ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৮:২৫ পিএম
- পরিষদে অনিয়ম-দুর্নীতি চাঁদাবাজি, ভূমিদখল
- প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সম্পদের অর্জনের অভিযোগ দুদকে
১৫ বছরের ব্যবধানে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আয়ুব আলী। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে হওয়া অভিযোগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আয়ুব আলী একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও। চাঁদাবাজি, ভূমিদখল, ইউনিয়ন পরিষদে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমেই এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আয়ুব আলী তার তিন ভাইকে নিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলদারির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তার এক ভাই আব্দুল কাইয়ুম একই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। গত ১৫ বছরে ক্ষমতার দাপটে তারা প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এখন চড়ে বেড়ান ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িতে। শুধু তাই নয়, তাদের পরিবারের চলাফেরার জন্য রয়েছে পাজেরো, প্রিমিও ও এলিয়েনসহ ছয়টিরও বেশি গাড়ি। স্থানীয় সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধেও সক্রিয় অবস্থান ছিল তার ও তার ভাইদের। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর হওয়া একাধিক হত্যা মামলারও আসামি আয়ুব আলী।
দুদকে হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজ এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তারা। এর মধ্যে তেঁতুলঝোড়া ভারট্রেক্স গার্মেন্টসের পাশেই গড়ে তুলেছেন চার থেকে পাঁচতলা বিশিষ্ট চারটি সুউচ্চ ভবন। ভরারী গ্রামে একবিঘা জমির ওপর গড়েছেন সাতটি বিল্ডিং বাড়ি। বটতলা এলাকায় তিনটি বিল্ডিং বাড়ি। বেস্ট ড্রেস নামে নিজস্ব গার্মেন্টস এবং এর সাথে ছয়টি বিল্ডিং বাড়ি। রাজারঘাট ফ্যাক্টরিসহ দুটি বিল্ডিং বাড়ি। ধল্লা এলাকায় দুই বিঘা জমির ওপর একটি বাংলো বাড়ি। রিভায়েতপুরে ৩০ বিঘা জমি ও সাভারে নামে-বেনামে আনুমানিক ৪০ বিঘা জমি কিনেছেন তারা।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, বিগত ১৫ বছরে আয়ুব আলীর আয়ের উৎস ছিল ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়ি নির্মাণের শুরু থেকেই বিশাল অংকের চাঁদা আদায়। সরকারি-বেসরকারি জমি দখল। বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে জোরপূর্বক চাঁদা ও জুট আদায়। অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ। অটোরিকশা চালকদের থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায়। এ ছাড়াও স্থানীয় মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও করতেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগের শাষণামলে সবাই দেখেছে এমপি-মন্ত্রী কিংবা দলীয় বড় বড় পদধারীদের সম্পদের পাহাড়। কিন্তু একই সময়ে একজন ইউপি সদস্যও গড়েছেন শত কোটি টাকার সম্পদ। যা অবিশ্বাস্য অকল্পনীয়। যারা ১৫ বছর আগেও পারিবারিকভাবে ছিলেন অসচ্ছল। অন্যের বাড়ি দেখাশোনা ও যাত্রী পরিবহনের হেল্পার থেকে এখন তারা নিজেরাই চড়ে বেড়াচ্ছেন ল্যান্ড ক্রুজার। সবশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা পালিয়ে গেলেও আয়ুব আলী ও তার ভাইয়েরা এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
স্থানীয়রা আরও জানান, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম রাজিব ও তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের প্রত্যক্ষ ইন্ধনেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আয়ুব আলী। শুধু তাই নয়, স্থানীয়ভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার ও ধরে রাখার লক্ষ্যে প্রকাশ্যে পিস্তল নিয়ে ঘুরতেন আয়ুব আলী ও তার ভাইয়েরা।
আরএস