Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

তিতাস গ্যাসের সাফল্যের কাণ্ডারি হারুনুর রশীদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১৫, ২০২৪, ১১:২৯ পিএম


তিতাস গ্যাসের সাফল্যের কাণ্ডারি হারুনুর রশীদ

একটি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করে সেই দেশের জ্বালানি খাতের ওপর। গত প্রায় দুই দশক আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় দেশে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে তার অন্যতম কারণ জ্বালানি সক্ষমতা। বাংলাদেশে জ্বালানি সক্ষমতার অন্যতম অংশীদার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। 

দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর তীরে বিশাল গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তৎকালীন সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক ১৪ ব্যাস সম্পন্ন ৫৮ মাইল দীর্ঘ তিতাস-ডেমরা সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলে ১৯৬৮ সালের ২৮ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের মধ্য দিয়ে কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের বাসায় ১৯৬৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়। দীর্ঘ পথ চলায় একটি অগ্রগামী জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিতাস গ্যাস তার সেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থাভাজন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। 

বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে নিহত হওয়ার ছয় দিন আগে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে নিরাপদ করে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে ৯ আগস্ট পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলা) নামমাত্র মূল্যে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যার ওপর ভিত্তি করেই এখন দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকার প্রধান, যিনি জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। 

১৯৯৭ সাল থেকে তিনি সরকার প্রধান হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী এই মডেলটির প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার এক দশকে দেশে ব্যাপক ভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন ধারাকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই সময়ে জ্বালানির সংস্থানই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সাহস, কৌশল ও দক্ষতার সাথে কর্মপদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তার দিক-নির্দেশনায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জ্বালানি খাতের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। 

দেশের জ্বালানি খাতকে সচল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছেন। বিশেষ করে তিতাস গ্যাসের পরিচালনার সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় তিতাস গ্যাসের দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ দুর্নীতি, ঘুস, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বকেয়া রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কাজ চলমান রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। জ্বালানি খাতে বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২ অর্জন করে। 

বিশাল এই অর্জনের বড় অংশীদার তিতাস গ্যাস। তিতাস গ্যাসের সাফল্য ও অগ্রগতির নেপথ্যের নায়ক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্। তার যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে তিতাস গ্যাসের মাঠপর্যায় থেকে শুরু করেছে প্রশাসনিক কাঠামোর চিত্র। তার সময়কালে এক হাজার ৮৭ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় আট লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৪ টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অবৈধ কার্যক্রমের জন্য ৮৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল ও জরিমানা করা হয়। একই সাথে অবৈধ ও বিল খেলাপি গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অভিযান পরিচালনা ও গণমাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু রেখেছেন। গ্যাস দুর্ঘটনা পরিস্থিতি মোকাবিলাও জরুরি যে কোনো মুহূর্তে যোগাযোগ করার জন্য ১৬৪৯৬ নম্বরের একটি সেবা প্রদান নম্বর চালু রয়েছে। যেখানে সব সময় প্রস্তুত থাকছে ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম। বিতরণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার জন্য ইউনিসেফের নিবন্ধিত সিডিএম প্রকল্পের আওতায় প্রাকৃতিক গ্যাস তথা গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের উদ্দেশ্যে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে সার্বিক কোম্পানি ও গ্রাহক সম্পর্ক ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। ডাটা সেন্টার স্থাপন ও ওয়েভ সিস্টেম কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। 

গ্রাহকরা অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধাসম্বলিত ৪১টি ব্যাংকের যে কোনো ব্রাঞ্চ থেকে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পারছেন। দেশের শিল্প উন্নয়নে তিতাস গ্যাসের অবদান অবিস্মরণীয়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) আওতায় তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় চারটি সরকারি ও ১৫টি বেসরকারি ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি ইকোনমিক জোনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিতামূলক অগ্রগামী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়েছে।
 

Link copied!