নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম
দফায় দফায় বৈঠক করলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর সুখবর পাচ্ছেন না উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করছেন।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সরকার যদি শুল্ক-ভ্যাট না কমায় তবে তারা শিগগির প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন। যদিও তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে চান না। এ অবস্থায় সরকার শুল্ক-ভ্যাট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বাড়তি মূসক ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দফায় গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতারা। এর আগে একই দাবিতে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রথম বৈঠকে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর আশ্বাস পাওয়ার দাবি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
তবে আজ দ্বিতীয় বৈঠকের পর ব্যবসায়ীরা শোনালেন হতাশার কথা। শুল্ক ও ভ্যাট না কমালে শিগগির প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন তারা। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, এনবিআর সদস্য ড. মো. আবদুর রউফ (মূসক নীতি) ও দ্বিতীয় সচিব (মূসক) মো. বদরুজ্জামান মুন্সী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমার মনে হয় রেগুলেটরদের ভালো করে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। ফুড আইটেমের ওপর অবশ্যই ভ্যাট ও সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি বাড়ানো যৌক্তিক নয়। এনবিআর চেয়ারম্যানকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেছি। আমরা লসের সম্মুখীন হয়েও পুরনো দামে পণ্যসামগ্রী রেখেছি। যদিও ভ্যাটের বোঝা বেড়েছে। বেশি রেটে ভ্যাট দিতে হচ্ছে।
আপনাকে হতাশ দেখাচ্ছে, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আহসান খান চৌধুরী বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। উনারা (এনবিআর) আমাদের কাছ থেকে সময় নিচ্ছেন। উনারা বাজেটের কথা বলছেন। আমরা কাজ করে যাবো, হয়তো আমাদের আরও বেশি সহ্যশীল হতে হবে। সহনীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ‘ভোক্তার জন্য পণ্যের দাম যখন বাড়াতে হয় অবশ্যই মনে দুঃখ লাগে। খারাপ লাগে’- যোগ করেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে প্রক্রিয়াজাত পণ্যের চাহিদাও কমে যাবে। আমরা স্বল্পমূল্যে ভোক্তার কাছে পণ্য উপস্থাপন করতে চাই।
দাবি না মানলে ব্যবসায়ীরা কী করবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসূচি দেয়া বা আন্দোলন করা আমাদের সাজে না। বারবার আমাদের কষ্টের কথা মানুষের সামনে উপস্থাপন করব। ব্যবসায় যদি মুনাফা থাকে তাহলে ব্যবসায়িক কর্মকাল পরিচালনা করব। মুনাফা যদি কম হয়, বাংলাদেশে অন্য ব্যবসা আছে, আমরা সেসব ব্যবসার দিকে ধাবিত হবো।
এ সময় বাপার সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, ফিনিশড প্রোডাক্টের ওপর যখন ট্যাক্স বাড়বে অটোমেটিকেলি দাম বাড়বে। দাম বাড়লে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের সেল কমে যায়, আমরা ট্যাক্স কম দিতে বাধ্য হই। শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হই। পুরো অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব পড়ে। পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি এনবিআর চেয়ারম্যানকে বুঝিয়েছি। আশা করি, আমরা উনার কাছ থেকে ভালো একটা সমাধান পাব।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে যদি এর সমাধান না হয়, তাহলে আমরা আমাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবো। আর কতদিন লস দেব? বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুইয়া বলেন, আমরা এনবিআরকে বারবার বিরক্ত করার চেষ্টা করছি। চেয়ারম্যানকে (এনবিআর) বললাম, আপনার কাছ থেকে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। কিন্তু কার্যকারিতা বাস্তবে দেখতে না পেরে আমরা আপনাকে আবার বিরক্ত করতে এসেছি। একটা কথা আছে, না কাঁদলে মায়েও বাচ্চাকে দুধ দেয় না।
ভ্যাটের চাপে টমেটো ফের ‘আশীর্বাদ’ থেকে ‘অভিশাপ’
তিনি বলেন, এমন কর্মসূচি ছিল; তিনি (এনবিআর) যদি আশাব্যঞ্জক কথাগুলো না বলতেন আগামী সোমবার অবস্থান ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এটা আমরা প্রচারও করেছি। ভ্যাটের মেম্বার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা তিন-চারটা দিন চুপচাপ থাকেন। আমাদের কাজ করতে দেন। আমরা রেজাল্ট দেব। ‘বিস্কুটের প্যাকট আর কত ছোট করব। আমরা অন্য অ্যাকশনে যেতে পারি। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাই না। বিস্কুটের প্যাকেট যতটুকু ছোট আছে, আর ছোট করতে চাই না। প্রাইজ এডজাস্ট না হলে, বাধ্য হয়ে এটি করতে হয়। আমরা চাই ভোক্তার যা প্রাপ্য সেটাই যেন তারা পায়’- যোগ করেন তিনি।
ভ্যাটের জাল বাড়াতে বাপা সদস্যদের সচেতন করবে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, যারা ভ্যাট দিচ্ছে তাদের ওপর বেশি চাপাচাপি। যারা ভ্যাট দিচ্ছে না তাদের কাছে তারা (এনবিআর) কেন যায় না। যায় না, বিষয়টি ঠিক এরকমও না। তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে কোনো কিছু একটা করে। এনবিআর চেয়ারম্যানকে কথা দিয়েছি, অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে তাদের নেটে ঢুকাব। এর জন্য ইআরপির ব্যবস্থা করবো। তাহলে নেট বাড়বে।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আকিজ ভেঞ্চারের চেয়ারম্যান শেখ শামিম উদ্দিন ও এসএমসি এন্টারপ্রাইজের এমডি সাইফ নাসির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।