Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫,

শিল্প খাতে বাড়ছে উদ্বেগ

মহিউদ্দিন রাব্বানি

জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১২:০৮ এএম


শিল্প খাতে বাড়ছে উদ্বেগ
  • পর্যাপ্ত জ্বালানির অভাবে ধুঁকছে কারখানা
  • গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বৃদ্ধির উদ্যোগে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা
  • অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার চিন্তাও করছেন
  • শ্রমিক অসন্তোষ যেন কাটছেই না

দেশের রুগ্ণ অর্থনীতিকে সবল করতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও আগের সরকারের ভুল নীতির রেশ কাটেনি এখনও। ডলারপ্রবাহ সামান্য বাড়লেও সংকট বিদ্যমান। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় অব্যাহতভাবে বাড়ছে সুদের হার। ফলে উচ্চ সুদের হারে বিনিয়োগ স্থবিরতা প্রকট হচ্ছে। এতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে শিল্পোদ্যাক্তারা। যার ফলে দেশে শিল্প খাতের সুদিন যেন ফিরছেই না। দিন যতই যাচ্ছে ততই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। 

ডলার ও জ্বালানি সংকট, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা দুর্বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে অস্বাভাবিক হারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগে চোখেমুখে ঘোর অন্ধকার দেখছেন শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা। সমপ্রতি শিল্প ও ক্যাপটিভের প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ টাকা ও ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এছাড়া প্রায় ৪৩টি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ককর দ্বিগুণ করার উদ্যোগের পাশাপাশি মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ও কমেপ্রসার প্রভৃতি শিল্পের আয়কর ১০ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তিন গুণ করা হয়। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। শিল্পমালিকরা বহুদিন থেকেই অভিযোগ জানিয়ে আসছেন, তারা বাড়তি দাম দিয়েও কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় নতুন করে আবারও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার চিন্তাও করছেন। 

ব্যবসায়ীরা জানান, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও শিল্পোদ্যোক্তারা এখন পর্যন্ত তা পাননি। এজন্য অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যদি নতুন করে আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয় তাহলে গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। ব্যাংক ঋণ এখন সাড়ে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ হয়েছে। গ্যাসের দাম আবার বাড়ালে শিল্প খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে। শিল্প খাতের লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। সরকারের জ্বালানি বিভাগ এরই মধ্যে শিল্পে গ্যাসের নতুন দাম বৃদ্ধির জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করার জন্য এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী নতুন কারখানার জন্য গ্যাসের দাম হবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এনএনজি) আমদানি ব্যয়ের সমান। এতে নতুন কারখানাগুলোকে বর্তমান দরের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবে। এমনকি পুরনো শিল্পকারখানাগুলোতে লোড বাড়াতে চাইলেও উদ্যোক্তাদের গুনতে হবে আড়াই গুণ বেশি মূল্য। 

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হয়েছে শিল্পকারখানা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুরু হয় শ্রমিক বিক্ষোভ। টানা শ্রমিক আন্দোলনে শত শত পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় মালিকরা। ব্যবসায়ীরা বলেন, বিদেশি ক্রয় আদেশগুলো নির্দিষ্ট সময়ে এবং চাহিদামতো গুণমান ঠিক রাখতে হয়। কিন্তু আমরা নানা সময়েই যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারি না। এতে বিদেশি বায়ার হারানোর সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সব সময় আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব চ্যালেঞ্জ কমেনি। বরং আরও বেড়েছে। কারণ এ সরকার মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাজারে টাকার প্রবাহ আরও কমিয়েছে। ঋণের সুদের হারও বাড়িয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়াতে টাকার মান কমানো হয়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতির হার নভেম্বর পর্যন্ত কমেনি। তবে ডিসেম্বরে এসে সামান্য কমে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হয়েছে। আগামীতে আরও কিছুটা কমতে পারে। 

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু শিল্প খাতে কখনোই গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ মেলেনি। বরং গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে শিল্প খাতকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উৎপাদন খরচ বাড়লে শিল্প খাতে বড় ধাক্কা আসবে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতির যে চাপ তা আরও বাড়বে। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

Link copied!