Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫,

২০২৫-২৬ অর্থবছর

আসছে সাড়ে ৮ লাখ কোটির বাজেট

মহিউদ্দিন রাব্বানি

জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১২:০০ এএম


আসছে সাড়ে ৮ লাখ কোটির বাজেট
  • আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ হলেই তৃপ্ত থাকতে চান নীতি-নির্ধারকরা
  • রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী নয়, গুরুত্ব পাবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির
  • ভ্যাট-শুল্কের বাড়তি চাপ আসছে ভোক্তার ঘাড়ে

গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিতে নেমে এসেছে অন্ধকার। এই ঘোর কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতির ইস্যু বিবেচনায় এনে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে চলতি বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেট কিছুটা বড় হবে। বড় এই বাজেটের লক্ষ্য মাঝারি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ও মূল্যস্ফীতি কমানো। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ হলেই তৃপ্ত থাকতে চান নীতি-নির্ধারকরা। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট লাখ কোটি টাকার বাজেট হতে পারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। এমন লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে এরই মধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেট যেন আগের মতো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী না হয়, এতে যেন গুরুত্ব পায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য। আর্থিক খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা উদ্যোগ আশার আলো দেখালেও কোনোভাবেই যেন বাগে আসছে না লাগামহীন মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় মাস পরও তা চড়ে আছে এগারোর কাছাকাছি। 

উচ্চাভিলাষ থেকে সরে খানিকটা সাবধানি বাজেট দেয়া হলেও চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৬.৮ শতাংশ। যদিও এর প্রায় বিপরীত চিত্র আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসে। গত অক্টোবরে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির পরিমাণ সাড়ে চার শতাংশ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দাতা সংস্থাটি।

বাজেট যেন গতানুগতিক রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী না হয় সেদিকে নজর দেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ বলেন, আট লাখ ৫০ হাজার কোটির টাকার বাজেট হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি সত্যি হলে সরকার ইনক্রিমেন্টাল বাজেটের দিকেই এগোবে। আর সেটি হলে একই স্ট্রাকচারে এগোবে সরকার। তা হলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সেভাবে সম্ভব হবে না। অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেয়ার সুযোগ নেই এখন। তাই বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক প্রকল্প নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে একটি যথার্থ বাজেট দিতে হবে।

আগামী বাজেটের আকার আট লাখ কোটি টাকার মতো হতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে পাঁচ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি সর্বোচ্চ দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এমনটাই জানিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। যদি প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশে উঠতে হয়, তাহলে সময় লাগবে আরও দুই বছর। ব্যাংক খাত নিয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ সাত লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এটা গত জুন শেষে ছিল ছয় লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। 

মূল্যস্ফীতির আগুন নেভাতে পানির বদলে তেল ঢালা হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে ২০১৪ সাল থেকে প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা বলা হলেও আমরা দেখেছি এই অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমেছে। ২০২২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিমাসে ১০০ কোটি ডলার রিজার্ভ কমেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল, সেখানে আমাদের বিশ্লেষণে পেয়েছি মাত্র চার দশমিক দুই শতাংশ।

Link copied!