Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

কৌশলে বহাল আওয়ামীপন্থি ভিসিরা

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

ইয়ামিনুল হাসান আলিফ

সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪, ০২:৪৬ পিএম


কৌশলে বহাল আওয়ামীপন্থি ভিসিরা
  • ড. ইউনূসের বিচার চলমান রাখার বিবৃতি দিয়েও বহাল ভিসি কাশেম-জাকির-বাসেত
  • সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চাচার লবিংয়ে বশেমুরবিপ্রবিতে উপাচার্য না হতে পারলেও সুবিপ্রবির উপাচার্য পদে বহাল আওয়ামী লীগ নেতা নঈম শেখ
  • পদত্যাগের আন্দোলন উপেক্ষা করে এখনো টিকে আছেন ভিসি নাছিম, কৌশলে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নেতা থেকে ভিসি হওয়া কাজী সাইফুদ্দীন

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তিরা পদত্যাগ করেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের মুখে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, উপ-উপাচার্য, হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বরতরা একে একে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দেশের অর্ধশত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টির অধিক প্রতিষ্ঠানের প্রশাসকরা পদত্যাগ করেন। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আন্দোলনে নীরব কিংবা কৌশলী ভূমিকা রাখায় সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়নি। তবে সরাসরি আওয়ামী লীগ ও  আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়া, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি-দলীয়করণে প্রভাব রাখার পাশাপাশি আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেও বহালতবিয়তে আছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ছাত্রদের লাগাতার আন্দোলনেও পদত্যাগ না করে পদ আঁকড়ে আছেন তারা। এছাড়া একদম নতুন কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু না হওয়া এবং শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু না হওয়ায় আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হয়নি অনেক উপাচার্যকে। আওয়ামী লীগের হয়ে দলীয়করণ ও সরকারের স্বৈরতন্ত্রের সহায়ক হয়েও আছেন বহালতবিয়তে। পুরো মেয়াদে থাকার চেষ্টার পাশাপাশি অনেকে আবার চেষ্টা করছেন বর্তমান সরকারের কাছে ভিড়তে। 

শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন উপেক্ষা করে এখনো পদত্যাগ না করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুল বাসেত। সদ্যপ্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে আবদুল বাসেতের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। শুধু তা-ই নয়, বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিচারে হস্তক্ষেপ বন্ধ চেয়ে বিচার চলমান রাখতে বিবৃতিও দিয়েছিলেন আব্দুল বাসেত। ছাত্র আন্দোলন চলাকালেও ছাত্রদের বিরুদ্ধে ছিল তার অবস্থান। এ অভিযোগে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনও করেন শিক্ষার্থীরা। তবে এখনো পদত্যাগ করেননি আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম বিরোধিতাকারী উপাচার্য আব্দুল বাসেত। 

লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের পরও পদত্যাগ না করে থাকা আরেক উপাচার্য চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাছিম আখতার। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বাড়ি চাঁদপুরে হওয়ায় উপাচার্য নাছিম আখতারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক দলীয়করণের অভিযোগ রয়েছে তা  বিরুদ্ধে। এছাড়া আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থায় প্রেরণের অভিযোগ রয়েছে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে ছাত্রদের দমন-পীড়নের সব প্রচেষ্টা তিনি করেছিলেন বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন উপেক্ষা করেই গণমাধ্যমে উপাচার্য পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। 
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার চলমান রাখতে বিবৃতি প্রদান করা আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হয়ে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়া প্রফেসর ড. আবুল কাশেম চৌধুরীও রয়েছেন বহালতবিয়তে।

এদিকে একদম নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়নি শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। একাডেমিক কার্যক্রম না থাকায় ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকা কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষাবলম্বন করে যাওয়া অনেক উপাচার্যই রয়েছেন নিশ্চিন্তে। পদত্যাগ না করে আবার অনেকে চেষ্টা করছেন বর্তমান সরকারের কাছে ভিড়তে। দেশে একই নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। 

তবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরে আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নেতা থেকে উপাচার্য বনে যাওয়া ড. কাজী সাইফুদ্দীনকে। আওয়ামী লীগ প্যানেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। একই সুবিধা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবু নঈম শেখ। প্রধানমন্ত্রীর এক চাচার লবিংয়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও আওয়ামী লীগের উপকমিটির এই নেতা সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ বাগিয়ে নেন। নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগে এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছিল সুনামগঞ্জবাসী। শিক্ষাকার্যক্রম শুরু না করায় ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নেতা থেকে মেহেরপুরের মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পাওয়া অধ্যাপক রবিউল ইসলামকে।

এদিকে ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন জাকির হোসেন। তিনি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষাকার্যক্রম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় এবং ছাত্র আন্দোলনে না পড়ায় টিকে থাকা এই উপাচার্য বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার চলমান রাখতে বিবৃতি প্রদান করেছিলেন। তবে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নেতা হয়ে দায়িত্ব পালন করলেও আন্দোলন হয়নি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)  প্রফেসর ড. এএসএম লুৎফুল আহসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জেডএম পারভেজ সাজ্জাদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠভাজন হয়েও এখনো স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বহাল রয়েছেন তারা।

 

Link copied!