Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

শিক্ষাঙ্গন থেকে পদত্যাগের হিড়িক

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

আগস্ট ১৪, ২০২৪, ১২:৩৯ এএম


শিক্ষাঙ্গন থেকে পদত্যাগের হিড়িক
  • পদত্যাগ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রেজিস্ট্রার কলেজ অধ্যক্ষ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক
  • অস্ট্রেলিয়া থেকে পদত্যাগ করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান
  • বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে আন্দোলন চলমান থাকায় পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে আরও
  • আন্দোলনে উত্তাল যবিপ্রবি, জাককানইবি ও সরকারি বাঙলা কলেজ
  • পদত্যাগে ‘না’ চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের 
  • আল্টিমেটাম শেষেও পদত্যাগ করেননি বশেমুরবিপ্রবির কেউ

সরকার বদলের পরই প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে আসছে পরিবর্তন। সরকারের পক্ষ থেকে পদ পরিবর্তন, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। একই অবস্থা শিক্ষাক্ষেত্রেও। দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এসব পদত্যাগকারীর মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, কলেজ অধ্যক্ষ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। অস্ট্রেলিয়া থেকে রোববার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। ই-মেইলে শারীরিক অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করেন। সরকার পতনের পর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে একে একে পদত্যাগ করছেন  শিক্ষকরা।  উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, শহিদ সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু, শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রাধ্যক্ষ পদ থেকে অধ্যাপক আলমগীর কবির, ৭ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম, চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার আবু হাসান, ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান ও ১০ আগস্ট মীর মশাররফ হোসনে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম পদত্যাগ করেন।

৭ আগস্ট ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) সামাজিকবিজ্ঞান ও কলা অনুষদের ডিন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ও প্রক্টরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অন্যদিকে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সহকারী প্রক্টর ও অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট হীরক মুশফিক। ৮ আগস্ট সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্য, হল প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট সবাই রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ এবং প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হকসহ প্রশাসনের ২৯ কর্তাব্যক্তি। গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ। দুদিন পর ১১ আগস্ট একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন আট শিক্ষক। ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামালসহ মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল এবং শামসুন নাহার হলের প্রভোস্টরা। 

একইদিন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া পদত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ আগস্ট ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান। আর আগের দিন রাতে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ইউসুফ আলী, সহকারী প্রক্টর সুমিত কুমার পাল ও হল প্রভোস্ট পার্থ সারথি দাস। ১১ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএফএম আবদুল মঈন। নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম কবীর ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন। একইদিন বিকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মশিউর রহমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন জবি উপাচার্য সাদেকা হালিম, প্রক্টর অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ পুরো প্রক্টোরিয়াল বডি, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক তানভীর আহসান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী সরকার। এ  দিনই পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভিসি প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। এছাড়া বাকৃবির উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. আবু হাদী নূর আলী খান, ট্রেজারার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশীদ, সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আফরিনা মোস্তারি, পরিবহন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. রফিকুল আলম পদত্যাগ করেন। ১২ আগস্ট খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার ও উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ড. সোবহান মিয়া পদত্যাগ করেন। ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সেকান্দর চৌধুরী (প্রশাসন) ও অধ্যাপক বেনু কুমার দে এবং ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী। এর আগে পদত্যাগ না করলেও আন্দোলনের মুখে অব্যাহতি চান অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজেও। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসিন কবির পদত্যাগ করেন ১১ আগস্ট। কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা বেগম, আন্দোলনের মুখে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী এবং কলেজ শাখার অধ্যাপক ও গভর্নিং বডির (কলেজ) সদস্য ফারহানা খানম পদত্যাগ করেন। আন্দোলনের মুখে ১২ আগস্ট ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ এবং উপাধ্যক্ষ এটিএম মইনুল হোসেন পদত্যাগ করেন। এ দিনই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌস আরা বেগম। একইদিনে পদত্যাগ করেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক। পদত্যাগপত্রে  মানসিক চাপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার চাঁদপুর শহরের খলিশাডুলি এলাকায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নাছিম আখতারের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রারেরও পদত্যাগ দাবি করেন। তবে পদত্যাগ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নাছিম আখতার। 

এ বিষয়ে উপাচার্য গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, সরকার চাইলেই কেবল পদত্যাগ করবেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ এসএম আমিরুল ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। অন্যদিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের পদত্যাগপত্র জমা না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের। বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যসহ পুরো প্রশাসনকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়া হলেও পদত্যাগ করেননি কেউ। গতকাল উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদসহ উপাচার্য অনুসারীদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
 

Link copied!