Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের এমডি জাকির

মন্ত্রীর আশকারায় গড়েন সাম্রাজ্য

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

আগস্ট ২৫, ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম


মন্ত্রীর আশকারায় গড়েন সাম্রাজ্য
  • এমডির বেতন বৃদ্ধি করতে প্রবিধানমালার বাইরে গঠিত হয় বিশেষ কমিটি 
  • দুই মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদও বাড়ে জাকিরের
  • সরকার ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা চালু করলেও ফাউন্ডেশনে চালু করেননি এমডি  
  • আ.লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিবদের আস্থায় থাকায় রয়েছে বহাল তবিয়তে

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে ‘ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ যাত্রা শুরু করে। পরে প্রকল্পটি নিয়মিত রাখতে পৃথক বৈধ ফাউন্ডেশনে রূপান্তর করা হয়। ক্ষুদ্র কৃষক এবং ভূমিহীন কর্ম উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা এই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন আকন্দের অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে ফাউন্ডেশনটি। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রীর সহযোগিতায় রীতিমতো দানবে পরিণত হন তিনি। সরকার পতনের পরও সরকার বিরোধীদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অভিযোগের পাহাড় জমলেও স্বপদে এখনো বহাল এই কর্মকর্তা। তার মাথায় আছে, আওয়ামী লীগের আমলের নিজ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উচ্চপদস্থ আমলাদের আশীর্বাদের হাত। 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান জাকির হোসেন আকন্দ। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ দৃষ্টি পান এ কর্মকর্তা। ফলশ্রুতিতে ৩ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় তার। ফাউন্ডেশনের প্রবিধানমালা অনুযায়ী যে কর্মকর্তা যে পদ মর্যাদায় নিযুক্ত হবেন, সেই গ্রেড অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন। কিন্তু এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসেই নিজের চাকরির মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধিসহ বেতন-ভাতা দ্বিগুনের বেশি বৃদ্ধি করতে পেরেছেন। প্রবিধানমালার নিয়মের বাইরে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করিয়ে নেন তিনি। মন্ত্রী তাইজুল ইসলামের সুদৃষ্টির কারণে এ বেতন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন তিনি। এখন তিনি এ বেতন বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এ বেতন বাড়াতে গঠন করা হয় বোর্ড। 

প্রবিধানমালা অনুযায়ী নিযুক্ত পদের গ্রেড অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রাপ্য হওয়ার কথা থাকলেও সরকারের ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ায় এমডি জাকিরের বেতন বাড়াতে গঠন করা হয় বোর্ড। সে বোর্ডের সুপারিশে বাড়ে তার বেতন। 

এদিকে প্রকল্পের জনবল আত্মীকরণের সময় নিজস্ব জমাকৃত অর্থও পাচ্ছেন না প্রকল্পের কর্মীরা। প্রকল্পের ৪৫০ জন জনবলের দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা গ্রাচুইটি বাবদ প্রাপ্য অর্থ ফাউন্ডেশনে স্থানান্তর করা হয়েছে প্রত্যেক কর্মীর নামে। কিন্তু এই টাকা না দেয়ার বিষয়ে প্রবিধানমালায় আইন পাস করা হয়। ফলে কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে প্রাপ্য অর্থ থেকে। প্রতিষ্ঠানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক যিনি শুধুই বিএ পাস, তাকে বারবার এক্সটেনশন দিয়ে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। জানা গেছে, এই সহকারী মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্পর্কের জেরেই বারবার এক্সটেনশন করে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। 

এছাড়া জাকির হোসেন আকন্দ বোর্ড সভায় বারবার বলে আসছিলেন হিসাব-নিকাশ করার মতো যোগ্য লোক নেই, অথচ ফাউন্ডেশনের কর্মীরা জানিয়েছেন এখানে অ্যাকাউটিংয়ে অনার্স, মাস্টার্স, বিএ, এমবিএ সম্পন্ন করা একাধিক কর্মকর্তা রয়েছে। সরকার কর্তৃক ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও ফাউন্ডেশনে এখনো চালু করা হয়নি। বিভিন্ন সময় এর জন্য অর্থের অভাবের কথা বলা হয়। এই একই অজুহাতে কর্মচারীদের টিএ, ডিএ বৃদ্ধি করা হয় না দীর্ঘদিন ধরে। অথচ এমডি জাকিরের বেতন বিল দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফাউন্ডেশনটির এক কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের যেকোনো বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেন শুধুমাত্র এমডি এবং জিএম মিলে। আর কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করা হয় না। এই সুযোগে জিএম তার স্বার্থ চরিতার্থকরণের জন্য যারপরনাই বেপরোয়া আচরণ করেছেন। বিগত বছরে দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ফলে প্রায় তিন কোটি টাকা পরীক্ষার ফি বাবদ পাওয়া যায়। যা বিভিন্ন ভুয়া বিল দেখিয়ে এমডি, জিএম এবং তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলা লোকজন মিলে ব্যয় করেছেন।

এমডি জাকিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তা ও সাংসারিক সমস্যার বিষয় তোয়াক্বা না করে তাদের বাধ্য করা হয় মাঠ পরিদর্শনে যেতে। মাঠ পর্যায়ের আরএমদের চার বছর চলতি দায়িত্বে রেখে প্রমোশনের সময় হলেই অধিকাংশ লোকের নামে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয় পদোন্নতি আটকাতে। কোনো কর্মী জাকির হোসেন আকন্দের এসব কাজের প্রতিবাদ করলে তাকে বিভাগীয় মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। 

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে জাকির হোসেন আকন্দের মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের মুখেই জানা যায়, এমডি জাকিরের নানাবিধ অপকর্মের কথা। ফাউন্ডেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. শফিউল আলম আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের এখানে বৈষম্য আছে। সমপ্রসারণ প্রকল্পে ম্যানেজার পদে থাকা একজনকে বহু কাহিনী করে প্রমোশন আটকে রাখা হয়েছিল। ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু উনি (এমডি জাকির) দেননি। উনি এটি হেল্ড আপ করে রাখছেন।’ 

এ বিষয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মোসাম্মৎ শাহানারা খাতুন আমার সংবাদকে বলেন, ‘বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি করে দিয়েছে। সেই কমিটি সুপারিশ দিয়েছে। বোর্ডের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বেতন বাড়ানো হয়েছে।’ আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ও এমডি জাকিরের ঘনিষ্ঠভাজন বলে পরিচিত এ সচিব নিয়ম ভাঙা হয়নি বলে জানান। তবে প্রবিধানমালা তার মুখস্থ নেই, তাই না দেখে বলতে পারবেন না বলেও জানান তিনি। তবে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমডি জাকিরের বেতন বৃদ্ধি, প্রণোদনা না দেয়া, কর্মীদের নিজেদের টাকা থেকেই বঞ্চিত করা, প্রমোশন আটকে রাখা, ঘনিষ্ঠ কর্মীদের সুবিধা প্রদানের নানা তথ্য উঠে আসে আমার সংবাদের কাছে।

আরএস
 

Link copied!