আনোয়ার হোসাইন সোহেল
আগস্ট ২৮, ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
আনোয়ার হোসাইন সোহেল
আগস্ট ২৮, ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
এস আলম গ্রুপ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের পূর্ণগ্রাস থেকে মুক্ত হচ্ছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের আরও তিন ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার ওই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। এজন্য তিন দফা সংবাদ সম্মেলন ডেকেও শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন করেননি নয়া গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তবে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে গভর্নরের দপ্তর। পর্ষদ ভেঙে দেয়ার আলোচনায় আসা ব্যাংকগুলোর মধ্যে নাম রয়েছে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক; সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইউসিবি ব্যাংকে দুজন উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন শরিফ জহির ও তানভীর। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক একজন নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন, একজন চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট এবং ডিএমডি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তবে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদে কারা আছেন— এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে সেটি চূড়ান্ত হয়নি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছে।
অপর আরেকটি সূত্র জানায়, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের গ্রাস থেকে মুক্ত ইউসিবি ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করতে ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। জানা গেছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বাবা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ইউসিবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। শুরু থেকেই ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপি-ঘনিষ্ঠ আরেক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এমএ হাশেম। তারা বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত উভয় পরিবারের সদস্যরাই ব্যাংকটিতে যুক্ত ছিলেন।
২০১৭ সালে জোরপূর্বক এমএ হাশেম পরিবারের সদস্যদের ইউসিবি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেয়া হয় সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমিলা জামানকে। তবে রুকমিলা জামান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় ব্যাংকটি মূলত পরিচালনা করতেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী নিজে। ব্যাংকটির কিছু শেয়ারধারী জানিয়েছেন, রুকমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারপারসন হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে। এ নিয়ে ইউসিবি ব্যাংকের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে এক হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে পাচারের মাধ্যমে নেয়া টাকায় তিনি নামে-বেনামে বহু সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা দুদক ও বিএফআইইউর তদন্তের দাবি রাখে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংককর্মীরা একটি চিঠিতে অভিযোগ করেন, ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটিকে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ‘অবাধ লুটপাট, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার’ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৭ সালে ইউসিবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল এক হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সাত বছরে পাচার করা হয়েছে ৯৯০ কোটি টাকারও বেশি। এদিকে নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে গত ২২ আগস্ট এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ‘আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ও জনস্বার্থে ব্যাংক-কোম্পানি আইন অনুযায়ী নতুন এ পর্ষদ নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ‘আস্তে আস্তে এস আলমের মালিকানাধীন সবগুলো ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারি খাতের ছয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এই ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।