ইমরান হোসেন
জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১২:০২ এএম
ইমরান হোসেন
জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১২:০২ এএম
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে, মাস খানেকের মধ্যেই সমাধানের আশা করছি— ডিসি (ওয়ারী)
পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে, আশা করছি কমে আসবে— ডিসি (ওয়ারী)
ডিএমপির প্রতিটি থানাকেই মামলা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে, মামলা না নিলে ডিসি-এসিদের জানাতে হবে— মুখপাত্র ডিএমপি
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকেই মাদক, চুরি, ছিনতাই, দখল-চাঁদাবাজির হটস্পটে পরিণত হয়েছে রাজধানীর প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী। যাত্রাবাড়ী যেন এখন আতঙ্কের জনপদ। শুধু তাই নয়, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনারও ভঙ্গুর দশা। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কারণে এলাকাটিতে যানবাহনের চাপ এমনিতেই বেশি। এরই মধ্যে সড়কে অবৈধ পার্কিং ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা কাটার ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ভঙ্গুর দশায় ভুগতে হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা অবস্থানের কারণেই অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে— বলছেন নাগরিকরা। যদিও পুলিশ বলছে, অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকা আগের মতোই রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের ভাষ্য, গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর থেকেই কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম। সেই সুযোগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অপরাধ প্রবণতা আর ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল ও ওয়ারী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশন ১৫ দিনের কথা বলে ৪২ দিন ধরে সড়কে কাজ করছে। এতে রাস্তা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ধলপুরের দিকের রাস্তায় আর্মির প্রজেক্টের কারণে মূল সড়কে চাপ বাড়ছে। এর মধ্যে যেখানে ২০ শতাংশ রাস্তা থাকা দরকার সেখানে আছে মাত্র ৭ শতাংশ। তবুও আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কমিশনার স্যারের সঙ্গেও এ নিয়ে মিটিং করেছি। সেখানে বিভিন্ন সমন্বয়কসহ স্টেক হোল্ডাররাও ছিলেন। সড়কে শুধু আমরাই নেই। সিটি কর্পোরেশন, তিতাসসহ বিভিন্ন সংস্থাগুলোও রয়েছে। একেকবার একেক সংস্থা রাস্তা কাটছে। এতে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। আমরাও হিমশিম খাচ্ছি। তবুও আমরা চেষ্টা করছি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যেন ভেঙে না পড়ে। আশা করছি, মাস খানেকের মধ্যেই ট্রাফিক সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখানে চুরি, ছিনতাই, দখলবাজি বেড়েছে অতীতের চেয়ে কয়েকগুণ। দিনে দুপুরেও বাসা বাড়িতে ঘটছে চুরির ঘটনা। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানেও ঘটছে চুরির ঘটনা। দু-একটি ঘটনায় চোর ধরা পডলেও উত্তম মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দিতে বলছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। সাধারণ ডায়েরিও নিচ্ছে না তারা। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এমন একটি ঘটনা ঘটে গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায়। নয়ানগরের চাঁন মিয়া রোডের একটি বাসায় চুরি করতে গিয়ে চোর ধরা পড়লেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে অপরাগতা প্রকাশ করে। ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা পরবর্তীতে গলধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেয় চোরকে। ওইসময় মারধরে চোরের পা ভেঙে যায় বলেও জানান স্থানীয়রা। বাসাবাড়িতে এমন বেশকটি চুরির ঘটনার পরও পুলিশের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই রাতেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে চোর চক্র। গেল কদিন আগেই নয়ানগর মোড়ে একটি সোনার দোকানেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। দিনে যেমন তেমন ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের এখন রাতের ঘুম হারাম।
নয়ানগরের একটি মুদি দোকানের মালিক সোলায়মান মিয়া বলেন, দু-একদিন পরপরই চুরির ঘটনা ঘটছে। সোনার দোকারে চুরির পর থেকে আমরাও আতঙ্কে আছি। রাতে বাসায় গিয়েও দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারি না।
সম্প্রতি ধোলাইপাড়ে মসজিদ-বাজার দখলে প্রকাশ্যে তত্ত্বাবধায়কের বাড়িতে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হলেও যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সে সময় বলেছেন, দখল নয়, সেখানে মারামারি হয়েছে। সত্যতা পাওয়ায় মামলা নিয়েছেন তিনি। বিষয়টিকে মারামারি উল্লেখ করে পুলিশের নমনীয় ভূমিকায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। অথচ ঘটনাস্থলে প্রকাশে গুলি চালায় দখলবাজরা।
জানতে চাইলে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মফিজুল ইসলাম বলেন, চুরির ঘটনায় জিডি নয়, মামলা হবে। মামলা না নেয়ার কোনো কারণ নেই। যদি থানায় মামলা না নেয়, ভুক্তভোগীদের কেউ প্রতিকার না পায় সেক্ষেত্রে আমি আছি। জানাতে হবে, আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে আমরা টহল বৃদ্ধি করেছি। আশা করছি কমে আসবে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী মোড়, জনপথের মোড়, সায়েদাবাদ, গোলাপবাগ মোড়, ধোলাইপাড় মোড়সহ মহল্লার অলিগলিতেও এখন হরহামেশাই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পুলিশি টহল জোরদার না থাকায় গভীর রাতে ছিনতাই বেশি হচ্ছে সেখানে। এতে বেশি ভুগছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা। দূরপাল্লার যানবাহন থেকে নেমে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পথেই ছিনতাইয়ের ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। গত ১৮ ডিসেম্বর বন্ধুদের সঙ্গে সাজেক যাওয়ার উদ্দেশ্যে রায়েরবাগ থেকে সায়েদাবাদ আসেন কামরুল হাসান। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামার পথেই ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত তিনি। পুলিশ সে সময় জানায়, পেশাদার ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন হাসান। যাত্রাবাড়ীতে বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে ফের এমন ঘটনা ঘটার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ডিএমপির প্রতিটি থানাকেই মামলা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে। যদি কোনো থানায় মামলা না নেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি-এসিরা আছেন। তাদের জানাতে হবে। মামলা না নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।