লেখা আছে— বিএসসি পাস সমমানের মর্যাদা। 

অর্থাৎ তারা ডিগ্রির মর্যাদা পাবে। আগে ডিপ্লোমা শেষ করা হলে তাদের এইচএসসি পাস বিবেচনা করা হতো। এখন দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তাদের ডিগ্রির মর্যাদা দেয়া হবে।

আরএস

Link copied!