মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ১২:০৭ এএম
মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ১২:০৭ এএম
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিত্যসঙ্গী। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতি বছর দায়িত্ব পালন করে। বর্ষা মৌসুমে আসলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। তখন একে অপরকে দোষ চাপিয়ে দায় সারে এই দুই সেবা প্রতিষ্ঠান। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে বন্দরের কোনো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর নদীর নাব্য ধরে রাখার জন্য খাল খনন করছে। এভাবে মোট ৮টি খাল খনন করেছে, যা প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে খালের মুখ খনন করছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, চাক্তাই ও রাজাখালি খাল হচ্ছে প্রধান খাল। বর্তমান খাল খনন চলমান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইডোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজ আমার সংবাদকে বলেন, ২৯৫ কোটি টাকার বাজেটে ক্যাপিটেল ড্রেজিং প্রকল্পে ২০১৭ সাল থেকে চলমান। নদীর নাব্যতা ধরে রাখার জন্য খনন চলমান প্রক্রিয়া। ৪ কিমি এলাকাজুড়ে খনন কাজ চলবে। এই অবস্থায় খনন প্রয়োজন হলে খনন করা হয়। নির্দিষ্ট কত মিটার খনন করা হয়েছে প্রশ্নে বলেন, যখন যেখানে খনন দরকার সেখানে খনন করা হয়। ৭ মিটার পলিথিন স্থর নিরসন করা হয়েছে এই খননের মাধ্যমে।
জানা গেছে, খননের মাধ্যমে কর্ণফুলীর তলদেশ গভীর করতে ২০১১ সালে ‘ক্যাপিটেল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রোটেকশন’ নামে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও আইনি জটিলতায় আটকে যায়। সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং নামে প্রকল্প নেওয়া হয়।
এদিকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামে ৮ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা প্রকল্পে বিপুল দুর্নীতি-অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে অন্তত ২১টি খাল ময়লার পাহাড়ে ঢাকা পড়েছে। বাকি ৩৬টি খালে জলাবদ্ধতা চললেও এসব খাল রয়ে গেছে প্রকল্পের বাইরে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর নাব্য ফেরাতে ‘ক্যাপিটেল ড্রেজিং’ প্রকল্পে চলমান খনন কাজ কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে নগরবাসী।
কর্ণফুলী নদীর নাব্য বাড়াতে ২০১১ সালে ‘ক্যাপিটেল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রোটেকশন’ নামে ২২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে গেলে বন্দর তাদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করে। পরে ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে প্রায় পাঁচ বছর কর্ণফুলীতে খননকাজ বন্ধ থাকে। এর মধ্যে প্রচুর পলি জমে নদীর বিভিন্ন অংশে জেগে উঠেছে চর। পরে বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে নতুন এই প্রকল্প নেওয়া হয়।
অপরদিকে হারিয়ে যাওয়া ২১টি খাল নতুন করে উদ্ধারে নেমেছে কর্পোরেশন। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পাওয়া গেছে মাত্র ১০ কোটি টাকা।চসিক মেয়র অভিযোগ করেন, বহদ্দারহাটে বাড়ই পাড়া খাল খননের সময় জমি অধিগ্রহণে স্বজনপ্রীতি হয়েছে, এতে খালের গতিপথ পাল্টে গেছে।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘কারো কারো জমি রক্ষার জন্য আঁকাবাঁকা করে ফেলেছে। কাজেই এই যে একটা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি এমন চিন্তা-ভাবনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
সিডিএ বলছে, জলাবদ্ধতার জন্য প্রধান দায়ী সিটি কর্পোরেশন। তারা আবর্জনা পরিষ্কার, খাল খননে ব্যর্থ হয়ে দোষ চাপাচ্ছে। এজন্য তাদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘নালা ড্রেনের কাজ আমাদের না এটা মূলত সিটি করপোরেশনের কাজ। আমরা ৩৬টা খাল নিয়ে করছি। আপনি যদি একটা খালও করতে না পারেন। একটাই যদি ১০-১৫ বছর ফেলে রাখেন তাহলে বাকি ২১ টা খাল কীভাবে করবেন। আমি মনে করি এটা যোগ্যতা ও অদক্ষতার প্রশ্ন। যোগ্যতা ছিল না বলে তারা এই কাজটি বিলম্ব করেছে।’
প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজ মনিটরিংয়ে সম্প্রতি চার উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তারই অংশ হিসাবে এরই মধ্যে চার উপদেষ্টা খাল পরিদর্শন ও মনিটরিং শুরু করেছেন।