Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪,

ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ১১:১২ পিএম


ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে

আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে লেনদেন বেড়েছে চার হাজার ১০৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা

চলতি অর্থবছরের আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে চার হাজার ১০৪ কোটি ৮১ লাখ টাকারও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকলেও এটিএম, পয়েন্ট অব সেল (পস), কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) এবং ই-কমার্সে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। মানুষ এখন নগদ টাকা থেকে কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে এটিএম, পস, সিএআরএমও ই-কমার্সে লেনদেন হয়েছে ৩৮ হাজার ২৭০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা তার আগের মাস আগস্টে ছিল ৩৪ হাজার ১৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে চার হাজার ১০৪ কোটি টাকা। এছাড়াও গত সেপ্টেম্বরে ট্রানজেকশন হয়েছে চার কোটি ৫৭ লাখ ৯ হাজার ৬৭০টি। তার আগের মাসে লেনদেন হয়েছিল তিন কোটি ৯০ লাখ ১৫ হাজার ৫৬৫টি। লেনদেন বেড়েছে ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার ১০৫টি।

দ্রুত লেনদেনের সুবিধার্থে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটিএম বুথ স্থাপন করেছে। বর্তমানে সারা দেশে এটিএম বুথের সংখ্যা রয়েছে ১৩ হাজার ১৬টি। দিনদিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বরে এটিএম বুথে লেনদেন হয়েছে দুই কোটি ৭১ লাখ ৮৮ হাজার ১৩টি, যা আগস্টে ছিল এক কোটি ৭৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৬টি। লেনদেন বেশি হয়েছে ২৭ লাখ ১৯ হাজার ১৩৭টি। সেপ্টেম্বরে লেনদেন করা টাকার পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা, আগস্টে যা ছিল ১৮ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা আর সেপ্টেম্বরে লেনদেন বেড়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন দোকান, বিপণিবিতানে পস মেশিনের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৬৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩০টি, লেনদেনকৃত টাকার পরিমাণ দুই হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। তার আগের মাস মার্চে লেনদেন সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ ৫২ হাজার ৮০০টি, লেনদেনকৃত টাকার পরিমাণ দুই হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ট্রানজেকশন বেশি হয়েছে ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩০টি এবং লেনদেনকৃত টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৮৫ কোটি টাকা।

এদিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ই-কমার্স। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কেনাকাটা করতে পারছেন ক্রেতাসাধারণ। যার ফলে দিনদিন বাড়ছে ই-কমার্স লেনদেনও। গত সেপ্টেম্বর মাসে ই-কমার্সের মাধ্যমে ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯২১টি লেনদেন হয়েছে। একই সময় লেনদেনকৃত টাকার পরিমাণ এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। তার আগের মাসে এ খাতে লেনদেন হয়েছিল ৫৩ লাখ ১৬ হাজার ২২৯টি। লেনদেনকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল এক লাখ দুই হাজার এক কোটি টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫৯২টি এবং লেনকৃত অর্থ বেড়েছে ১৬৭ কোটি টাকা।

এছাড়া দিনদিন বাড়ছে সিআরএমে লেনদেনও। এখন অনেক ব্যাংকের শাখা ৫০ হাজার টাকার কম হলে সরাসরি জমা না নিয়ে সিআরএমে দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। যদিও সিআরএমে টাকা জমা দিতে গিয়ে নেটওয়ার্ক ভোগান্তি, ছেড়া টাকা জটিলতাসহ বেশকিছু ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। তারপরও দিনদিন তথ্যপ্রযুক্তি আপডেট করছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত সেপ্টেম্বরে সিআরএমে লেনদেনের সংখ্যা ছিল এক কোটি ২৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫০৬টি। টাকার পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তার আগের মাসে লেনদেনের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪৬ হাজার ৭৬০টি। টাকার পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে ট্রানজেকশন বেড়েছে ২৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৪৬টি। লেনদেনকৃত টাকার পরিমাণ বেড়েছে দুই হাজার ৪৪ কোটি টাকা।

ভার্চুয়াল লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে ঝুঁকির পরিমাণও। বিভিন্ন কৌশলে সক্রিয় হচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। সম্প্রতি সাইবার হামলা প্রসঙ্গে সতর্কতামূলক একটি নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় এসব সাইবার অপরাধী প্রতিনিয়ত দেশের ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের হয়রানি করছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতেও সাইবার আক্রমণের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ম্যালওয়ার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্ভাব্য ডেটা লঙ্ঘন বা র্যানসমওয়্যার আক্রমণের ক্ষেত্রে অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিসহ সিভিভি যাচাই করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি লেনদেনের জন্য ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ব্যবহার করতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া ভুয়া কিউআর কোড সম্পর্কে ব্যাংক কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যে কোনো আর্থিক লেনদেনের জন্য টুএফএ/এমএফএ ব্যবহার করুন। অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করতে এআই এবং মেশিন লার্নিং (যদি সম্ভব হয়) ব্যবহার করুন। বেশিসংখ্যক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যে নজর রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিনিময় করা বিন ডেটার পরিমাণ সীমিত করা এবং অননুমোদিত অ্যাক্সেস এড়াতে এটি নিরাপদ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কীভাবে সম্ভাব্য বিন শনাক্ত করতে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়, সে সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ই-রিটার্ন পরিশোধের ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণ

এদিকে গতকাল বুধবার অনলাইনের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত কার্ড ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ২৩ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেনে গ্রাহকের কাছ  থেকে লেনদেনপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ টাকা (ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত) এবং ২৫ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে লেনদেন প্রতি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা (ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত) আদায় করা যাবে। এছাড়া এমএফএস ও পিএসপি ওয়ালেট ব্যবহার করে লেনদেনে গ্রাহকের কাছ থেকে লেনদেনপ্রতি এক শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করে আদায় করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Link copied!