আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ১২:০১ এএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ১২:০১ এএম
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর থেকেই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ রয়েছে এ সরকারের ওপর। এরই মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। নির্বাচনি রোডম্যাপ, নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের তৎপরতা, নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ধীরে চলো নীতিসহ সার্বিক বিষয়ে আমার সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাবেক আহ্বায়ক, জাতীয় সংসদের চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের দুই-দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিবেদক আলমগীর হুসাইন
আমার সংবাদ : দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলটির উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ কী?
শামসুজ্জামান দুদু : দেশে যে ঘটনাটি ঘটেছে- এটি বিপ্লব নয়, এটি গণ-অভ্যুত্থান। বিপ্লব এবং গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিপ্লব যদি হয়, এক্ষেত্রে সবকিছুই নতুন করে শুরু হওয়া লাগবে। আর গণ-অভ্যুত্থান হলে সংবিধানের আওতায় সংবিধান মেনে একটা সরকার পরিচালিত হবে। সেখানে সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আগাতে হবে। বিএনপি সাংবিধানিক রাজনীতিতেই বিশ্বাস করে। যে কারণে নির্বাচনের কথা বলছে। নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই একটি নির্বাচিত সরকার গঠিত হয়। তাহলে যেসব ক্ষেত্রে যেমন- বাজারব্যবস্থা একেবারেই সিন্ডিকেটের আওতায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের আওতায়, এগুলো রোধ করা সম্ভব হবে। তেমনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পূর্বের সরকারের যারা ছিলেন শতভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন, সে জায়গাটা সংস্কার করতে হবে। এ সরকার গত ৬ মাসে আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন বা যে জায়গাগুলোতে কাজ করার দরকার ছিল, কোনো জায়গাতেই পুরোপুরি কাজ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এই পরিবর্তনের জন্যই আমরা মনে করছি নির্বাচিত সরকার দরকার। একটি যৌক্তিক অবস্থানে পৌঁছাতেই আমরা নির্বাচনের কথা বলছি।
আমার সংবাদ : ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, দেশ পরিচালনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বর্তমান সরকার কী ঠিক পথে আছে?
শামসুজ্জামান দুদু : নির্বাচন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই বর্তমান সরকারের মূল কাজ। এটাকে ত্বরান্বিত করার জন্যই কিছু সংস্কার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সব সংস্কার করেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়া কোনো অনির্বাচিত সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ এই সরকারের প্রতি জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই। একটা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীতেই তারা ক্ষমতায় এসেছেন।
আমার সংবাদ : ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি কী ওই অবস্থান থেকে সরে এসেছে?
শামসুজ্জামান দুদু : ওই অবস্থান থেকে এখনো সরে আসেনি বিএনপি। যখন নির্বাচনের তারিখ, মাস বা সময় ঘোষণা হবে, তখন যারা আন্দোলনকারী শক্তি ছিল তারা কোন প্রেক্ষিতে কোন মেরুকরণে কীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বা করতে চায় সেটি তখন একটা আলোচনার বিষয় হতে পারে। যদি স্ব-স্ব অবস্থান থেকে নির্বাচন হয়, সে জায়গাতেও বিএনপির সঙ্গে আরও যারা আন্দোলন করেছেন তাদের কতটা ছাড় দিবে বা তাদের সমন্বয়ের মধ্যে রেখে নির্বাচন দিবে সেটাও তখন সামনে আসবে। সে কারণে এখনো জাতীয় সরকার গঠনের ইস্যু থেকে বিএনপি সরে আসছে তা বলা যাবে না।
আমার সংবাদ : শোনা যাচ্ছে ছাত্ররা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দল গঠন করছে, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে বিএনপি?
শামসুজ্জামান দুদু : বিএনপি সবসময়ই মনে করে যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতেই পারে। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ও কৃষক তারা যদি কোনো দল গঠন করে, বিএনপি তাদের অভিনন্দন জানাবে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই।
আমার সংবাদ : দেশে ইতোমধ্যেই নতুন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
শামসুজ্জামান দুদু : দেশের নতুন প্রেক্ষাপট কিংবা নতুন অবস্থায় বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সংগঠিত হয়েছে বা আত্মপ্রকাশ করেছে। এর আগের পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলোরও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন ছিল। সমাবেশ করা, সংগঠন করা, মিছিল করা, এটা খুবই কঠিন ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলো অনেকটাই উন্মুক্ত। পুরাতন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি যদি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে, তাহলে এ নিয়েও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। কারণ, বিএনপি সবসময়ই শতমত, শতপথ- এটাতেই বিশ্বাস করে।
আমার সংবাদ : দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ চাচ্ছে বিএনপি, সরকারও এক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে বলে মনে করছেন অনেকেই, দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি কী আন্দোলনে যাবে?
শামসুজ্জামান দুদু : ইতোমধ্যেই আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজপথে যেমন ফ্যাসিবাদের মোকাবিলা করা হয়েছে, তেমনি রাজপথের মানুষকে সংগঠিত করে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরির জন্যও শিগগিরই আমরা আবারও আন্দোলনে যেতে পারি।
আমার সংবাদ : শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলেরই সমর্থন ছিল; কিন্তু সামনে ছিলেন ছাত্ররা, বিএনপির সঙ্গে সেসব ছাত্রনেতাদের কী দূরত্ব বাড়ছে?
শামসুজ্জামান দুদু : আজ থেকে ৬ মাস আগে আন্দোলনের যে পরিস্থিতি ছিল, তখনকার নেতারা, ছাত্রনেতৃত্ব বা তাদের যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের সবই তো এখনো ছাত্র, তাদের এখন ইনস্টিটিউশনে ফিরে যাওয়ার কথা। কারণ গণ-অভ্যুত্থান আগেও হয়েছিল। গণ-অভ্যুত্থান তৈরির ব্যাপারে আমাদেরও ভূমিকা ছিল। আমরাও ছাত্রনেতা ছিলাম। কিন্তু তারা যখন (ছাত্র অবস্থায়) সরকার পরিচালনার চেয়ারে বসতে চায় বা সংসদে বসতে চায়, তখনই বিতর্কগুলোর তৈরি হচ্ছে। সেই বিতর্ক তারা আবার সহজভাবে নিতে পারছে না। এখন আমার কাছে যেটা মনে হয়, তারা সরকারও গঠন করতে পারে, দেশও পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু সেটি অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের পরিণতিটা কী দাঁড়ায়— সেটা এখনই মন্তব্য করা যাবে না। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই। তাদের প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন’। আর আমাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সঙ্গে আরও ২৮টি ছাত্র সংগঠন রয়েছে। আর তাদের সঙ্গে ছাত্রশিবির আছে, এই দুটো একসঙ্গে, এখন দেখা যাক।
আমার সংবাদ : সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে দুই দল একমত হয়েছে, ভবিষ্যতে কী জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য দলের সঙ্গে একই কৌশল অবলম্বন করবে?
শামসুজ্জামান দুদু : এখন সব দলের সঙ্গেই আমাদের আলোচনা হবে। জামায়াত একসময় আমাদের সঙ্গে চার দলে ছিল, ২০ দলেও ছিল। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের যে বিরোধিতার প্রসঙ্গ তুলে বিভিন্ন মিডিয়াতে আসছে, এটা রাজনৈতিক কর্মসূচি, রাজনৈতিক সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি- এসব বিষয় থাকতেই পারে। জামায়াতে ইসলামীও একটি পুরোনো সংগঠন, বিএনপি আরেকটি আলাদা সংগঠন। অন্যান্য সংগঠন যেমন, ইসলামী আন্দোলন তারাও একটি সংগঠন। সে কারণে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের প্রশ্নে সব দলের সঙ্গেই আলোচনা হতে পারে এবং ঐকমত্য সৃষ্টির চেষ্টা থাকতেই পারে।
আমার সংবাদ : ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলো সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি প্রয়োগ করে শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করেছে, এখন নিজেদের মধ্যে বিরোধ কী তৃতীয় কোনো শক্তিকে উৎসাহিত করবে?
শামসুজ্জামান দুদু : কোনো বিরোধ নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী যেসব শক্তি ছিল, আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত কোনো বিরোধ হওয়ারও সুযোগ নেই।
আমার সংবাদ : আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দিয়েছে, তাদের এই কর্মসূচির ঘোষণাকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?
শামসুজ্জামান দুদু : তাদের অফিস পরিত্যক্ত, এটি এখন প্রশ্রাবখানা। তাদের বাসায়ও কেয়ারটেকার থেকে শুরু করে কেউই থাকে না। তারা নিজেরাও কোথায় ছায়ায় মিলে গেছে। তাদের নেতাকর্মীদেরও কেউ এখন আর দাবি করে না যে, তারা আওয়ামী লীগ করে। তাছাড়া যে দলের প্রধানের পরিবারের প্রতিটিই সদস্যই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত; সে সংগঠন নিয়ে যত কম মন্তব্য করা যায়, ততই ভালো।
আমার সংবাদ : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শামসুজ্জামান দুদু : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।