Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪,

সওজ ম্যাজিকে বদলে গেছে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার চিত্র

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

মে ২৭, ২০২৪, ১২:৩৯ এএম


সওজ ম্যাজিকে বদলে গেছে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার চিত্র

টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সড়ক উন্নয়নে অভূতপূর্ব সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ফলে ক্রমশ বদলে যাচ্ছে দেশের সড়ক যোগাযোগের দৃশ্যপট। বদলে যাওয়া সড়কে বদলে গেছে দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে শহরতলীর পরিবেশ। টেকসই সড়ক ও জনপথ নিশ্চিত করতে সরকারের নির্দেশনায় কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সামপ্রতিক সময়ে দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। সরকার সড়ক ও জনপথ খাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে সড়ক প্রশস্তকরণের পাশাপাশি ছোট-বড় সেতু-ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। দক্ষিণাঞ্চলে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে পদ্মা সেতু। 

এছাড়া ছয় লেনের কালনা সেতু, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, পায়রা সেতু, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ ছোট বড় অসংখ্য সেতু-কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে মোট বাজেটের প্রায় ১১.২ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে সরকার যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২১.৯ শতাংশ বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও সড়কে যাত্রীদের স্বস্তি ফেরাতে পরিকল্পনামাফিক কাজ করার। সে অনুযায়ী কাজ করে চলেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সড়ক উন্নতিকরণে নিয়মিতই বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করছে সওজ। দেশের এই সড়ক উন্নয়নের বদলে যাওয়া চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকৌশলীরা। প্রকৌশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থা নিয়েছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। এসব কর্মকাণ্ডে সওজ প্রকৌশলীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  ফলে দক্ষ প্রকৌশলীদের চেষ্টায় যোগাযোগব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে একের পর এক সাফল্য।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সড়ক নেটওয়ার্কের নতুন সড়কে সেতু নির্মাণ, মিসিং লিংকে নতুন সেতু নির্মাণসহ বিদ্যমান জরাজীর্ণ ও সরু সেতু প্রতিস্থাপনের নিমিত্ত মানসম্পন্ন নতুন সেতু নির্মাণ করেছে। ২০০৯ থেকে বর্তমান মেয়াদে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিভিন্ন মহাসড়কে দেড় সহস্রাধিক সেতু ও প্রায় আট হাজার কালভার্ট নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু (তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু), বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর ওপর নির্মিত আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত তিস্তা সেতু, গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত শেখ লুৎফর রহমান সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, মেঘনা নদীর ওপর দ্বিতীয় মেঘনা সেতু, কুমিল্লায় গোমতী নদীর ওপর দ্বিতীয় গোমতী সেতু, মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আচমত আলী খান সেতু, পটুয়াখালীতে আন্ধারমানিক নদীর ওপর শেখ কামাল, সোনাতলা নদীর ওপর নির্মিত শেখ জামাল, শিববাড়িয়া নদীর ওপর নির্মিত শেখ রাসেল সেতু, নরসিংদী জেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর চরসিন্দুর সেতু, পিরোজপুরে কঁচা নদীর ওপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতু, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-বেনাপোল মহাসড়কে নড়াইল ও গোপালগঞ্জ জেলার সীমানায় মধুমতি নদীর ওপর মধুমতি সেতু, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উল্লেখযোগ্য।  

দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং প্রতিবন্ধকহীন সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপনে অভাবনীয় সাফল্যের গল্পে যুক্ত হয় এই ‘শত সেতু’র উদ্বোধন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় মহাসড়কে এসব সেতু নির্মাণের ফলে সড়ক নেটওয়ার্ক হয়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর টেকসই, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য; সহজতর এবং আরামদায়ক হয়েছে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ সরাসরি স্থাপনের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় ছিল প্রমত্তা পদ্মা। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্ব ও দূরদৃষ্টির কারণে কোনো ধরনের বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়াই বাংলাদেশ সরকারের ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মিত করে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে, চেষ্টা হচ্ছে শিল্পকারখানা তৈরির। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে। সওজের প্রচেষ্টায় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটন এলাকা কুয়াকাটার চিত্রও বদলে গেছে। এক সময় ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে এক দিন কিংবা তারও বেশি সময় লেগে যেতো ফেরি পারাপার হতে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে সবগুলো নদীর ওপরই নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। ফলে যাতায়াতের সময় কমে এসেছে কয়েকগুণ। ঢাকা থেকে কক্সবাজার মহাসড়কটিও প্রশস্ত করা হয়েছে। 

দেশের প্রতিটি মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। দেশে সড়ক তৈরি, উন্নতিকরণ ও সেতুসমূহ নির্মাণের ফলে দেশের সাধারণ মানুষের শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার প্রাপ্যতা সহজতর হচ্ছে, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের বিপণনও সহজতর ও সাশ্রয়ী হচ্ছে, দেশীয় পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটছে, শিল্প খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আমূল পরিবর্তনে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, বাড়ছে আয়ের সুযোগ। ফলে দারিদ্র্যতা হ্রাসের ফলে জনমানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটছে।
 

Link copied!