বেলাল হোসেন ও সাহিদুল ইসলাম
মে ১৩, ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম
বেলাল হোসেন ও সাহিদুল ইসলাম
মে ১৩, ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম
এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি ভালো ফল করেছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড তো বটেই, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও চমক দেখিয়েছে তারা। মেয়েদের পাসের হার ছেলেদের চেয়ে বেশি। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। গতকাল রোববার গণভবনে ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর হাতে ২০২৪ সালের এসএসসির ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছর গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। এবার ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের হার ৮৪.৪৭ শতাংশ।
সার্বিকভাবে ১১ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সব বোর্ড মিলিয়ে মেয়েদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বিপরীতে ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলেও মেয়েরা এগিয়ে। ৯ বোর্ড মিলিয়ে মেয়েদের পাসের হার ৮৫ শতাংশ। বিপরীতে ছেলেদের পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। একই চিত্র দেখা গেছে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও। মাদ্রাসা বোর্ডে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়া মেয়েদের ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশই পাস করেছে। ছেলেরা পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মেয়েদের পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, যেখানে ছেলেদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৩.৭৭ শতাংশ। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৬, সিলেটে ৭৩ দশমিক ০৪, ময়মনসিংহে ৮৪ দশমিক ৯৭ ও যশোরে ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৬ এবং কারিগরিতে পাসের হার ৮১.৩৮ শতাংশ। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ছয় হাজার ৩৯৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৮। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৫। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৫। এর মধ্যে পাস করেছে দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬। কারিগরি বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ২২ হাজার ৫৩৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৯৯ হাজার ৭২১। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৭৮ জন। সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা এবং কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯৮ হাজার ৭৭৬ এবং ছাত্র ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দুই হাজার ৯৬৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সব পরীক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এমন প্রতিষ্ঠান ছিল দুই হাজার ৩৫৪টি। অর্থাৎ শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৬১৪টি। অন্যদিকে ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। গত বছর এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৪৮টি।
ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, যারা পাস করতে পারেনি, তাদের গালমন্দ করবেন না। গালমন্দ করলে ছেলেমেয়েরা সেটা সহ্য করতে পারে না। কিছু ঘটনা তারা ঘটিয়ে ফেলে— এমনটি নিশ্চয়ই অভিভাবকরা চাইবেন না। তারা চাইবেন না তাদের সন্তান হারাতে। সেজন্য তাদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখুন। কেন সে পারল না— সেটা খুঁজে বের করে তার সে সমস্যা দূর করতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরও মনোযোগী করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ছেলেমেয়েদের বেশি বেশি বললে তাদের পড়ার আগ্রহটা হারিয়ে যায়। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে তাদের পড়ার আগ্রহটা এমনিতেই তৈরি হয়। আর আজকের ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েদের এমনিতেই মেধা বেশি। কাজেই সেই মেধাবিকাশের সুযোগটা দিতে হবে।
মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হারে ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে কেন— এর কারণ খুঁজতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, এটা আমরা জানি। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া কখনো উন্নতি করা যায় না। সেজন্য আমাদের সরকার সব সময় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিক্ষা খাতে আমরা যে ব্যয় করি, এটাকে আমরা ব্যয় বলি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন, এটা বিনিয়োগ। শিক্ষায় আমরা বিনিয়োগ করি।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত ১২ মার্চ। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৩ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছর ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ছয় হাজার ৮৭৯ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৪২ হাজার ৩১৪; কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন।
খাতা চ্যালেঞ্জ করা যাবে আজ থেকে
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। প্রকাশিত ফলাফলে কারো কাঙ্ক্ষিত ফল না এলে সে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বা খাতা চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। এ কার্যক্রম শুরু হবে অঅজ সোমবার থেকে, চলবে ১৯ মে পর্যন্ত।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, আগামীকাল সোমবার (আজ) থেকে পুনর্নিরীক্ষণ আবেদন শুরু হবে, চলবে ১৯ মে পর্যন্ত।
তিনি জানান, ফলাফলে কেউ সংক্ষুব্ধ বা অসন্তুষ্ট হলে সে চাইলে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবে। অনলাইনে মাধ্যমে ঘরে বসেই এ আবেদন করা যাবে। পরে বোর্ড তার খাতা যাচাই বাছাই করে দেখে আবেদন নিষ্পত্তি করবে।
শুধুমাত্র টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল ফোন থেকে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC <Space> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <Space> রোল নম্বর <Space> বিষয় কোড লিখে ঝবহফ করতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
ফিরতি এসএমএসে আবেদন বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে, তা জানিয়ে একটি পিন দেয়া হবে। এতে সম্মত থাকলে মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC <Space> YES <Space> PIN <Space> Contact Number (যে কোনো অপারেটর) লিখে ঝবহফ করতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
ফল পুনর্নিরীক্ষণে ক্ষেত্রে একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কমা (,) দিয়ে বিষয় কোড আলাদা লিখতে হবে। যেমন, ঢাকা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিষয়ের জন্য টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখবে RSC <Space> Dha <Space> Roll Number <Space) ১০১, ১০২, ১০৭, ১০৮। ফল পুনর্নিরীক্ষণে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেয়া হবে।
পুনর্নিরীক্ষণে খাতার চারটি বিষয় দেখা হয়
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনর্নিরীক্ষণ করলে একজন শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন করা হয় না। পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো, উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এসব পরীক্ষা করেই পুনর্নিরীক্ষার ফল দেয়া হয়। এই চারটি জায়গায় কোনো ভুল হলে তা সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়।