মো. ইমরান খান
জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১২:০২ এএম
মো. ইমরান খান
জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১২:০২ এএম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের সফল বিদেশ সফর। দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করার জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার সাথে সফল সংলাপ শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার এই বিদেশ সফর বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী ও ফলপ্রসূ সফর। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণের জন্য গত সোমবার ২০ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ার লাইন্সযোগে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে রওয়ানা হন তিনি। এরপর মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে জুরিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারিক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টকে।
সুইজারল্যান্ডে পৌঁছানোর পর প্রথম দিন থেকেই দেশের জন্য ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কেবল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ এবং প্রায় অর্ধশতাধিক সফল মিটিং করেন তিনি। গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত (৪৭টি) আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সূত্র জানায়, প্রায় অর্ধশত বৈঠকের মধ্যে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ৪টি, মন্ত্রীপর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ৪টি, জাতিসংঘ বা এ জাতীয় সংস্থার প্রধান বা শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে ১০টি, সিইও বা উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের সঙ্গে ১০টি, ডব্লিউইএফ আয়োজিত অনুষ্ঠান ৯টি (যার মধ্যে আনুষ্ঠানিক রাতের খাবার ও মধ্যাহ্নভোজ ৪টি), গণমাধ্যমে অংশগ্রহণ ৮টি ও অন্যান্য ২টি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
বিভিন্ন বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া তথ্যে জানা যায়, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে ড. ইউনূস এসব বৈঠকে আলোচনা করেছেন। এছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া টাকা ফেরাতেও আলোচনা করেছেন তিনি।
গত ২১ জানুয়ারি দাভোসে পৌঁছানোর পর থেকে অধ্যাপক ইউনূস বার্ষিক সভায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার বিস্তৃত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন কাটান।
২১ জানুয়ারি তার সফরের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সঙ্গে বৈঠক করেন। অধ্যাপক ইউনূস পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি জোসে রামোস-হোর্তা, মিউনিখ সুরক্ষা সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হিউসজেন, থাই প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্যান্ডি এবং ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি তিনি প্রায় ১৪টি প্রোগ্রাম এবং পার্শ্ব ইভেন্টে যোগ দেন। প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান এবং বিশেষ কার্যনির্বাহী মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখা লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি, প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্কসহ অন্যদের সঙ্গে ডব্লিউইএফ-এ বৈঠক করেন।
অধ্যাপক ইউনূস শীর্ষ সম্মেলনের সময় ‘জলবায়ু ও প্রকৃতির অবস্থা’ শীর্ষক একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তব্য দেন এবং দাভোসের একটি হোটেলে সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য শোয়াব ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর তৃতীয় দিন ২৩ জানুয়ারি অধ্যাপক ইউনূস ১৪টি নির্ধারিত অনুষ্ঠান এবং অনেক পার্শ্ব কর্মসূচিতে যোগ দেন।
তিনি মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেডের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ, সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক গ্লোবাল লজিস্টিকস প্রোভাইডার ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম, অধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড, ডেনিশ শিপিং এবং লজিস্টিক কোম্পানি এপি মোলার-মারস্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মারস্ক উগলা এবং বিশ্বব্যাংকের অপারেশনস বিভাগের এমডি আনা বিজের্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ডব্লিউইএফ শীর্ষ সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব আয়োজিত একান্ত বৈঠকে যোগ দেন এবং বৈঠকের ফাঁকে দাভোসের ক্লাইমেট হাবে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃৃতা দেন।
গত শুক্রবার শেষ দিনে প্রধান উপদেষ্টা সাতটিরও বেশি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। শীর্ষ সম্মেলনের সময় আমেরিকান বিনিয়োগকারী রে ডালিও, মারিনো ম্যানেজমেন্ট এবং ডালিও ফ্যামিলি অফিসের প্রতিষ্ঠাতা, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া জেনেল গ্রুপের (রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কোম্পানি) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আমের আলীরেজা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।
এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের পর সবচেয়ে বড় চুক্তিটি হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে নন-বাইন্ডিং চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের। প্রতিষ্ঠানটি বছরে বাংলাদেশে ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরল গ্যাস সরবরাহ করবে। গত শুক্রবার আর্জেন্ট এলএনজি এ তথ্য জানায় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।