Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪,

আমার সংবাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাজউক চেয়ারম্যান

ঢাকাকে স্মার্ট শহর করতে দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

জুলাই ১০, ২০২৪, ১২:০৬ এএম


ঢাকাকে স্মার্ট শহর করতে দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা

ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক। রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার এর আগে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে রাজউক চেয়ারম্যান হিসেবে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, নতুন প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সেবা কার্যক্রম আধুনিকায়ন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক 

আমার সংবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক কেএম ইয়ামিনুল হাসান আলিফ।

আমার সংবাদ : রাজউককে আরও এগিয়ে নিতে আপনাদের পরিকল্পনা কি?

মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : রাজউককে এগিয়ে নিতে নানাবিধ কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে ভবনের নির্মাণ অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভবনের স্থাপত্য নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত, প্লাম্বিং ও ইলেকট্রোমেকানিক্যাল নকশা যাচাইয়ের সক্ষমতা অর্জনে রাজউক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং বিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সব আবেদন নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ইমারত নির্মাণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রাজউকের রয়েছে। রাজউক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য সব আবেদন বিলপ্তি, পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। নগর উন্নয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অগ্নিদুর্ঘটনা রোধকল্পে রাজউকের একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। 

আমার সংবাদ : আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিবর্তনকে সামনে রেখে ঢাকার পরিবেশগত উন্নয়নে আপনাদের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন... 

মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৩ নং লক্ষ্যে সব দেশে জলবায়ু-সম্পৃক্ত ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিঘাত সহনশীলতা ও অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় নীতিমালা, কৌশল ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কর্মব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তির প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। এসব লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজউকও তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজউক কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদিত ভবনের নকশায় প্রতি কাঠায় একটি গাছ রোপণের শর্তারোপ করা হচ্ছে।

নির্মাণকাজে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিতে রাজউক কর্তৃক পরিচালিত মোবাইল কোর্টসমূহের মাধ্যমে নির্মাণ এলাকায় চটের বস্তা দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের চারপাশ ঘিরে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যেন বায়ুদূষণ সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। এছাড়াও রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী যেন না রাখা হয়, তা নিশ্চিতকল্পে নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধামে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

আমার সংবাদ : রাজউকের সেবা ডিজিটালাইজ করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি কতদূর এবং কি ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে? 

মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জাতি গঠনকে সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে রাজউক ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেমের (ইসিপিএস) মাধ্যমে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদান এবং ইমারত নির্মাণ অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। এছাড়াও রাজউকের অনুমোদিত সব নকশার আর্কাইভ ডিজিটালাইজ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

ভবনের ব্যত্যয় রোধে ওু যথাযথ মনিটরিংয়ের স্বার্থে রাজউকের অধিভুক্ত এলাকায় সব ইমারতের জিআইএস-ভিত্তিক ডেটাবেইজ তৈরির পরিকল্পনা রাজউকের রয়েছে। বর্তমানে জাইকার সহযোগিতায় ডিসিকিউআর প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভবনের কাঠামোগত নকশা অনলাইনে জমা নেয়ার পাশাপাশি যযাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সক্ষমতা অর্জনের জন্য রাজউক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

আমার সংবাদ : রাজউকের বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?

মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত তদন্ত কার্যক্রম চলছে। অনেকের দপ্তর পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া বিধি মোতাবেক অনেককে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। 

আমার সংবাদ : রাজউককে আরও গতিশীল ও আস্থাশীল জায়গায় নিতে চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার মতামত কী।

মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প আমরা শেষ করেছি। যেগুলো অসমাপ্ত আছে, সেগুলো শেষ করার জন্য যাবতীয় কাজ চলছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান, সেবা ডিজিটাইলজেশনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চালু আছে।

আমার সংবাদ :  উচ্ছেদ অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যা বেশি মোকাবিলা করেন?

মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : রাজউক অননুমোদিত ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং অনুমোদিত ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় রোধকল্পে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এতে জনমনে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি ভবন নির্মাণে ব্যত্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি এবং দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে। এছাড়াও অনেক সময় মোবাইল কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স পাওয়া যায় না। এসব কারণে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়।

আমার সংবাদ :  নতুন কোনো প্রকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা আছে কি-না।

মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : আমাদের অনেকগুলো প্রকল্প আছে। নতুন প্রকল্প অনেক নিচ্ছি আমরা, বিশেষ করে পূর্বাচল সচল করার জন্য। বেশ কয়েকটি ফাইভ স্টার হোটেল, গলফ গ্রাউন্ড, অফিস, কনভোকেশন সেন্টার, কাঁচাবাজার, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। উত্তরাতেও অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি আমরা। মেট্রো স্টেশনে সহজে যেন মানুষ আসতে পারে এবং চলে যেতে পারে, এজন্য অনেক স্থাপনা ও রাস্তাঘাট ঠিকঠাক করতে হচ্ছে। 

আমার সংবাদ : ধরে নিন আপনি রাজউক চেয়ারম্যান নন বরং এ নগরের একজন সাধারণ নাগরিক। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাজউকের বর্তমান কার্যক্রমে কি আপনি সন্তুষ্ট? রাজউকের বর্তমান কার্যক্রম কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার : আসলে রাজউকের যে কার্যক্রম, এখন নয় বরং সব সময়ের জন্য, আমরা যে বলি সবকিছু চেঞ্জ করে ফেলব— এটা রাজউক একা কখনো সম্ভব করতে পারবে না। এখানে সরকার সম্পৃক্ত, ঢাকাবাসী সম্পৃক্ত। আমরা চাচ্ছি ঢাকা শহর সুন্দর হোক, প্রশস্ত রাস্তা হোক। ৭৪ শতাংশ রাস্তা আট ফিট। যেটা মিনিমাম হওয়া উচিত ২০ ফিট। আমরা চাই ২০ ফিট করতে। কিন্তু যারা বাস করছেন, তারা একটুও জায়গা ছাড়তে চান না। সবাই চান তার বাড়িটা বড় হোক। আর এটাই বাস্তবতা। 

রাজউক যা কাজ করছে বা করবে, আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো করছে। আমি যে  ব্যক্তিগতভাবে অনেক খুশি, সেটা আমি বলব না। তবে সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে; তাহলেই ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে, স্মার্ট সিটি করা যাবে।
 

Link copied!