Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থবিরতা কাটাতে তৎপরতা

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

আগস্ট ২৮, ২০২৪, ১২:১০ পিএম


বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থবিরতা কাটাতে তৎপরতা
  • ঢাবি, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ
  • অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
  • নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগ দিতে জবি-ইবিতে কর্মসূচি পালন

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের চেষ্টা করা হবে
—ড. মো. ফখরুল ইসলাম সচিব, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদের ব্যক্তি পদত্যাগ করেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনও হয়। উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, উপ-উপাচার্যের বাইরে বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বরতরা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। এতে বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিভাবকশূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষাকার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয়সহ প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। 

অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকার গঠনের সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে থাকলেও পরবর্তীতে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। পরিবর্তন আনা হয় সচিবালয়েও। শিক্ষা সচিব সোলেমান খানকে সরিয়ে সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয় সাবেক আমলা ড. মো. আব্দুর রশিদকে। প্রশাসনবিহীন প্রায় ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চালকের আসনে বসতে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক শিক্ষক তদবির করছেন বলেও জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ পদে আবেদন করার কোনো অফিসিয়াল ব্যবস্থা না থাকলেও অতীতে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতে দেখা গেছে এসব পদে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকেই উপাচার্য ও বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানা গেছে। তবে তুলনামূলক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক সংখ্যা কম— এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপকদের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে। গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩০তম উপাচার্য হবেন। 

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ড. সায়মা হক বিদিশা ও ড. মোহাম্মদ ইসমাইলকে। গতকাল মঙ্গলবারই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানকে। অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে দ্রুতই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার আলোচনা করেছি। শিক্ষা সচিব ও উপদেষ্টাদ্বয় এ বিষয়ে অবগত আছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ করছেন। উপরন্তু গত ২২ আগস্ট আমাদের মেম্বার অ্যাডমিন শিক্ষা সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। ডিনস কমিটি ও সিন্ডিকেট অন্তর্বর্তী সময়টুকুতে কার্যক্রম চলমান রাখতে একজনকে রুটিন দায়িত্ব দিচ্ছে। যেমন সিকৃবিতে ডিনরা একজন সিনিয়র অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। দ্রুতই সব প্রতিষ্ঠানে স্থবির অবস্থা থেকে বের হয়ে সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে। এ মাসেই  বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করা হবে। 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের চাওয়া— সৎ, দক্ষ, মেধাবী ও বাংলাদেশপ্রেমী অধ্যাপকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য পদে আসবেন, যারা পড়াশোনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা ও ব্যাঘাত ঘটেছে, তা দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুতই গতিশীল করে তুলতে পারবেন।
 

Link copied!