Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪,

সিরিজ বৈঠকে আ.লীগ

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

জুলাই ৩০, ২০২৪, ০২:২৮ পিএম


সিরিজ বৈঠকে আ.লীগ
  • ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ঐকমত্য
  • ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে আজ যৌথসভা  
  • মহানগরে আসনভিত্তিক সমন্বয় সভা চলমান

দেশে চাকরির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে না পারলে শিক্ষার্থীদের অস্থিরতা থামানো কঠিন হবে
—ড. আবদুল খালেক
আ.লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও রাবির সাবেক উপাচার্য

করণীয় নির্ধারণে একের পর এক বৈঠক করছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কোনো বৈঠকে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; আবার কোনো বৈঠকে দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতিত্ব করছেন। এসব বৈঠকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন-পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং এখনকার করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন সংঘাতে রূপ নেয়, তখন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নানা দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ওই সময় আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে মাঠে পাওয়া যায়নি। দফায় দফায় করা বৈঠকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় এসব বিষয় ওঠে এসেছে। সিরিজ বৈঠকে দলের দুর্বলতা শনাক্ত এবং পরবর্তীতে ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় শক্ত অবস্থান নেয়া যাবে— তা নিয়েও আসছে নানা পরামর্শ। এসব বৈঠকে নেতাদের মধ্যে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির মতো ঘটনাও ঘটেছে। 

বেশ কদিন বিরতির পর গতকাল দেশের কয়েকটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা আন্দোলনে নিহতদের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচার দাবি করেন; একইসঙ্গে বন্দি শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেন। চলমান এ পরিস্থিতিকে মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তারা সবকিছু পর্যালোচনা করছেন এবং করণীয় ঠিক করতে দলের নেতাদের পাশপাশি রাজনৈতিক মিত্রদেরও পরামর্শ নিচ্ছেন। গতকাল সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় রাত আটটার পর। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা একমত হয়েছেন। 

আজও আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা রয়েছে। সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথ সভা। আজ সকাল ১১টায় ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বার্তায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগও সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

এর আগে গত ২৫ জুলাই ঢাকার তেজগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি সমন্বয় সভা করে আওয়ামী লীগ। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘাত-সহিংসতা প্রতিরোধে দলের দুর্বলতা ও নানা ব্যর্থতা নিয়ে তর্কে জড়ান যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান। এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত হয়। সেই সমন্বয় সভায় থেমে থেমে চলে হট্টগোল। পরে সিনিয়র নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করেন। ওইদিনই বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় মোহাম্মদপরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ঢাকা-১৩ আসনের তিন থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ১০৮টি ইউনিট কমিটির মধ্যে ২৭ ইউনিট কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য ড. আবদুল খালেকের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন,  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী হতে চায় চাকরিজীবী। অবশিষ্ট ১০ ভাগের মধ্যে কেউ ব্যবসাজীবী, কেউ রাজনীতিবিদ বা অন্যান্যভাবে জীবিকা অর্জন করতে চায়। দেশে চাকরির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে না পারলে শিক্ষার্থীদের অস্থিরতা থামানো কঠিন হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন যেহেতু সরকারি চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সে কারণেই কোটা সংস্কার আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে এতটা গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পারলে এসব অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে। প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক মনে করেন, এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের সংলাপ অতিজরুরি। সংলাপের মাধ্যমে একটি সম্মানজনক সমাধানও বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু এ মুহূর্তে কোনো ছাত্র সংসদ নেই; তাই আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের বাবা/মা/অভিভাবকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়ের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য, প্রবীণ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের কাছে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের জন্য তার পরামর্শ কী। জবাবে তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে ফরমালি কোনো বৈঠক ডাকা হয়নি, হয়তো ডাকা হতে পারে; তখন পরামর্শ দেয়া হবে। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে (দলীয় নয়) আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের জন্মস্থান, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের স্লোগান (আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার) আমি ভাবতেও পারিনি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের একজন সহযোগী হিসেবে এরচেয়ে আর দুঃখজনক কী থাকতে পারে— প্রশ্ন রাখেন এই প্রবীণ রাজনীতিক।
 

Link copied!