আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ১২:০৮ এএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ১২:০৮ এএম
হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের হুমকি ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে গত সোমবার অনুষ্ঠানিকভাবে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মসনদে বসলেন তিনি। এরপরই রাশিয়ার পক্ষ থেকে ট্রাম্পের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আসে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দপ্তর ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দুটি বার্তা প্রচার করা হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ নেটওয়ার্ক আরটি ইন্টারন্যাশনাল এ তথ্য জানায়।
গত সোমবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাচ্ছে রাশিয়া। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করার জন্য তার ঘোষিত ইচ্ছাকে স্বাগত জানাচ্ছে মস্কো।
পুতিন বলেন, আমরা নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তার দলের সদস্যদের রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বক্তব্য শুনছি; যা বিদায়ী প্রশাসন বন্ধ করে দয়েছিল। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ রোধে সবকিছু করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ট্রাম্পে বক্তব্যও আমরা শুনতে পাচ্ছি। অবশ্যই আমরা এই ধরনের মনোভাবকে স্বাগত জানাই এবং নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানাই। অপরদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসনের নীতিগুলো মূলত বিশ্বব্যবস্থা নির্ধারণ করবে। মস্কো ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একই বৈঠকে সের্গেই এ মন্তব্য করেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেন সংঘাতসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর প্রভাব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে। অতএব, অনেক কিছু নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। প্রথমত, ইউরোপীয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের এশীয় মিত্র অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড সম্পূর্ণরূপে হোয়াইট হাউসের অবস্থানের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এই অর্থে তারা বর্তমান মার্কিন নেতৃত্বের অবস্থান চূড়ান্ত আকারে কী হবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। মন্ত্রী আরও বলেন, ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি তার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মিলবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
প্রসঙ্গত, ১৮৯০ সালের পর ট্রাম্পই প্রথম ব্যক্তি যিনি একটি নির্বাচনে পরাজয়ের পর আবারও প্রেসিডেন্ট হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল রোটুন্ডায় তার শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে হাজির ছিলেন বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্র নেতারাও।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, ছোট ছেলে ব্যারন ট্রাম্প, টিফানি ট্রাম্প, লারা ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার, ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
এছাড়া ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসসহ বিশ্বের বহু প্রভাবশালী শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই বিগত বাইডেন প্রশাসনের চার কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি বলেছেন, নিকট ভবিষ্যতে আরও সহস্রাধিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হবে। বহিষ্কৃত কর্মকর্তারা হলেন ট্রাম্পের পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের খেলাধূলা, শারীরিক ফিটনেস এবং পুষ্টিবিষয়ক কাউন্সিলের সদস্য জোসে অ্যান্দ্রেজ, জাতীয় অবকাঠামো বিষয়ক উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মার্ক মিলেই, সরকারি থিংকট্যাংক সংস্থা উইলসন সেন্টার ফর স্কলার্সের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান হুক এবং প্রেসিডেন্টের রপ্তানি বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কেইশা ল্যান্স বটমস।
ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, বিগত প্রশাসনের এক হাজারেরও অধিক কর্মকর্তা, যারা আমাদের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি ‘আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলুন (মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন)’ এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষন করেন তাদেরকে শনাক্ত ও ছাঁটাই করা হবে। আমার প্রেডিন্সিয়াল পার্সোনেল অফিস ইতোমধ্যে এ কাজ শুরু করেছে। পোস্টে বরখাস্ত হওয়া চার কর্মকর্তার নাম ও পেশাগত পদবী উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘এই চারজনকে আজ বহিষ্কার করা হয়েছে। শিগগিরই এ তালিকায় তাদের নামের সঙ্গে আরও অনেকের নাম যুক্ত হবে।’ নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প সরকারি ব্যয় সংকোচন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের জনবল কমানোর পাশাপাশি সরকারি কাজে দক্ষতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এ প্রতিশ্রুতি যদি পুরোপুরি পালন করা শুরু করেন তিনি, তাহলে আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।