Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

পাহাড় অশান্তে জিওপলিটিক্স

আবদুর রহিম

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ১২:৩২ এএম


পাহাড় অশান্তে জিওপলিটিক্স

অশান্ত পাহাড়। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির ঘটনায় উত্তপ্ত ঢাকা। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে কর্মসূচি। গত বুধবার থেকে পাহাড়ি-বাঙালি দফায় দফায় সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। পাহাড়িরা বাঙালিদের সেটলার দাবি ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্রাশ ফায়ারের অভিযোগ তুলে পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহারে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও ঢাকাতে বিক্ষোভ করছেন। এসব ঘটনার পেছনে জিওপলিটিক্স ও বিদেশি শক্তি রয়েছে বলে মনে করছেন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। ছাত্র-জনতার রক্তের বিজয়কে প্রশবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাহাড়িদের মাধ্যমে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রাজনীতিবিদদের। 

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেন, পাহাড়ে অস্থিরতার নেপথ্যে বিদেশি শক্তি রয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে এবং কিছু গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেরেছি আওয়ামী লীগের অনুগত কিছু বিদেশি শক্তি ছাত্র-জনতার রক্তস্রোতের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে দেশে অস্থিরতার চেষ্টা করছে। তার মধ্যে পাহাড়ে বর্তমান বিরজমান পরিস্থিতি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘটছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আবেদন জানাব ছাত্র-জনতার বিজয় যাতে কোনোভাবে চলমান ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে জোরাল দৃষ্টি দেয়া হয়।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না আমার সংবাদকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে ষড়যন্ত্র আজকের নতুন ইস্যু নয়। অনেকদিন থেকেই চলছে। তবে এবারের ঘটনায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সংকট নিরসনে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করছি  দীর্ঘদিনের সংকট ধীরে ধীরে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আমার সংবাদকে বলেছেন, পাহাড়ে গণপিটুনি বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই সে যে পক্ষেরই হোক না কেন। বাঙালিদের মিছিলে গুলি, পিটিয়ে হত্যা, পরবর্তীতে দাঙ্গা ও চাকমা সমপ্রদায়ের তিনজনসহ সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হবে। অপরাধী বাঙালি-উপজাতি যেই হোক না কেন, বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশের নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। সেটা যেন কোনো অবস্থাতেই অগ্রাধিকারের বাইরে চলে না যায়, সেই ব্যাপারে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সতর্ক করছি। পাহাড়ে স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় পূর্বের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত হচ্ছে এর রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সব পক্ষকে কমিউনিটি লেভেলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংহতি ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার যে নীতিগত প্রয়োজন তা পূরণ করা। নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় তাদের প্রতি সংবেদনশীলতা বজায় রেখে একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো অবস্থায়ই কারো মানবাধিকার রক্ষার ঘাটতি না হয়। এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাকে আমি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করি না। এরসঙ্গে অনেক কিছু জড়িত আছে। একদিকে শূন্যতার সুযোগ নেয়া, অন্যদিকে জিওপলিটিক্সে যে পরিবর্তন ঘটছে মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে আশপাশের অঞ্চলে, ওইদিকে ভারতবর্ষের মণিপুরে যে বিদ্রোহ, এসবগুলোকে যদি আপনি আনেন, জিওপলিটিক্সের এই ঘটনাগুলো ভেরি সিগনিফিকেন্ট বলে আমি মনে করি। 

শনিবার রাঙ্গামাটি সেনানিবাসে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জাতিগোষ্ঠীর নেতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেছেন, রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমপ্রীতি নষ্ট করতে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ঘটনার সূত্রপাত খাগড়াছড়িতে গত বুধবার চোর সন্দেহে বাঙালি যুবক মোহাম্মদ মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মামুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বাসিন্দা। এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার বিকালে দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। পূর্বনির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে স্থানীয় পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আসা সাধারণ বাঙালি শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া করে। এতে আন্দোলনকারী সাধারণ বাঙালি শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর দফায় দফায় কয়েকটি ঘটনায় চারজন নিহত হয়। জারি করা হয় ৪৪ ধারা।
 

Link copied!