Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

পর্যটনশিল্পে আন্দোলনের প্রভাব

মো. ইমরান খান

মো. ইমরান খান

জুলাই ২৭, ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম


পর্যটনশিল্পে আন্দোলনের প্রভাব
  • দর্শনীয় স্থানগুলো ভুগছে পর্যটকখরায়
  • তিন মাস ধরে সিলেটে দেখা মেলেনি পর্যটকের
  • পর্যটকশূন্যতায় শতকোটি টাকা লোকসানের শঙ্কা

আমরা বেশ বিপাকে আছি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এই খাত দীর্ঘমেয়াদি সংকটের মুখে পড়বে। ইন্টারনেট না থাকায় আমরা আরও সমস্যায় পড়েছি। কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করতে পারছি না

—সাইয়েদ হাবিব আলী, স্বত্বাধিকারী, সুন্দরবন ট্যুরিজম প্লাস

দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে পর্যটনশিল্পে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে পর্যটকদের মাঝে। দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো ভুগছে পর্যটকখরায়। বিশেষত পাহাড়-সমুদ্রজাতীয় পর্যটন স্পটগুলোতে এই প্রভাব বেশি লক্ষ্যণীয়। দেশের বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে হুমকিতে পড়েছে অপার এই সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতটি। এতে বিপাকে পড়েছেন ওইসব অঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন ঘিরে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। টানা আন্দোলন, বন্যাসহ নানা কারণে বেশ কদিন যাবৎ দেশের এই আর্থিক খাতটিতে সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিরাজমান সংকট না কাটলে পর্যটনশিল্প আরও বিপাকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এই খাতে বিনিয়োগ কয়েক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রেস্টুরেন্ট, রেন্ট-এ-কার, কুটিরশিল্প ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত পর্যটনশিল্প। পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার চাকা ঘোরে। কেউ নৌকা দিয়ে পর্যটক পরিবহন করেন, আবার কেউ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সবচেয়ে বেশি দুরবস্থা সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোয়। গত মে মাস থেকে তিন দফা বন্যা। বন্যার ক্ষত কাটার আগেই কোটাবিরোধী আন্দোলনে দেশজুড়ে অচলাবস্থা চলছে। এতে গত তিন মাস ধরে সিলেটে দেখা মেলেনি পর্যটকের।

দেশের পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল আজহাসহ পর্যটনের এই ভরা মৌসুমে সিলেট বিভাগে পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে। চলমান পরিস্থিতিতে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে হোটেলগুলো। সিলেটের পর্যটন খাত বাঁচাতে সরকারি প্রণোদনার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম দর্শনীয় এলাকা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত প্রায় পর্যটকশূন্য। সেখানে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়েছে কর্মচারীদের। চলমান এই শঙ্কট কেটে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে সাপ্তাহিক ছুটিতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত পর্যটককে মুখর থাকলেও গত শুক্রবার থেকে পর্যটক শূন্যের কোঠায় চলে আসে। গত শনিবার থেকে টানা পাঁচ দিন কুয়াকাটা পর্যটননগরীতে রয়েছে সুনসান নীরবতা। শূন্য পড়ে আছে সৈকতে রাখা ছাতা-বেঞ্চ। অলস সময় পার করছেন মোটরবাইক, ফটোগ্রাফার, স্পিডবোট-সিবোট চালক, ঝিনুক-আচার, ফিশ-ফ্রাই ব্যবসায়ীসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ১৮ পেশায় জড়িত ব্যবসায়ীরা। সৈকত পর্যটকশূন্য থাকায় তারা বেশ হতাশ।

এই অর্থনৈতিক খাতটি ঘিরে সিলেটে গড়ে উঠেছে কয়েকশ রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও হোটেল-মোটেল। কিন্তু গত মে মাস থেকে সিলেটে শুরু হয় বন্যা। তিন দফা বন্যায় বারবার বন্ধ ঘোষণা করা হয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। নদীতে পানি ও স্রোত বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটকরা সিলেটবিমুখ হয়ে পড়েন। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সিলেটে পর্যটকরা আসতে শুরু করেন। ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেন পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন মিলিয়ে যায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউর কারণে পর্যটন খাতের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

সিলেটের কয়েকজন হোটেল ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে জানান, বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে পর্যটন ব্যবসা কমলেও সিলেটে পর্যটক আগমন হয় সবচেয়ে বেশি। বর্ষায় প্রকৃতি নবযৌবন লাভ করে, এতে সৌন্দর্য বাড়ে প্রকৃতিনির্ভর সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর। ফলে ওই সময় সারা দেশের পর্যটকদের ঝোঁক থাকে সিলেটে। কিন্তু এবার বন্যা ও কোটা আন্দোলনে পর্যটকদের দেখা মেলেনি সিলেটে। এমনকি বন্যার কারণে ঈদুল আজহায়ও সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল। ফলে গত তিন মাস ধরে সিলেটের বেশিরভাগ হোটেল পর্যটকশূন্য রয়েছে।

কক্সবাজারে যেখানে এ সময়ে ভ্রমণপিপাসুদের বিপুল আনাগোনায় প্রাঞ্জল থাকে, সেখানে সপ্তাহখানেক ধরে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক। উল্টো আটকা পড়েছেন অনেকে। এমন অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে পর্যটকখরায় ক্ষতির মুখে পড়েছে হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁসহ প্রতিটি খাত। তাতে বেড়েছে ক্ষতির পরিমাণ।

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকে জানান, চলমান পরিস্থিতিতে পর্যটক না আসায় আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি। আমাদের বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য বিল দিতে সমস্যা হবে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চাই এ পরিস্থিতির উত্তরণ এবং জনমনে স্বস্তি ফিরে আসুক। এছাড়া পর্যটনশিল্পকে রক্ষায় সরকার পদক্ষেপ নেবে।

এদিকে বর্ষা মৌসুমে প্রাণ ফিরেছে রাঙামাটির ঝরনাগুলোয়। প্রকৃতি ফিরেছে আপন রূপে। কিন্তু এরপরও পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার এই শহর। তাতে ক্ষতির মুখে হোটেল-মোটেল, ট্যুরিস্ট বোট, হাউজ বোট, কটেজ মালিকসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চলমান পরিস্থিতি পর্যটন-সংশ্লিষ্ট খাতে প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

একই অবস্থা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানী খ্যাত বান্দরবান। সেখানে যৌথবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কারণে এমনিতেই চলছে পর্যটকখরা। তার ওপর চলমান পরিস্থিতিতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকশূন্য এ জেলা। একই চিত্র খাগড়াছড়িতেও। নেই পর্যটকের সমাগম। তাতে চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের আশা, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। পর্যটকদের পদচারণে মুখর হবে প্রতিটি পর্যটন স্পট। ফিরবে প্রাণচাঞ্চল্য। সুন্দরবন ট্যুরিজম প্লাসের স্বত্বাধিকারী সাইয়েদ হাবিব আলী দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, আমরা তো বেশ বিপাকে আছি। এমন নৈরাজ্য চলতে থাকলে এই খাত দীর্ঘমেয়াদি সংকটের মুখে পড়বে। ইন্টারনেট না থাকায় আমরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়ছি। কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করতে পারছি না।


 

Link copied!