Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫,

বিজিএমইএর প্রশাসককে সদস্যদের চ্যালেঞ্জ

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ১২:২২ পিএম


বিজিএমইএর প্রশাসককে সদস্যদের চ্যালেঞ্জ
  • বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি— আনোয়ার হোসেন
  • ১৪ লাখ টাকা খরচ করে বিজিএমইএতে ল’ফার্ম নিয়োগ
  • দৈনিক প্রতি কন্টিনারে ক্ষতি ১২০ মার্কিন ডলার

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)  প্রশাসকের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনটির সদস্যরা। গত ২৫ নভেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর সংগঠনটির ১০ সদস্যের আবেদনের ভিত্তিতে দুটি লিগ্যান নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও অডিটর নিয়োগ, ভোটার তালিকা না করা, আইন লঙ্ঘন করে সদস্য তালিকা প্রস্তুত করা এবং বিজিএমইএর আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ তুলে সংগঠনটির সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস এম নুরুল হকের নেতৃত্বে ৮৭ সদস্যের স্বাক্ষরিত অপর একটি চিঠি বিজিএমইএতে পাঠানো হয়। গত ১২ ডিসেম্বর সদস্য পদ নবায়নে অডিটর নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন মোল্লা এ্যাপারেলসের প্রোপাইটর আবদাল ওয়ারিশ আবির। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশনে অভিযোগ করা হয়, বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করার কথা। কিন্তু ইতোমধ্যে তার মেয়াদের ৭৪ দিন অতিবাহিত হলেও তিনি এখনো ভোটার তালিকাই  প্রস্তুত করতে পারেননি। উল্টো নানা অজুহাতে তিনি নির্বাচন আয়োজন না করে কালক্ষেপণ করছেন।

জানা গেছে, পতিত সরকারের আমলে নির্বাচিত বোর্ডকে বাতিল করে গত ২৪ অক্টোবর বিজিএমইএ অফিস স্মারকের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সংগঠন আইন-২০২২ এর ধারা ১৮ এর আলোকে বিজিএমইএতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। পরবর্তীতে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘সহায়ক কমিটি’ গঠন করা হয়। রিটকারীদের অভিযোগ, বিজিএমইএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত একটি বাণিজ্যিক সংগঠন। এটি পরিচালিত হয় বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২ অনুযায়ী, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ ও সংগঠনের নিজস্ব সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী কিন্তু আপনার কর্মকাণ্ড তার বিপরীতমুখী। 

রিটে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ এক শ্রেণির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আপনাকে ভুল বুঝিয়ে তাদের নিজস্ব স্বার্থে কোটারিভুক্ত হয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। অথচ এদের বেতন হয় আমাদের সদস্যদের দেয়া চাঁদা থেকে। এতে আরও বলা হয়, আপনি হুদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোং-কে অডিট ফার্ম হিসেবে বিজিএমইএর মেম্বার ফাইল অডিট অ্যান্ড ভেরিফিকেশনের জন্য ১৪ লাখ টাকা দিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। যা ডিটিও রুলস অনুযায়ী প্রশাসকের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। হুদা ভাসীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে ওপেন টেন্ডার পদ্ধতি ফলো করা হয়নি। এ বিষয়ে গত ২৫ নভেম্বর আপনাকে লিগ্যাল নোটিশ ও ২৮ ডিসেম্বর তারিখে প্রত্যায়নপত্র প্রেরণ ও হস্তগত হওয়ার পরও আপনি  নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড স্থগিত করেননি; যা আইন পরিপন্থী। 

বিজিএমইএর নিজস্ব আইন উপদেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আপনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অর্থের অপচয় করে আট লাখ টাকা দিয়ে একটি ল-ফার্মকে পরিমর্শের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে বিজিএমইএর আর্থিক ক্ষতি সাধনসহ আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করেছেন। 

রিট আবেদনকারীরা আরো বলেন, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আপনি বিজিএমইএর সদস্যদের ২০২৫ সালের সদস্যপদ নবায়নের

জন্য ট্রেড লাইসেন্স ও হালনাগাদ আয়কর সনদপত্রের কপি দাখিল করতে হবে। এছাড়া ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট ১৯৬৫-এর আওতায় হালনাগাদ কারখানার লাইসেন্সের অনুলিপি জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু লজ্জার বিষয় হলো বিষয়টি বিজিএমইএর সর্বোচ্চ দাপ্তরিক কর্মকর্তা (মহাসচিব) জানেন না।

জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি জারি করা গেজেটে বলা হয়েছে, বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদনকারীকে চেম্বারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার এবং অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট খাতের ট্রেড লাইসেন্সধারী হতে হবে। এবং উভয় ক্ষেত্রে আবেদনকারী টিআইএন নম্বরসহ হালনাগাদ আয়কর বিবরণীর কপি দাখিল করতে হবে এবং পরবর্তী প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট সংগঠন কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উক্ত ট্রেড লাইসেন্স ও আয়কর বিবরণী হালনাগাদ অনুলিপি দাখিল করতে হবে, অন্যথায় সদস্য পদ বাতিল হবে। রিটকারী মোল্লা এ্যাপারেলসের প্রোপাইটর আবদাল ওয়ারিশ আবির আমার সংবাদকে বলেন, প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বিজিএমইএর বোর্ডে বসে মজা পেয়েছেন। বাণিজ্য সংগঠনের আইন অনুযায়ী আমরা আয়কর ও ট্রেড লাইসেন্স দিলেই সদস্যপদ পুনরায় নবায়ন করতে পারব। বিজিএমইএর নিজস্ব আইন অনুযায়ী সদস্যপদ নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সদস্য যদি তিন বছর চাঁদা না দেয় তার সদস্যপদ এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। কেন এ প্রশাসক এসে উল্টো ধারা ধরিয়ে দিয়ে নতুন নিয়ম জারি করলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি তিনি নতুন আইন করেন সেক্ষেত্রে  সংগঠনের এজিএম হতে হবে। পরে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংসদে পাস হয়ে আসতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠন হিসেবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকেও অনুমতি নিতে হবে।

অভিযোগগুলো প্রসঙ্গে বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, আমাকে ১২০ দিনের সময় দিয়ে এখানে পাঠানো হয়েছে। তবে ১২০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে এমন কোনো ধরাবাধা আইন নেই। বিজিএমইএর ভোটার তালিকা নিয়ে একটা অস্বচ্ছতা আছে।  সবার মধ্যে একটা সন্দেহ আছে, ছিলো। দায়িত্ব নেয়ার পর আমি দেখি এখানে সদস্য সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। কিন্তু এখন তিন হাজার ৩৭৫ জনের মধ্যে ভোটার কারা হবেন এটা বুঝার জন্যই আমি ভোটার তালিকা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে কারা রপ্তানিকারক আর কারা কারাখানা মালিক এটা আমাকে জানতে হবে। প্রতিদিন যখন আমি পোশাক কারখানার রিপোর্ট পাই সেখানে দেখি ২১শ কারখানা অ্যাকটিভ আছে তাহলে প্রকৃত কারখানার সংখ্যা কত এটা আমার জানা দরকার। তাহলে এদের ভোটার তালিকায় নেব কি নেব না এটা জানা দরকার। যদি কোনো ফ্যাক্টরি লাইসেন্স রিনিউ না করে তাহলে কেন করল না আমরা তা জেনে তাকে সহযোগিতা করব। যদি ১২০ দিনের মধ্যে কাজ না হয় তাহলে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সময় চাইব। তিনি আরও বলেন, আমার ১২০ দিন শেষ হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে, আমি তখন সময় চাইব। অডিটর নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বিজিএমইএতে যারা আছেন তারা তো এতদিন ধরেই আছেন। তাই সঠিক তথ্য জানতে আমি থার্ড পার্টি হুদা ভাসী ল’ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া সহায়ক হিসেবে যাদের নিয়োগ দিয়েছি তাদের সঙ্গে আমার আগে পরিচয় ছিল না। বিধি মোতাবেক সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই আমি এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

Link copied!