ইমারন খান, ঢাকা
জুলাই ৫, ২০২৪, ০৯:২২ পিএম
ইমারন খান, ঢাকা
জুলাই ৫, ২০২৪, ০৯:২২ পিএম
নানা অজুহাতে জনসাধারণের নাগালের বাইরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও বন্যা, বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েই চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের কাঁধে বাড়তি খরচের চাপ। নাভিশ্বাস পরিস্থিতি নিম্ন আয়ের মানুষের।
পেঁয়াজ হাঁকিয়েছে সেঞ্চুরি, ৮০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি। কেজি প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৪০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, হাতিরপুল কঁচাবাজার ও পলাশী বাজারে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, করলা প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৫০থেকে ৬০ টাক। পেঁপে গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে, যা এ সপ্তাহে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
একইভাবে বরবটি ৬০-৭০ টাকা থেকে বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। গোল বেগুন ১২০ টাকা এবং লম্বা বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অনুরূপভাবে লতি ৫০-৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
সবজির দাম বাড়ার পেছনে টানা বৃষ্টি ও বন্যাকে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবজি ব্যবসায়ী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম তাই কাঁচা মালের দাম একটু বেশি। আড়ত থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হয় এজন্য বিক্রিও হয় বেশি দামে।
তবে ব্যবসায়ীদের এসব কথাকে দুর্বল অজুহাত হিসেবে দেখছেন সাধারণ ক্রেতারা। বাজারে আসা সোহেল নামের একজন ক্রেতা বলেন, বৃষ্টি, বন্যা একটা উসিলা মাত্র ভরা মৌসুমেও কোনো সবজির দাম কমে না।
বাজারে দেখা গেছে, ঝাল বেড়েছে কাঁচা মরিচের, কোয়ালিটি অনুযায়ী বাজারে কাঁচা প্রতিকেজি কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহ জুড়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকা ছিল। গেল সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম।
এদিকে, টানা অস্থিরতা দেখা গেছে আলুর বাজারেও। এ নিত্যপণ্যটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে আলুর কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে দাম আরও ৫ টাকা বেড়েছে। গেল বছরেও এ সময়ে আলুর কেজি ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে আলুর দাম। শসা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এছাড়া কাকরোলের কেজি ৮০ থেকে ১০০, পটল ও ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৭০, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গাজরের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ও টমেটো ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এছাড়া দেশি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে। গেল সপ্তাহেও প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৯০ টাকা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা আমার সংবাদকে বলেন, টমেটো কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। আলু ৭০ টাকা, বরবটি, করলার দাম ১২০ টাকা কেজি। এ যেন মগের মুল্লুক। এত দামে সবজি কিনে খাওয়া সাধারণ ও মধ্যবিত্তদের জন্য অসাধ্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা দরে। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় কেনা যাচ্ছে।
গরুর মাংসের কেজি কোথাও ৭৫০ কোথাও ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্যপণ্যগুলো আগের চড়া দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সপ্তাহজুড়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।
গেল কয়েকদিন যাবত মাছের বাজারও বেশ চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পাবদা বিক্রি ৫০০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, কাতল প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, কই প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, গুলসা প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, টেংড়া প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বড় বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় আইড় মাছ প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমার সংবাদকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে এবং জীবনমান দিনদিন কমছে।
এদিকে খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি দেশি বাসমতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, মাঝারি মানের বিআর ২৮ ও ২৯ চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা ৫৮ থেকে টাকা ও মোটা হাইব্রিড ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, আড়তে চালের দাম বেশি তাই আমাদেরও কিছুই করার নাই, বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করি।
চালের দাম কেন বৃদ্ধি পেয়েছে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম আমার সংবাদকে বলেন, ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই চালের দামও আগের থেকে কিছুটা বাড়ছে। এছাড়া সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন তিনি।
ইমরান/ইএইচ