Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক জয়

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

নভেম্বর ৬, ২০২৪, ১১:৩৮ পিএম


ট্রাম্পের ঐতিহাসিক জয়
  • শক্তিশালী ও নিরাপদ দেশ গড়ার অঙ্গীকার
  • শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প ২৭৭ কমলা ২২৬
  • বিশ্বনেতাদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইতিহাস গড়লেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ফের হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হচ্ছেন। তীব্র নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর বাংলাদেশ সময় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নির্বাচিত হওয়ার প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে ৭ ভোট বেশি পেয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন আলোচনায় থাকলেও ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস বসতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে। নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে চমক হয়ে দাঁড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট। 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে আমেরিকা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ফক্সনিউজ। ওই বিশ্লেষণে এই সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সব ভোট গণনা শেষের আগেই প্রাথমিক ফলাফল বিশ্লেষণে এমন ধারণা নিয়েছে এ মার্কিন সংবাদ মাধ্যমটি। গতকাল ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকাল চারটায় ফক্সনিউজ সর্বশেষ খবরে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রাপ্ত ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ২৭৭। অপরদিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৬ ভোট। দেশটিতে মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। জিততে হলে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে। তা ইতোমধ্যে ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন এবং আরও কিছু রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তার দখলে যাওয়ার খুব সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, ট্রাম্পের জয়ের খবরে বিভিন্ন রাজ্যে উৎসবে মেতেছেন তার সমর্থকরা। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারের প্রধান কার্যালয় থেকে বিবিসি জানিয়েছে, ফক্স নিউজ যখন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের অনুমান ঘোষণা করছিল তখন হলরুমে উপস্থিত সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। তাদের কান ফাটানো জয়ধ্বনিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেক সমর্থক আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ট্রাম্পের নামে স্লোগান দিতে থাকেন।
অপরদিকে কমলা এখনও হাল ছাড়ছেন না। তার প্রচারশিবিরের সহসভাপতি সেড্রিক রিচমন্ড বলেন, ‘আমাদের এখনও ভোট গণনা করা বাকি আছে। আমাদের এমন রাজ্য রয়েছে যেগুলোর ফল এখনও নিশ্চিত নয়। আমরা রাতেও লড়াই চালিয়ে যাব। যাতে প্রতিটি ভোট গণনা হয়। প্রতিটি কণ্ঠস্বর যাতে নিশ্চিত করা হয়। নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিছু রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে স্নাইপার ইউনিট। রয়েছে কয়েক স্তরের গোয়েন্দা সতর্কতা। ভোট শেষেও বেশ কয়েক দিন এ ধরনের নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

সমৃদ্ধ আমেরিকা গড়ার অঙ্গীকার : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় ঘোষণা দিয়ে তার সমর্থকদের বলেন, তিনি একটি ‘শক্তিশালী, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ আমেরিকা তৈরি না করা পর্যন্ত বিশ্রাম নেবেন না।’ ‘প্রতিটি দিন আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আপনাদের জন্য লড়াই করব’ ট্রাম্প ফ্লোরিডার পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে তার সমর্থকদের সামনে দেয়া এক ভাষণে বলেন। ট্রাম্প যখন ভাষণ দিতে মঞ্চে উঠেন, তখন দেশের প্রধান টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো তাকে গুরুত্বপূর্ণ জর্জিয়া, নর্থ ক্যালিফোর্নিয়া এবং পেনসিলভানিয়া রাজ্যে বিজয়ী ঘোষণা করে দিয়েছে।

চমৎকার জয়, আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে— মন্তব্য ট্রাম্পের : জয়ের একটু আগে ট্রাম্প ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এ সময়ে মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার রানিংমেট জে ডি ভান্স। ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান করার সুযোগ দেবে।’ এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলে জানান তিনি। ট্রাম্প মেলানিয়ার লেখা বইয়ের প্রশংসা করে বলেন, বইটি ‘আমেরিকার সর্বাধিক বিক্রীত’ বইয়ের একটি। তিনি (মেলানিয়া) দারুণ কাজ করেছেন। তিনি জনগণকে সাহায্য করতে কঠোর পরিশ্রম করেন। নিজের সন্তানদের অভূতপূর্ব বলে উল্লেখ করে তাদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। তিনি প্রত্যেক সন্তানের নাম ধরে ডাকেন। তারা মঞ্চে এসে দাঁড়ান। এরপর ট্রাম্প তার রানিংমেট জে ডি ভান্সকে শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, তিনি (ভান্স) যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন।

১৩১ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন ট্রাম্প : ট্রাম্প নির্বাচনে গতবার পরাজিত হয়েছিলেন। এরপর এবারের নির্বাচনে আবার জয় পেয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে দেশটিতে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর আবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হতে চলেছেন ট্রাম্প। এটি ট্রাম্পের দারুণভাবে এক রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস হতে চলেছে। তার আগে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এমন ইতিহাস গড়েছিলেন। তার পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি এ রেকর্ড করতে চলেছেন। গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড নির্বাচনে হেরে আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মার্কিন কংগ্রেসে দুই মুসলিম নারীর বাজিমাত : মার্কিন নির্বাচনে আবার খেল দেখিয়েছেন দুই মুসলিম নারী। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির ইলহান ওমর ও রাশিদা তালিব। গতকাল আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম দুই মুসলিম নারী রাশিদা তালিব এবং ইলহান ওমর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। মার্কিন কংগ্রেসে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত প্রথম মহিলাও হলেন তালিব। গত মঙ্গলবার ডিয়ারবর্নের বৃহৎ আরব-আমেরিকান সমপ্রদায়ের সমর্থনে মিশিগানের প্রতিনিধি হিসেবে চতুর্থ মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ইলহান ওমর, শরণার্থী এবং সোমালি-আমেরিকান। তিনি মিনেসোটাতে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনটি দৃঢ় গণতান্ত্রিক ধারায় ৫ জেলার প্রতিনিধিত্ব করে। এর মধ্যে মিনিয়াপোলিস এবং বেশ কয়েকটি শহরতলির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সামরিক সহায়তার একজন শীর্ষস্থানীয় সমালোচক তালিব। তিনি প্রাথমিক পর্বে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে ছিলেন। এরপর রিপাবলিকান প্রার্থী জেমস হুপারকে ডিয়ারবর্ন এবং ডেট্রয়েটের প্রতিনিধিত্ব করতে পরাজিত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ইলহান তার নির্বাচনি প্রচারণায় কঠোর পরিশ্রমের জন্য তার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমরা এক লাখ ১৭ হাজার ৭১৬ দরজায় কড়া নেড়েছি। আমরা এক লাখ আট হাজার ২২৬টি কল করেছি এবং এক লাখ ৪৭ হাজার ৩২৩টি ম্যাসেজ পাঠিয়েছি। একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এটি আমাদের সবার জয়।

বিশ্বনেতাদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন ট্রাম্প : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় ঘোষণা করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় ইলেক্টরাল কলেজ ভোট পাননি তিনি। তবে নিজের এই ঘোষণার পরই বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসছেন সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানানো বিশ্বনেতাদের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, হাঙ্গেরির নেতা ভিক্টর অরবান ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও রয়েছেন। গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও হিন্দুস্তান টাইমস। অভিনন্দন বার্তায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘সম্মান এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে আরও শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা চার বছর ধরে একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত...।’

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ‘ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তনের’ জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘প্রিয় ডোনাল্ড এবং মেলানিয়া ট্রাম্প, ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তনের জন্য অভিনন্দন! হোয়াইট হাউসে আপনাদের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য একটি নতুন সূচনা এবং ইসরাইল ও আমেরিকার মহান জোটের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির বার্তা দিচ্ছে।’ আর অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার বলেছেন, ‘আমাদের ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ককে আরও সমপ্রসারিত এবং শক্তিশালী করার জন্য বিশ্বব্যাপী সব চ্যালেঞ্জ একসাথে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য’ উন্মুখ তিনি। সাবেক রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ট্রাম্পের এই বিজয় ইউক্রেনের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। যদিও ট্রাম্প এই যুদ্ধের জন্য মার্কিন আর্থিক সহায়তা কতটা কমাতে পারবেন সে বিষয়ে তিনি অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন। এদিকে হাঙ্গেরির উগ্র ডানপন্থি নেতা ভিক্টর অরবান বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ের পথে রয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘শুভ সকাল হাঙ্গেরি! একটি দুর্দান্ত জয়ের পথে।’ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য আমার বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্তরিক অভিনন্দন। আপনার পূর্ববর্তী মেয়াদের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে আমি ভারত-মার্কিন ব্যাপক বৈশ্বিক এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমাদের সহযোগিতা পুনরায় এগিয়ে নেয়ার জন্য উন্মুখ। আসুন একসাথে, আমাদের জনগণের উন্নতির জন্য এবং বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য কাজ করি।’

ইলন মাস্ক রিপাবলিকান পার্টির ‘নতুন তারকা’ : বিশ্বের অন্যতম ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ককে রিপাবলিকান পার্টির ‘নতুন তারকা’ হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।  গতকাল বুধবার ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে বক্তব্য রাখার সময় এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় মাস্ককে ‘বিস্ময়কর’ ব্যক্তি হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। বক্তব্যে ইলন মাস্ককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ট্রাম্প। তিনি জানান, একবার স্পেসএক্স রকেটের একটি ভিডিও দেখার সময় তিনি মাস্ককে ৪০ মিনিটের জন্য আটকে রেখেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট পদে জয় কিভাবে : সাধারণত নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়লাভ করেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী বেশি সংখ্যক ভোটারের ভোট (পপুলার ভোট) পাওয়ার পরও বিজয়ী নাও হতে পারেন। এর কারণ দেশটিতে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে বিশেষ একটি ব্যবস্থায়। এক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের নির্বাচনি লড়াইয়ের বদলে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে স্থানীয়ভাবে, তথা প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ হলো একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। দেশটিতে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি। মাইন ও নেব্রাসকা- এই দুটি অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিয়ে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পাবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর বিজয়ী প্রার্থীর রানিং মেট হবেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট। সাধারণ ভোটারদের ভোটে পিছিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত পাঁচজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যার মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ ডব্লিউ বুশও রয়েছেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ আসলে কী : ইলেক্টোরাল কলেজ হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ব্যবহূত রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় আইনের একটি জটিল ব্যবস্থা, যা দেশটির সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত। ‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেয়ার অধিকারী। ইলেক্টোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ইলেকটরস বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচকমণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয় এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাই করেন। কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেট বা অঙ্গরাজ্যে ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়, যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সেনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। সবচেয়ে বড় ছয়টি স্টেট হলো ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫), টেক্সাস (৪০), নিউইয়র্ক (২৯), ফ্লোরিডা (২৯), ইলিনয় (২০) এবং পেনসিলভেনিয়া (২০)। এই পদ্ধতির ফলে ছোট রাজ্যগুলোকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, যার অর্থ হচ্ছে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অবশ্যই পুরো দেশজুড়ে ভোট পেতে হবে। সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের হাতে থাকা ইলেক্টোরাল ভোট সেই প্রার্থীকেই দেয়, যিনি ওই অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন। ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১% পেয়েছেন, তাকে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলিই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও, তাহলেও বিজয়ীপ্রার্থী ওই নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোটই পাবেন। ফলে সবগুলো অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে একজন প্রার্থী ভোটারদের ভোট বেশি পাওয়ার পরেও ইলেকটোরাল ভোট কম পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যেতে পারেন। ২০০০ সালে ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোর এবং ২০১৬ সালে আরেক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছিল।

ইলেক্টোরাল ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে : ইলেক্টোরাল ভোটে যদি কোনো প্রার্থী এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইন সভার নিম্ন-কক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ ভোট দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাছাই করে থাকেন। বাকি দুইজন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নেয় দেশটির সিনেট। যদিও এরকম ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে একবারই ঘটেছে। ১৮২৪ সালে এভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জন কুইনসি অ্যাডামস। তবে বর্তমানে অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি দুটির যে আধিপত্য রয়েছে, তাতে ওইরকম ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
 

Link copied!