Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

আধুনিকতায় প্রাণিসম্পদ খাত

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

জুন ১২, ২০২৪, ১২:৪২ এএম


আধুনিকতায় প্রাণিসম্পদ খাত

দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে প্রাণিজ ও দুগ্ধজাত পণ্যমূল্য। দাম বাড়লেও খামারি পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য হারাতে হচ্ছে সিন্ডিকেটের থাবায়। এ অবস্থা থেকে অনেকটাই উত্তরণের পথে প্রাণিসম্পদ খাত। ডেইরি হাব, ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার, স্লটার হাউস, কাউ শেডের মতো আধুনিক সেবা কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন থাকায় খামারিদের মধ্যে আশার সঞ্চার হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপদ ও মানসম্মত প্রাণিজ এবং দুগ্ধজাত পণ্য গ্রাহক পর্যায়ে খুব সহজেই পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আধুনিক কসাইখানা বা স্লটার হাউস তৈরির কাজ চলছে। স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে প্রাণিজ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা সহজকরণে যেমন ন্যায্যমূল্য পেতে সুবিধা হবে খামারিদের, তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য পাওয়ায় সুযোগ তৈরি হবে ভোক্তা পর্যায়ে। 

প্রাণিসম্পদ খাতের এসব উন্নয়নে কাজ করছে লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ‘এলডিডিপি’ বা ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের এই উদ্যোগকে খামারিরা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন। ২০১৯ সালে শুরু হয় এ প্রকল্পের কাজ। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মার্কেট লিংকেজ, ভ্যালু চেইন উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে প্রকল্পটি। এছাড়া নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন ও ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য ভোক্তা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য বিপণনের ব্যবস্থা এবং দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরি করা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকেও যেন শিশুদের নিয়মিত দুধ খাওয়ানো হয়, এ জন্য বিভিন্ন কৌশলভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রকল্পটি। এতে দুগ্ধখামারিরা যেমন লাভবান হতে পারেন, তেমনি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা করবে। 

প্রকল্পের মাধ্যমে দুধের বাজারজাতকরণ এবং দুধপানের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পের উদ্যোগে স্কুলে দুধপান করা শিশুদের সঙ্গে দুধপান না করা শিশুদের মেধা ও শারীরিক উন্নতির পার্থক্য অভিভাবকদের কাছে প্রচার করতে চায় এলডিডিপি। এতে সহজেই শিশুদের দুগ্ধপানে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে শিশুদের স্কুলে আসার প্রবণতা বাড়ার পাশাপাশি একটি ভোক্তা শ্রেণিও তৈরি হচ্ছে বলে জানান প্রকল্পটির কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আব্দুর রহিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘খামারিদের কষ্ট লাঘবে ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। দানাদার খাবারের চেয়ে ঘাসের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতেও কাজ করছে এলডিডিপি। পশুকে দানাদার খাবারের পরিবর্তে ঘাস খাওয়ালে খরচ যেমন কমে, তেমনি পুষ্টিগুণও বাড়ে। এ লক্ষ্যে খামারিদের মধ্যে প্রচার কার্যক্রমও পরিচালনা করছে এলডিডিপি।’

গ্রামাঞ্চলে পশুপাখি পালন করে বাড়তি আয় করেন অনেকেই। অনেকে আবার বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন বড় খামার। ব্যক্তি উদ্যোগের এসব খামারে পালিত পশুর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে খামারির কপালে পড়ে চিন্তার ভাঁজ। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উপজেলা শহরের দূরত্বের কারণে এ চিন্তা বাড়ে দ্বিগুণ। খামারিদের চিন্তামুক্ত করতে ও প্রাণিসম্পদকে আরও উন্নত করতে ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক তৈরি করেছে এলডিডিপি। খামারিরা ফোন করলেই মিলছে জরুরি চিকিৎসাসেবা। এসব ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসক এবং দক্ষ কর্মীরা ক্লিনিক-ভ্যানে করে রুটিন করে গ্রামগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শনে গিয়ে পশুপাখির জন্য ওষুুুধ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এছাড়াও পশুর স্বাস্থ্যগত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে প্রাণিসম্পদ খাতে আমূল পরিবর্তন ঘটছে। 

পশু জবাই, প্রক্রিয়াজাত ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে স্বাস্থ্যসমত মাংস বিপণনের সুযোগ তৈরি করতে এলডিডিপির মাধ্যমে আধুনিক কসাইখানা বা স্লটার হাউস নির্মাণ করছে সরকার। এতে পশু জবাই ও প্রক্রিয়াজাতে মাংস নষ্ট হওয়ার পরিমাণ কমার পাশাপাশি হাইজেনিন মেইন্টেন হওয়ার সুযোগ মিলছে। অপরিচ্ছন্ন জায়গা থেকে সুন্দর পরিবেশে পশু জবাই করার সুযোগ তৈরি হলে মাংস ক্রয়ে ক্রেতার আগ্রহ বাড়ার পাশাপাশি তৈরি হবে আস্থাও। জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতেও এলডিডিপির উদ্যোগ নজর কেড়েছে সবার। মাছ-মাংস বিক্রির ওয়েট মার্কেট উন্নয়নে প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রদান করা হচ্ছে সোলার প্যানেল।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আব্দুর রহিম আমার সংবাদকে বলেন, জনবহুল এলাকাগুলোতে আধুনিক স্লটার হাউস তৈরি করা হচ্ছে। এখানে পশু জবাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণে স্বাস্থ্যসম্মত এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ডেইরি হাব, ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, হাইজেনিন মেইনটেনের জন্য বিভিন্ন ক্লিনিং টুলস প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া খামারিদের আর্থিকভাবেও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
 

Link copied!