Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

ইতিহাস-ঐতিহ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মনির হোসেন

মনির হোসেন

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ১২:২৯ এএম


ইতিহাস-ঐতিহ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮৬৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রজোসুন্দর বসুর ব্রাহ্ম স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এর পূর্বনাম জগন্নাথ কলেজ। এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময়জুড়ে পরিচিত ছিল। 

১৮৫৮ সালে দীননাথ সেন, প্রভাতীচরণ রায়, অনাথবন্ধু মল্লিক এবং ব্রজসুন্দর কৈত্র ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুলটির নামকরণ করেন।

স্কুলটি আর্থিক সংকটের কারণে চালু রাখতে ১৮৬৮ সালে মানিকগঞ্জের বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর কাছে এর পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। ভারতীয় আইন পরিষদ জগন্নাথ কলেজ আইন (১৯২০)-এর মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে আইন পাস করান। ১৯৬৮ সালের ১ আগস্ট সরকারি আদেশে প্রাদেশিককরণের নামে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি কলেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭৫ সালে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু করে এবং ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫’ পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদিত হয়। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি অনুষদ, দুটি ইনস্টিটিউট এবং ৩৮টি বিভাগ রয়েছে।

১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গ্রন্থাগারের বই-পুস্তক, জার্নাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। পুরান ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এ কলেজে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় কো-এডুকেশন চালু করেন। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারিকরণ করা হয়, কিন্তু পরের বছরই আবার এটি বেসরকারি মর্যাদা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জগন্নাথ কলেজে পাকিস্তানি সেনারা হামলা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গণহত্যা চালানো হয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শহীদ হন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য, একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাসের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে সাতটি অনুষদের অধীনে ৩৮টি বিভাগের ও দুটি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বর্তমানে ২০৭ একর। সাড়ে সাত একরে বর্তমান শতবর্ষ পুরাতন ক্যাম্পাস এবং ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় এর নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাস, যার আয়তন গেজেটভুক্ত ২০০ একর, এটি দ্রুতই কার্যকর হতে যাচ্ছে।

Link copied!