Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

দুর্দিনে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে সরকার

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

জুলাই ২৯, ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম


দুর্দিনে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে সরকার
  • সাত দিনের মধ্যে উঠে যাচ্ছে কারফিউ 
  • বিজিএমইএর ক্ষতি ৭৪০০ কোটি টাকা 
  • বারভিডার প্রতিদিন ক্ষতি ৩৫ কোটি টাকা  
  • ব্যবসায়ীদের সাত দিনের বন্দর চার্জ মওকুফ

সংঘাতে ক্ষতি প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা: ফিকি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়া দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে একের পর এক মিটিং করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে করণীয় কী হবে তা নির্ধারণই ছিল এসব মিটিংয়ের মূল্য উদ্দেশ্য। মিটিংগুলোতে কারফিউ প্রত্যাহারসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়ার পাশাপাশি আগামী সাত দিনের মধ্যে কারফিউ প্রত্যাহারেরও আশ্বাস দেয়া হয়। সরকারের পক্ষে এসব আশ্বাসের কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা দুর্দিনে আমাদের পাশে ছিল, আমরাও দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকব। গতকাল রোববার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সম্মেলন কক্ষে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি একথা বলেন। 

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘কারফিউ প্রতিদিনই শিথিল হচ্ছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। আগামীতে উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে ব্যবসায়ীরা আলাদা ইন্টারনেট চেয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে খাত সংশ্লিষ্টদের রোববারের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ লিখিত আকারে দিতে বলেছেন তিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বৈঠকে আমরা পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। চট্টগ্রাম পোর্টে সমস্যার কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা আগামীতে বৈঠকে বসব। দ্বিতীয় সমস্যা তারা বলেছেন, এনবিআরের সঙ্গে। এনবিআরকে নিয়েও একটা মিটিং করব। তৃতীয় মিটিং করব বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। এছাড়া বাজেট নিয়েও কিছু সমস্যার কথা বলেছেন ব্যবসায়ীরা। সেটা পরেও সমাধান করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে সমস্যার কথাও ব্যবসায়ীরা বৈঠকে জানিয়েছেন।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ফোরজি চালু হয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট ছাড়া কোনো ব্যবসা সম্ভব না এখন। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ধীরে ধীরে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছি।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আজকের মধ্যে সংশ্লিষ্ট খাতের ক্ষতির পরিমাণটা লিখিতভাবে জানাবেন। ঢাকার বাইরে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। ব্যবসায়ীরা লিখিতভাবে আমাদের জানাবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, ইন্টারনেটের জেনারেল সিস্টেমটা যদি নষ্ট হয়ে যায়, কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য স্ট্যান্ডবাই সিস্টেম করা যায় কি না, এমন পরামর্শ ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন। যাতে ব্যবসাটা চলতে পারে। নিজস্ব একটা ইন্টারনেট তৈরি করা যায় কি না, সেটার একটা সাজেশন এসেছে। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দুঃসময়ে আমাদের পাশে ছিল, আমরাও তাদের পাশে থাকব। ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতি ওভারকাম করতে পারবেন।’ 

এই আন্দোলনের ফলে বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে কি না জানতে চাইলে সালমান ফজলুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুজব ও মিথ্যা কথা সোশ্যাল মিডিয়া-বাইরের মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। এটা এখন রিপেয়ার করতে হবে। এজন্য প্রথমে আমাদেরকে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সব স্বাভাবিক হলে ইমেজ ড্যামেজ অনেকটা রিকভার হবে।’

এদিকে বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘শিক্ষার্থী আন্দোলনের ফলে আমাদের প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে আমরা যে পরিমাণ খরচ পাই, তা দিয়ে চার হাজারের বেশি গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ১০০ থেকে সোয়া’শ কোটি টাকা আয় করতাম। সেখান থেকে সরকার রাজস্ব বাবদ ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা পেতো। কিন্তু সার্ভার আগুনে পুড়ে যাওয়ায় এখন সেই অর্থ থেকে সরকার পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে। বিআরটিএর সার্ভার পুড়ে যাওয়ায় রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি রেজিস্ট্রেশনও। বিআরটিএকে আমরা জানিয়েছে, বিকল্প হিসেবে মেন্যুয়ালি রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা করতে। গতকালকের বৈঠকে আমরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টার কাছেও তুলে ধরেছি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীও বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে বারবিডা সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, আমাদের কোনো নীতি সহায়তার প্রয়োজন নেই, আমরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারলেই চলবে।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি আমার সংবাদকে বলেন, পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে আমরা জানিয়েছি, এই কয়দিনের আন্দোলনে আমাদের প্রায় ৭৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে শ্রমিকের মজুরি বাবদ। এছাড়া সুই, সুতাসহ অন্যান্য উপকরণ মিলিয়ে আরও প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বন্দরে বহু পণ্য আটকে যাওয়ায় আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছি। এরপর আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আরেকটি বৈঠক করেছি। এ সময় বিজিএমইএ নেতাদের সাত দিনের বন্দর ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করেছে সরকার। সংঘাতের কারণে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

এদিকে বৈঠকে অংশ নেয়া ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ফলে দেশের অর্থনীতিতে ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলেও জানায় সংগঠনটি। ফিকির নেতারা বলেন, দেশে সীমিত অনলাইন এবং ফিজিক্যাল সংযোগের সঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কার্যক্রম এখনও ফিরে আসেনি এবং আমরা অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছি। শিল্পের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য আমাদের সম্পূর্ণ ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং যাতায়াত সুবিধা প্রয়োজন। 

এছাড়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দর থেকে পণ্য খালাস এবং শাটডাউনের সময় কাজ করতে না পারার কারণে অতিরিক্ত বিলম্ব শুল্ক নির্ধারণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তারা বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প, ব্যাংকিং, বিমা, লজিস্টিকস, অবকাঠামো, টেলিকম, ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, রাইড-হেলিং, সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং স্যোশাল কমার্সের ওপর নির্ভরশীল অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান শাটডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিল্পের ওপর এ আর্থিক প্রভাব কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত যেতে পারে।
 

Link copied!