আনোয়ার হোসাইন সোহেল
নভেম্বর ১০, ২০২৪, ১১:৪০ পিএম
আনোয়ার হোসাইন সোহেল
নভেম্বর ১০, ২০২৪, ১১:৪০ পিএম
ডিজিটাল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর জালিয়াতি ও সব অনিয়ম খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডাক বিভাগের অধীনে ডিজিটাল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ-এর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিয়মিত নিরীক্ষার পাশাপাশি আগের সব কাজের ফরেনসিক নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে মোবাইল ফাইন্যান্স কোম্পানিটির জালিয়াতি ও অনিয়ম তদন্তে ‘ফরেনসিক নিরীক্ষা’র এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। ফরেনসিক নিরীক্ষা হলো, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসহ সব তথ্য খতিয়ে দেখা। ওই নিরীক্ষায় জালিয়াতি ও অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যবহার করা হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগদের প্রশাসক বদিউজ্জামান দিদার আমার সংবাদকে বলেন, আমি এই ধরনের কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি ফরেনসিক নিরীক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম সেটি এখনো শুরু করতে পারিনি। সাবেক প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তানভীর আহমেদ মিশুকের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো প্রকাশ থ্রেড পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে দিদার আমার সংবাদকে বলেন, না, ওই ধরনের কোনো থ্রেড পাচ্ছি না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আদেশে গত ২১ আগস্ট মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে এক বছরের জন্য নগদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন। প্রশাসকের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তার জন্য নগদের বিভিন্ন পদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও ছয় কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে ফেসবুকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠজন ও নগদের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তানভীর আহমেদ মিশুক। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘খেয়াল করে দেখবেন, কত ব্যাংকের বিরুদ্ধে কত অভিযোগ। হাজার হাজার, এমনকি লক্ষ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আছে। তারপরও সেসব ব্যাংকে তিনি প্রশাসক বসাননি। কিন্তু গভর্নর পদে বসার পর রাতারাতি তিনি নগদে প্রশাসক বসিয়েছেন। এর মানে সব ছক আগে থেকেই করা।’ তানভীর আহমেদ আরও লিখেছেন যে, স্বচ্ছতার স্বার্থে ফরেনসিক তদন্তে তার আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো বিদেশি কোম্পানি দিয়ে তদন্ত করতে হবে।
ফেসবুকে কেন তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নে নগদের তানভীর আহমেদ মিশুক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘নগদ আমাদের কোম্পানি, আমাদের টাকায় নগদ চলে। এটাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এসব আমরা আইনিপথে মোকাবিলা করব। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ যদিও ওই পোস্ট দেয়ার পর হাইকোর্টে একটি রিট করেন মিশুক। এছাড়া নগদের মালিকানা নিয়ে দেশের কোথাও কোনো মামলা হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আহসান এইচ মনসুরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলের কমিশন বাণিজ্য, এককভাবে সরকারি বিভিন্ন ভাতার লেনদেন পরিচালনাসহ বিনা বাধায় অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে নগদ— এমন অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের একক সিদ্ধান্তে নগদকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। যাকে দেশের অর্থনীতিবিদরা নজিরবিহীন ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ও লেনদেনে অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
সমপ্রতি নগদের প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আগের সব কাজের মান নির্ধারণে ফরেনসিক নিরীক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এদিকে প্রশাসক নিয়োগের পর নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকসহ আগের ব্যবস্থাপনা দল কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মিশুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসককে হুমকি ধমকি দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর নিজের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বনানী থানায় তানভীর এ মিশুকের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন নগদের প্রশাসক বদিউজ্জামান দিদার। অভিযোগে বদিউজ্জামান দিদার বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর মিশুক তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে খুদে বার্তা পাঠানোর পর তিনি ‘একধরনের হুমকি বোধ’ করেন।
নগদে ফরেনসিক নিরীক্ষার বিষয়ে জানতে নগদের সাবেক প্রধান নির্বাহী তানভীর এ মিশুকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার মন্তব্য জানা যায়নি।
২০১৯ সালের মার্চে নগদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্থায়ী লাইসেন্স নিয়ে চলছে। গত জুনে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বাধীন বোর্ড মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সপ্তমবারের মতো অস্থায়ী লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ায়। যা আগামী ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।