Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫,

রিজার্ভ চুরির ৮০ ভাগ উদ্ধার

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:০৪ এএম


রিজার্ভ চুরির ৮০ ভাগ উদ্ধার
  • রেমিট্যান্সের প্রণোদনায় সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৭ হাজার কোটি টাকা
  • পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার

সাইবার অপরাধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০ ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ উদ্ধারে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গত পাঁচ মাসে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এবং দুর্নীতি কিছুটা কমে যাওয়ায় টাকা পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানই ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করেছে, সেসব অর্থ উদ্ধারেও কাজ চলছে। বিদেশিরাও সহযোগিতা করছেন বলে জানান মনসুর।

গভর্নর বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে পাচারে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে সমন্বিত আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। অর্থ পাচার ঠেকাতে প্রয়োজনে বিদেশের আদালতে মামলা মোকাবিলার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হবে। অর্থ পাচারে জড়িতদের বিষয়ে বিক্ষিপ্তভাবে মামলা

দায়ের না করে তাদের পরিবার ধরে ধরে সমন্বিত উপায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দিন-দুপুরে এমন চুরি পৃথিবীতে আর কোথাও হয়নি, এমনটা উল্লেখ করে তিনি অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কোথায় বাড়ি আছে, সম্পদ আছে, সেসব বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (এফবিআই) অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলেও জানান গভর্নর।

রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়ায় বছরে সরকারের সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০০  কোটি ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ২৫০ কোটি ডলার। প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স বছরে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠে এসেছে দুবাই। এটাকে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে গভর্নর জানান, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাই আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট (হস্তক্ষেপ) করার চেষ্টা করছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ দুই হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এছাড়া বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার কোটি ডলার হয়েছে। তবে গত ৮ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ১৬৭ কোটি ডলার।

এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘চার মাস চলার মতো রিজার্ভ আছে, তাই ভয়ের কিছু নেই।’ আহসান এইচ মুনসুর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রবাসীদের সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় দুবাই শীর্ষে উঠেছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাই আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে।

এদিকে, সদ্যবিদায়ী ডিসেম্বর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একক মাস হিসাবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। আর সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৪৯৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।

Link copied!