Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫,

স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতা

রমজানে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা

মহিউদ্দিন রাব্বানি

জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১২:০৮ এএম


রমজানে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা
  • দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তারপরও সরবরাহ স্বাভাবিক নয়
  • নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশিতে কিনছেন গ্রাহকরা

কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে সাধারণ ভোক্তারা —এসএম নাজের হোসাইন ভাইস প্রেসিডেন্ট, ক্যাব

কয়েক মাস ধরে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের জালে ভোক্তার নিত্যপ্রয়োজনীয় এই ভোজ্যতেল। নানা উদ্যোগেও বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংকট যেন কাটছে না কিছুতেই। সরকার থেকে দাম বাড়ালেও সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না। বিশেষ করে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পেতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে ক্রেতাদের। 

আসন্ন রোজাকে কেন্দ্র করে আরেক দফা তেলের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছেন ব্যবসায়ীরা। রোজা শুরুর চার মাস (নভেম্বর) আগ থেকেই ডিলারের কাছে পর্যাপ্ত সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এতে খুচরাপর্যায়েও কমেছে সরবরাহ। ফলে বাজার থেকে বোতলজাত তেল উধাও হয়ে গেছে। দুই-এক দোকানে মিললেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। তাই খোলা তেলের ওপর চাপ বাড়ায় দামও হু-হু করে বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা। 

সয়াবিন তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। দোকানিরা বলছেন, কোম্পানি প্রতিনিধিদের বারবার অর্ডার দিলেও চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি বর্তমানে পাইকারিপর্যায়ে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম কিছুটা কমেছে। তারপরও মিল থেকে তেলের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বর্তমানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি মূল্য ৮৫০-৮৫৫ টাকা। প্রায় দুই মাস আগে সরকার থেকে দাম বাড়লেও সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট চলমান। এখনও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক নয় বলেই দাবি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। যার কারণে আর খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি বাড়তি দামে ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। 

যাত্রাবাড়ীর একটি দোকানের মালিক বলেন, গত দুই-তিন মাস ধরেই ডিলাররা তেল সরবরাহ করছেন না। অর্ডার দিয়েও তেল পাচ্ছি না। অনেকেই তেল চাচ্ছেন দিতে পারছি না। এক দফা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তারপরও সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। রমজানকে ঘিরে আরেক দফা দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছেন বড় ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে বর্তমানে খোলা তেল ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি করছি।

অন্যদিকে হাতিরপুল বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলছেন, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট নেই। দাম বৃদ্ধির পর থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের স্বাভাবিক সরবরাহ রয়েছে। আমরা চাহিদা অনুসারেই সরবরাহ করতে পারছি। বরং গত সপ্তাহে ব্যারেলপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম এক হাজার টাকার বেশি কমেছে বলে জানি। তবে বোতলজাত তেলে সংকট দেখছি।

গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বেড়েছে। এর ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭-১৬০ টাকা হয়। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়েছে। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ৮৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।

সয়াবিন ও পামতেলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে দর বিবেচনায় নিয়ে পবিত্র রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে অব্যাহতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সয়াবিন ও পাম তেলের অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভোজ্যতেলের ওপর আমদানিপর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ব্যতীত অন্য শুল্ক-করাদি প্রত্যাহার করা হয়। গত অক্টোবরে এমন আদেশ জারি করেছিল এনবিআর। আর ১৬ ডিসেম্বর ক্যানোলা ও সানফ্লাওয়ার তেল আমদানিতে আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পাশাপাশি মূসক বা ভ্যাট হ্রাস করে প্রতিষ্ঠানটি। তারপরও ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক হয়নি বলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই দাবি করছেন।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, কতিপয় ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কবলে সাধারণ ভোক্তারা। তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছে। সংকটের কোনো কারণ নেই। আমরা বিগত দিনে দেখেছি দেশে ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি সয়াবিনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার পর সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় দাম বাড়ানোর। এবারও সেটিই করা হচ্ছে। রোজা ঘিরে তারা এমন কারসাজি করছে।

Link copied!