মে ১০, ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
তীব্র গরম ও হঠাৎ ঝড়ের প্রভাব পড়েছে কাঁচা বাজারে। আমদানি কম থাকায় গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে বেড়েছে প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা।
রমজানের পর থেকে স্বস্তি নেই মাংসের বাজারেও। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজি মুরগিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহের দামে খাসি ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসও গত সপ্তাহের দাম ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছের দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে।
মাংসের দাম কুরবানির আগে কমার আশা দেখছেন না বিক্রেতারা। দাম বাড়ায় বিক্রি কমার কথা জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার রাজধানীর সূত্রাপুর, ধূপখোলা ও কাপ্তান বাজার এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রমজানের পর থেকেই চড়া মাংসের বাজার। মুরগির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭শ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৭০০।
ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা। গত সপ্তাহে ২০০ টাকা ছিল। পাকিস্তানি সোনালী কেজি প্রতি দাম ৪০০-৩৯০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৭০-৩৮০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি- ৩৮০ টাকা। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩৭০। হাইব্রিড পাকিস্তানি- ৩৬০ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গরুর দাম ৮০০ টাকা থেকে আর নামছে না। খাসির দামও সেই ১২০০ টাকাই আছে।
হাজী রুহুল আমিন ট্রেডার্সের মালিক রুহুল আমিন বলেন, মোকামে আমদানি কম। পাকিস্তানি মুরগি আমদানি আরও কম। গরমের কারণে অনেক বাচ্চা মারা গেছে। দাম কমার কোন আশা নেই। আমদানি স্বাভাবিক হতে এক থেকে দেড় মাস লাগবে।
একরাম মহাজনের দোকানে খাসি বিক্রি হচ্ছে, ১২০০ টাকা কেজিতে। তিনি বলেন, আমদানি কম থাকায় এখন দাম একটু বেশি। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হয়। আগে এ দিনে লাভ করতে পারতাম। এখন লস হয়। দাম কমার কোন ইঙ্গিত তিনি দিতে পারেননি। বরং বলেছেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করি। কিন্তু গত দুই-তিন বছরের মতো এতো এলোমেলো বাজার দেখিনি।
একটু দূরে বাদশা মিয়ার দোকানেও একই দরে খাসি বিক্রি হচ্ছে। বকরির দাম ৯০০-১০০০ টাকা। বাদশা মিয়া বলেন, কুরবানির আগে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কুরবানির পর দাম কমতে পারে।
চড়া সবজির বাজার
বৈরী আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়েছে ফসলের ক্ষেত। এরই প্রভাব পড়েছে আমদানি বাজারে। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে বেড়েছে, আলু, বেগুন, পেঁপে, কাচামরিচ, ধনিয়া পাতা, টমেটো, সব শাক, চিচিঙ্গার দাম।
গরিবের সবজি হিসেবে পরিচিত পেঁপের দাম সবচেয়ে চড়া। প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, লেবু হালি প্রতি ৩০ টাকা, কেপসিকাম ২৬০ টাকা, কুমড়ো ১ কেজি ৩০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, ফুলকপি মাঝার আকৃতি ৬০ টাকা, লাউ (ছোট) ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, কাচামরিচ ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পাতা কপি ৪০টাকা ও আলু ৫৫ টাকা।
সবজির দাম বাড়ার কারণ জানিয়ে কয়েকজন দোকানদার একই জবাব দেন। কাপ্তান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, চালান কম থাকায় বাজারে আগুন লাগছে। পেপের মতো সহজ জিনিসের দাম ১০০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে জিনিস প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।
ইকরাম সবজি বিতানের ইকরাম বলেন, বৃষ্টি ও গরমে ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আমদানি কম।
মসলা জাতীয় পণ্যর দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। আদা বেড়েছে ২০ টাকা, আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। রসুনের মধ্য দেশি রসুনের দাম বেড়েছে গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বিদেশি রসুন দাম ২২০ থেকে ২১০ টাকা।
তারেক হোসেন বলেন, পেঁয়াজ শুনলাম বিদেশ থেকে আসবে। দাম কমার কথা, এখন দেখি বেড়ে গেছে। আলু সিজনেই দাম কমেনি, এখন দাম কীভাবে কমবে? সামনে আরও বাড়তে পারে। দাম বাড়লে আমাদেরই লস। বিক্রি কমে যায়, লাভও কমে।
বেড়েছে মাছের দাম
দুই একটা মাছের দাম বাড়লেও অধিকাংশ মাছ আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে শুক্রবার হওয়ায় একটু বেশি দাম রাখার কথা বলেছেন দোকানদাররা।
তেলাপিয়া বড় ২৫০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ২০০ টাকা, পাঙাস মাঝারি ২২০ টাকা, ছোট ১৮০ টাকা। কই মাছ (মাঝারি) ২৩০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ টাকা, রুই মাছ কেজি ২ থেকে আড়াই কেজি ৩৫০ টাকা, ১ কেজি ২৫০-২৬০ টাকা। ছোট সাইজের চিংড়ি মাছ ৭০০ মাঝারি ৭৫০। কোরাল মাছ বড় ৮০০ টাকা ছোট ৭৫০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৭০০ টাকা।
হাবিব মিয়া বলেন, মাছের দাম বাড়েনি। শুক্রবার চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেশি নেই।
নাঈমুল/ইএইচ