জুলাই ২৯, ২০২৪, ০৩:১৭ পিএম
- ধানমন্ডির ‘অবসর’ ভবন থেকে সরবরাহ করা হয় তহবিল
- ওই ভবন থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা ও সরকারি স্থাপনায় হামলার নির্দেশনা
শ্রীলঙ্কান স্টাইলে গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিল
—ওবায়দুল কাদের
কারা প্ররোচনা দিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে উত্তর দিচ্ছেন সমন্বয়করা, তবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি
—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
উসকানিদাতাদের কিছু নাম-নম্বরও দিয়েছেন সমন্বয়করা
—হারুন অর রশিদ, ডিবি প্রধান
শুরু থেকেই কোটাবিরোধী আন্দোলনের স্টিয়ারিং সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। যা ছিনতাই করে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার ও রাষ্ট্রের দৃশ্যমান উন্নয়নবিরোধী শক্তিশালীচক্র। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ থাকা অবস্থাতেই আন্দোলনকারীদের ছদ্মবেশে রাজপথে থাকা ওই চক্র সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলার মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকার পতনের খেলায় মেতে ওঠে, যা অনেকটা শ্রীলঙ্কান স্টাইল’ বলেও মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকাল তিনি বলেন, ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি না করলে ‘শ্রীলঙ্কান স্টাইলে’ গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিল। তিনি বলেন, ক্ষমতার জন্য লন্ডনে পলাতক (তারেক রহমান) গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কান স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি দখল করার টার্গেট ছিল। এদিকে, আন্দোলনের তীব্রতা নমনীয় হওয়ার পর আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিজ্ঞাসাবাদেও উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। আন্দোলন চলাকালে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন— এমন কিছু রাজনীতিকের নাম-নম্বরও দিচ্ছেন তারা। বিভিন্ন মাধ্যমে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধিতে অর্থও ছড়িয়েছে তারা। সমর্থন, উসকানি, আর্থিক জোগান, মোট কথা সরকার পতনে সার্বিক সহযোগিতার তথ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে এখন প্রকাশ্যে আসছে। এর মধ্যে নাশকতা, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আসে রাজধানীর যে ভবন থেকে, সেটিরও সন্ধান পেয়েছে পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। ধানমন্ডির ৫/এ সড়কে অবস্থিত ‘অবসর’ নামের ভবন থেকেই সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হতো তহবিল। ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ওই ভবনটিতে অভিযান পরিচালনা করে সিটিটিসি।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান জানান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় যে সহিংসতা ঘটেছে, তাতে নেতৃত্ব দেয়া হয় ওই ভবন থেকে। অভিযানকালে ওই ভবন থেকে হাতবোমা ও অস্ত্র ছাড়াও বিপুল জিহাদি বই জব্দ করা হয়েছে। সম্প্রতি নাশকতায় তারা যেসব দেশি অস্ত্র, ভাঙচুর, নাশকতা ও পুলিশের ওপর আক্রমণে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোও ওই ভবন থেকে জব্দ করা হয়েছে। সরকারি স্থাপনায় হামলার সব নির্দেশনা-সমন্বয়ও করা হয়েছে ওই ভবন থেকে। ওই ভবনে থাকা মহানগরীর কেন্দ্রীয় অফিস থেকেই গত পাঁচ বছর ধরে নাম-ঠিকানা গোপন করে জঙ্গি স্টাইলে পরিচালিত হতো জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম। সিটিটিসির প্রধান বলেন, আন্দোলনে তহবিল দিয়েছে— এমন বেশকিছু বড় ডোনারের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় হামলার চেষ্টার নির্দেশনা দেয়া হয় ওই অফিস থেকেই।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়ককে নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবি হেফাজতে নেয়াকে কেন্দ্র করেও চলছে গুজব। যে গুজবে বিভ্রান্ত এবং ভীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েছে তাদের পরিবার। যদিও ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ বলছেন, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘিরেই কিন্তু অসাদু চক্র জামায়াত-বিএনপি এই সুযোগে অনুপ্রবেশ করে একটা গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। এই চক্র রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগুন লাগাতে চেয়েছিল। সে কারণে আমি মনে করি, এই চক্র যদি আবার শিক্ষার্থীদের কোনো কিছু করে আন্দোলনের কিছু করতে চায়, সে জন্যই নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নিয়েছি। এছাড়া আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কারা কারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, কারা তাদের উসকানি দিয়েছিল, আমরা তাদের কাছে এসব বিষয়েও জানতে চেয়েছি। তারা কিছু নাম-নম্বর আমাদের দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলছেন একই কথা। তিনি বলেন, পুলিশ যদি মনে করে তারা ঝুঁকিমুক্ত, তবে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এর আগে তারা নিজেরাই বলেছিল, তারা ঝুঁকিতে আছেন। সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করা হয়নি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কোন কোন রাজনৈতিক দল কিংবা কারা তাদের প্ররোচনা দিয়েছে। পরবর্তীতে যে আন্দোলন সহিংস রূপ নিল, সেগুলোর বিষয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করছি। এগুলোর উত্তরও তারা দিচ্ছেন
এর আগে আন্দোলন চলাকালে কর্মসূচি ‘বাংলা ব্লকেড’ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৮ জুলাই রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা দেন।
এ কর্মসূচি ঘোষণার পর কার্যত দেশজুড়ে হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত অন্য সব প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেশের পরিস্থিতি হয়ে ওঠে উত্তাল। শুরু হয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা টার্গেট করে হামলা, অগ্নিসংযোগ। এরপরই ঘটে বহু হতাহতের ঘটনা।