Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

জুন ৬, ২০২৪, ১১:২৩ পিএম


অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্থনীতির এমন জটিল পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে প্রশান্তি দিতে জাতীয় সংসদে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শিরোনামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। পরে যদিও লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তাতেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরজুড়েই মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের বেশি। বিদায়ী মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি। 

প্রস্তাবিত বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদে ২৫তম আর দেশের ৫৩তম জাতীয় বাজেট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সংসদে পাস হয়ে এই বাজেট আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। জানা যায়, বিশাল অঙ্কের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল হিসেবে ব্যাংক খাত বেছে নিয়েছে সরকার। 

বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের ভরসা ব্যাংক খাত : বাজেটে ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ নেবে। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ হাজার ১০৫ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এটি বাড়িয়ে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা ঠিক করা হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল নিয়ন্ত্রণে কমল ২৭ পণ্যের উৎসে কর : বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭ প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০ পণ্য।

বাজেটে আয়কর সীমা অপরিবর্তিত : প্রস্তাবিত বাজেটে আয়করের দিকে সবার নজর থাকে। বিশেষ করে যারা চাকরিজীবী তাদের জন্য আয়কর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা এবারের বাজেটে বাড়েনি। আগের মতোই বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বরং ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ শতাংশ হারে নতুন একটি কর স্তর তৈরি করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করে তিনি কর স্তর পুনর্বিন্যাস করারও প্রস্তাব করছেন। এখন ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ করহারের পর উচ্চস্তরে আরেকটি করহার এসেছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার পর প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। বাকি অর্থের ওপর কর বসবে নতুন ৩০ শতাংশ হারে। এ ছাড়া মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো চার লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা ও প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা হবে। আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা-মাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে। দেশে যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান, তখন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানো হয়েছিল। গত মে মাসেও মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের ছিল কাছাকাছি। টানা ১৫ মাস ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর রয়েছে। নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে খাদ্য কিনতে আয়ের বেশির ভাগ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপর।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা : ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে এই হার শুরুতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও পরে তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ তাদের পূর্ভাবাসে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত এপ্রিল মাসে আইএমএফ এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে।
ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে : আগামী অর্থবছরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ঋণের সুদ মিলিয়ে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ সুদ মোট বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ। এর মধ্যে দেশি অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদই বেশি। এর পরিমাণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে এক লাখ পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়। সংশোধিত বাজেটকে ভিত্তি ধরলে সুদ ব্যয়ের বরাদ্দ সাত হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। এর মধ্যে সুদ বাবদ বরাদ্দ করা এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হলো মোট বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ।

শর্তসাপেক্ষে কমবে করপোরেট কর : শর্তসাপেক্ষে এবারও করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, আগের মতো উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে জড়িত পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত শিল্পের কর কমানো হচ্ছে। এ জাতীয় কোম্পানির কর সাড়ে ২৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বাকি সব খাতের কর অপরিবর্তিত থাকছে। তবে, খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শর্তের বেড়াজালে বন্দি থাকায় করপোরেট কর কমানোর সুবিধা শিল্প খাত ভোগ করতে পারবে না। শিল্পের জন্য প্রয়োজন শর্তহীন কর হ্রাসের সুবিধা।

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধা : বাজেটে বিদেশফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ তহবিল থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৯ জন ঋণগ্রহীতাকে ২৯৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। 

ভাতা পাবেন আরও ১০ লাখ মানুষ : সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছে আরও ৯ লাখ ৮১ হাজার ৬১ জন। নতুন করে পাঁচ লাখ প্রতিবন্ধী ভাতা, এক লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ জনের মাতৃত্বকালীন ভাতা, দুই লাখ বয়স্ক ভাতা, দুই লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, পাঁচ হাজার ৭৪৯ তৃতীয় লিঙ্গ ও ৯০ হাজার ৮৩২ জন সমাজের অন্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে ভাতার আওতায় আনা হবে।

কমছে নির্মাণ যন্ত্রাংশ : রড, বার ও এঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে লোহাজাতীয় পণ্যের দাম কমতে পারে। সুইস-সকেটের দাম কমতে পারে। কারণ দেশে উৎপাদিত সুইস-সকেট, হোল্ডার উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে।

কমছে ডায়ালাইসিস খরচ : স্বাস্থ্য খাতের জন্য সুখবর হলো কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসে ব্যবহূত উপকরণ ফিল্টার ও সার্কিটের ওপর আমদানি শুল্ক ৯ শতাংশ কমানো হয়েছে। এর ফলে কমবে ডায়ালাইসিস খরচ।

করমুক্ত থাকছে আইসিটির ১৯ খাত : প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তির (আইসিটি) ১৯টি খাত করমুক্ত থাকছে। দেশীয় ব্যবসা থেকে আয় ও ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বল্পসময়ের মধ্যে ক্যাশলেস করার শর্তে এ খাতগুলো করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। খাতগুলো হলো— এআই বেজড সলিউশন ডেভেলপমেন্ট, ব্লকচেইন বেজড সলিউশন ডেভেলপমেন্ট, রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার অ্যাজ অ্যা সার্ভিস, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ডিজিটাল ডাটা এনালাইটিকস ও ডাটা সাইয়েন্স, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও সার্ভিস আইটি সহায়তা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস, ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা অ্যান্ট্রি ও প্রসেসিং, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও ই-পাবলিকেশন, আইটি ফ্রিল্যান্সিং, কল সেন্টার সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং। 

দাম কমছে যেসব পণ্যের : প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নবিত্ত মানুষের কথা বিবেচনা করে কর কমানো হয়েছে বেশকিছু পণ্যের। কমতে পারে গুঁড়ো দুধ, ল্যাপটপ ও চকলেটের দাম। বাজেটে প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে বাজারে গুঁড়ো দুধের দাম কমবে। এছাড়া চকলেট আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ কমছে। ফলে সব বয়সিদের পছন্দের চকলেটের দাম কমবে। ল্যাপটপ থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে সবমিলিয়ে পণ্যটিতে সাড়ে ১০ শতাংশ শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ আগের ৩১ শতাংশের পরিবর্তে ২০ দশমিক ৫০ শুল্ক-কর দিতে হবে। দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের সিকেডি ইঞ্জিনের পার্টসের আমদানি শুল্ক কমছে। এতে দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে।

দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের : নতুন বাজেটে বেশকিছু পণ্য ও সেবায় শুল্ক-করারোপ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও সিগারেটের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানো হতে পারে। তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। এছাড়া প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরামূল্য ৪৮ টাকা ও একই পরিমাণ গুলের মূল্য ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের পান-জর্দা খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের ব্যয় বাড়বে। বাসাবাড়িতে ব্যবহূত পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদন হওয়ায় পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ে অনেকে বাসায় এলইডি বাল্ব ব্যবহার করেন। এলইডি বাল্ব এবং এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশে ফ্রিজ-এসি উৎপাদনে ব্যবহূত কমেপ্রসার ও সব ধরনের উপকরণের ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাই এসি ও ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে। এলআরপিসি তার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। এর ফলে নির্মাণ খাতে খরচ বাড়বে।

এছাড়া শুল্ক বাড়ানোর কারণে গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনে ব্যবহূত কিট, সিলিন্ডার ও অন্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, শিল্পে ব্যবহূত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল যথা অপরিশোধিত ভোজ্যতেল, শিরিষ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহূত টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, প্যাট চিপস উৎপাদনে ব্যবহূত ইথাইলিন গ্লাইকল, পানির মোটর উৎপাদনকারী অ্যালুমিনিয়াম ইনগট, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক, এলইডি টেলিভিশন উৎপাদনে ব্যবহূত এলইডি ভাল্ব, বাতি উৎপাদনে ব্যবহূত অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় প্রভৃতির দাম বাড়তে পারে।

আওয়ামী লীগের ২৫, দেশের ৫৩তম বাজেট : স্বাধীনতা-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ওই বাজেট পেশ হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ওই দিন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, অর্থাৎ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর আরও দুবার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ, সেটি সবশেষ দাঁড়ায় এক হাজার ৮৪ কোটি টাকার। ১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনেই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতই আওয়ামী লীগের হয়ে টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-১৯৮৩ সালে, এরশাদের শাসনামলে। সেটার আকার ছিল চার হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
 

Link copied!