সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
মো. আব্দুর রব হাওলাদার। পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস)। দেশে চাকরির পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মরত ছিলেন ভুটান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম হাইকমিশনেও। বর্তমানে কর্মরত ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের হোম বেইজড স্টাফ হিসেবে। যদিও সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী তার এখন অবসরে থাকার কথা এবং তা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকেই। অথচ চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় সাত বছর ধরেই তিনি রয়েছেন বহালতবিয়তে। যার নেপথ্যে রয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতার প্রভাব। বয়স অতিক্রম করলেও ফ্যাসিবাদী প্রভাব খাটিয়েই দেশ-বিদেশে এখনো কর্মরত তিনি, যা এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়নি বলেই ধারণা করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাখো বেকারের দেশে চাকরির মেয়াদ শেষেও অবসরে না যাওয়ার নজির গড়েছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বয়স জালিয়াতির মাধ্যমেই স্বৈরাচার-ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর আব্দুর রব হাওলাদার তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রভাব খাটিয়ে গত সাত বছর ধরেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত।
সূত্র জানায়, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার চাখার ফজলুল হক ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আব্দুর রব হাওলাদার এসএসসি পাস করেন ১৯৭৩ সালে। ওই পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ছিল চাখার নং-৬৯। এসএসসির সনদপত্রে তার জš§তারিখ ২০-১২-১৯৫৮ ইং। নিবন্ধন সংখ্যা ২৫৫১৫। সে হিসেবে সরকারি চাকরির বয়স অনুসারে গত ১৯-১২-২০১৭ তারিখে তার চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা। এখনো কীভাবে চাকরিতে বহাল রয়েছেন তিনিÑ তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। তার অনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি বেতনের নামে সরকারের লাখ লাখ টাকা আÍসাতের অভিযোগও উঠছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, যেহেতু তার সার্টিফিকেট অনুসারে এখন অবসরে থাকার কথা; কিন্তু তিনি চাকরিতে বহাল রয়েছেনÑ সেহেতু সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ এমন ধারণাও করছেন বয়স কমাতে হয়তো তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন।
আব্দুর রব হাওলাদারের তৎকালীন এক সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি ও আব্দুর রব হাওলাদার চাখার ফজলুল হক ইনস্টিটিউশন থেকে একসঙ্গে এসএসসি পাস করেছি। তিনি কীভাবে এখনও সরকারি চাকরিতে বহাল আছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। কারণ, আমিও একই সময় শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি। ২০১৭ সাল থেকে আমি অবসরে আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এলাকার অনেকেই মনে করেন, আব্দুর রব হাওলাদার আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করেই অবৈধভাবে এখনও চাকরিতে বহাল রয়েছেন।
আব্দুর রব হাওলাদার দেশে চাকরির পাশাপাশি ভুটান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম হাইকমিশনেও দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ভারতের আগরতলায় (বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন) কর্মরত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া হাইকমিশনে থাকাকালীন সময়ে আদম ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েন তিনি। সে সময় বেশকিছু লোককে তিনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যান এবং ব্যবসায় সাফল্যও পান। যদিও পরবর্তীতে অনেকের টাকাই আÍসাৎ করেছেন বলে চাউর রয়েছে। তবে ভুক্তভোগীরা এখনো তার বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। কারণ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন তিনি। এখনো বহাল থাকার নেপথ্যের রহস্যজনক প্রভাবকেই ভয় পাচ্ছেন তারা।
এদিকে চাকরির মেয়াদ শেষেও সাত বছর ধরে অতিরিক্ত সময়ের বেতন-ভাতাসহ সরকারি সব সুবিধাভোগী আব্দুর রব মালয়েশিয়া থাকা অবস্থায় আদম ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত অর্থে ঢাকার আগারগাঁওয়ে কিনেছেন ফ্ল্যাট। পরিবারকে যাপনের সুযোগ দিয়েছেন বিলাসী জীবন। তার এক ছেলেকে পড়াচ্ছেন প্রাইভেট মেডিকেলে। শুধু তা-ই নয়, সূত্র বলছে নামে-বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে তার। যা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমপদধারীদের মধ্যেও এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রব হাওলাদারের হোয়াটসঅ্যাপে গত দুদিন ধরে তথ্য ও প্রমাণ পাঠিয়ে মতামত চাইলেও তিনি কোনোরকম মন্তব্য করেননি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হককে জানালে তিনি বলেন, তার সম্পর্কে ওইভাবে জানি না। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। এখন দেখতে হবে। সার্টিফিকেটই বলবে তার অবসরের বছর কবে। দেখতে হবে তার অবসরের সময়টা ২০১৭, নাকি আরও পরে।