Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

উপকূলীয় কৃষকের মাথায় হাত

বেলাল হোসেন

বেলাল হোসেন

মে ৩১, ২০২৪, ১২:১১ এএম


উপকূলীয় কৃষকের মাথায় হাত
  • ঘূর্ণিঝড়ে পৌনে দুই লাখ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি
  • মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি প্রায় হাজার কোটি টাকা

প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে উপকূলবাসী। এবারের ঘূর্ণিঝড় রেমালে তছনছ উপকূল। আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে আশায় বুক বেঁধেছিলেন কৃষক-খামারিরা; কিন্তু রেমালের ভয়াল থাবা সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। দক্ষিণ-পূর্বের কক্সবাজার থেকে শুরু করে সবচেয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের সাতক্ষীরা পর্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত থেকে রক্ষা পায়নি উপকূলের কোনো জেলাই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রেমালের আঘাতে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৪ জন। এ সময় এক লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮টি বাড়িঘর আংশিক এবং ৪০ হাজার ৩৩৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।  

এবার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে। রেমাল ও তার প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে এক লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অপরদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষিতে রেমালের প্রভাব পড়েছে ৪৮টি জেলায়। এর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী বরগুনা, ভোলা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর। এর মধ্যে ১০ হাজার ৮৪৩ হেক্টরের আউশ বীজতলা, ২১ হাজার ৪৩৪ হেক্টর আউশের জমি, সাত হাজার ৭৩০ হেক্টর বোরো জমির ধান, চার হাজার ৮২৬ হেক্টরের বোনা আমন, ৫২ হাজার ১৯০ হেক্টরের গ্রীষ্মকালীন সবজি, ২৯ হাজার ৭৪৯ হেক্টরের পাট, সাত হাজার ৫৩৬ হেক্টরের তিল, তিন হাজার ৫০৭ হেক্টরের মুগ এবং দুই হাজার ৪৪৪ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলের মধ্যে আমের জমি চার হাজার ৭০৮ হেক্টর, লিচুর এক হাজার ৫৭৫ হেক্টর এবং সাত হাজার ৬১৩ হেক্টর জমির কলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষয়ক্ষতি : মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের চার বিভাগের ৮৬ উপজেলায় মৎস্যসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৯৭৭ কোটি ৫২ লাখ ৭২ হাজার টাকার। এসব উপজেলায় ৯৭ হাজার ২৮২টি পুকুর ও ৪৮ হাজার ৭৬৯টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চার হাজার ৭১৭টি কাঁকড়া ও কুচিয়া খামার। এসব উপজেলায় ২৩ হাজার ৭৬২ টন মাছ, সাত হাজার ৯১৬ টন চিংড়ি, এক হাজার ৯৩৭ টন পোনা, ২৪৮ টন কাঁকড়া ও কুঁচিয়া এবং ৫৮৮ লাখ পিএলের (পোস্ট লার্ভি) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলাগুলোতে মাছের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। চিংড়িতে ক্ষতির পরিমাণ ৩৩৯ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন পোনায় ক্ষতি ১০৬ কোটি ৯৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কাঁকড়া ও কুঁচিয়ায় ক্ষতি ২১ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর পিএলের ক্ষতি ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আক্রান্ত চার বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনা; চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর  এবং ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর।  এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের তিন বিভাগের ১২ জেলার ৬২ উপজেলায় প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৬২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামার তিন হাজার ২৫২টি ও হাঁস-মুরগির খামার ১০ হাজার ১৫৭টি। রেমালের আঘাতে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে গরু মারা গেছে ৩০৪টি, মহিষ ৩৮৭টি, ছাগল ৬৮৬টি, ভেড়া ৬৯৬টি। এ ছাড়া দুই লাখ ৩৮ হাজার ২৩৮টি মুরগি ও ২৭ হাজার ৯০৮টি হাঁস মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দানাদার পশুখাদ্য, খড় ও ঘাস।
উল্লেখ্য, গত ২২ মে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেয়া হয় ‘রেমাল’। 

রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এর প্রভাবে গত রোববার বিকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়। পরদিন সকাল থেকে সারা দেশেই বৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে দুর্বল হয়ে আসে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে বানের জলে ভেসে, দেয়াল ও গাছচাপায়, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে প্রাণ গেছে অন্তত ১৬ জনের।
 

Link copied!